দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চাইলে বিনিয়োগের কোনও বিকল্প নেই। যে কোনও আর্থিক উপদেষ্টাকে জিজ্ঞেস করলে এই উত্তরটাই পাবেন সবাই। গাড়ি বা বাড়ি কেনা দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনার মধ্যে পড়ে। বিনিয়োগই সেই উপায় যা লক্ষ্যে পৌঁছতে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে। মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলা করার জন্যও বিনিয়োগ প্রয়োজন। জিনিসপত্রের সাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকৃত অর্থও বাড়বে।
advertisement
আরও পড়ুন: PAN কার্ড চান! আজই অনলাইনে আবেদন করুন এই ভাবে!
মিউচুয়াল ফান্ড: বিভিন্ন বিনিয়োগ বিকল্পের মধ্যে থেকে একটা বেছে নিতে বললে সবার প্রথমেই আসে মিউচুয়াল ফান্ডের নাম। কারণ এতে সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া যায়। তাই দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড তুলনাহীন। এর মাধ্যমে একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যায়। যেমন স্টক, ইক্যুইটি, মানি মার্কেট ইত্যাদি। মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করার সময় বিনিয়োগকারীর কাছে দুটি বিকল্প থাকে –
ইক্যুইটি – সিকিউরিটিজের মতো বিনিয়োগে টাকা ঢালতে চাইলে ইক্যুইটি সেরাদের মধ্যে সেরা। অন ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন ইক্যুইটিতে সর্বোচ্চ। সুদের হারও বেশি। তবে মাথায় রাখতে হবে ইক্যুইটিতে লাভ পেতে চাইলে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। এবং ঝুঁকিও বেশি।
আরও পড়ুন: বেড়েই চলেছে সুদের হার! ঋণের আবেদন করার আগে মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি!
ডেবট - ইক্যুইটির আরওআই পরিবর্তিত হতে পারে। মূলধন হারানোর পাশাপাশি ঋণ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ডেবটে বিনিয়োগকারী রিটার্ন সম্পর্কে আশ্বস্ত থাকতে পারেন। কর্পোরেট বন্ড এবং সরকারি বন্ডের মতো ডেবটে বিনিয়োগ করা যায়। এই দুটি সিকিউরিটিজেই নিরাপদ রিটার্ন দেয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্যপূরণ সহজ হয়।
ন্যাশনাল পেনশন স্কিম: আজকাল বেশিরভাগ সংস্থাতেই পেনশন তুলে দেওয়া নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। কারণ কর্মীদের পেনশন দিতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা ‘বেকার’ খরচ হচ্ছে। কিন্তু মানুষের ভবিষ্যৎও তো নিরাপদ করতে হবে। এই জন্যই সরকার এনপিএস চালু করেছে। এটাকে সর্বকালের সেরা পেনশন প্রকল্প বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফিক্সড ডিপোজিট: ফিক্সড ডিপোজিট সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনিয়োগ বিকল্প। এর সঙ্গে বাজারের ওঠানামার কোনও সম্পর্ক নেই। তাই বিনিয়োগকারীর টাকা থাকে নিরাপদ। অন্য দিকে, নির্দিষ্ট হারে সুদও মেলে। ফলে মেয়াদ শেষে পাওয়া যায় কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন। সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্ক কিংবা পোস্ট অফিসে ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। ফিক্সড শব্দটি থেকে বোঝা যায় অন্যান্য বিনিয়োগ বিকল্পে সুদের হার পরিবর্তিত হলেও এতে একই থাকে।
গোল্ড ইটিএফ: পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র আনতে চাইলে একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে সোনায়। গোল্ড ইটিএফ সেরকমই বিনিয়োগ মাধ্যম। এটা কেনা এবং বিক্রি করাও সহজ। ঝুঁকি নেই বললেই চলে। ফলে বিনিয়োগকারীরা উচ্চ হারে রিটার্ন পান। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে সহজে লোনও পাওয়া যায়।
ইক্যুইটি: যে কোনও বিনিয়োগ বিকল্প বেছে নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হল আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করা। প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের আর্থিক লক্ষ্য থাকে। তাই ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করার আগে মাথায় রাখতে হবে, এটা দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্যই কার্যকর। পাশাপাশি সঠিক স্টক নির্বাচন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে লাভ তো হবেই না উল্টে পুরো টাকা জলে যেতে পারে।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড: আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের কোনও বিকল্প নেই। এটা সেরা বিনিয়োগ বিকল্প। আর্থিক চাহিদা তো পূরণ হয়ই, ট্যাক্স ছাড়ও মেলে। বার্ষিক আয় অনুযায়ী আয়কর দিতে হয়। কিন্তু অনেকের কাছেই এটা ‘বাড়তি খরচ’। তাঁদের জন্য পিপিএফ একেবারে আদর্শ। একই সময় ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ও হয়।
রিয়েল এস্টেট: ভারতে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা ক্রমশ বাড়ছে। এতে টাকা খাটিয়ে দ্বিগুণ এমনকী তিনগুণ আয় করা যায়। রিয়েল এস্টেটের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত তহবিল বিভিন্ন খাতে বিভক্ত করা হয়। তার মধ্যে কয়েকটি হল, খুচরো ব্যবসা, ভবন, উৎপাদন, শিল্প, হাসপাতাল ইত্যাদি। তবে এখানে টাকা খাটিয়ে আয় করতে চাইলে ধৈর্য প্রয়োজন। আর কয়েক বছরের মধ্যে বেশি রিটার্ন আশা করলে জমি বা সম্পত্তি কেনাই ভাল।