তবু কেন্দ্রীয় সরকার আশ্বাস দিয়ে চলেছে ভারতে মন্দার পরিস্থিতি হয়তো তৈরিই হবে না। সে দিকে ইঙ্গিত করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও। তবে একটা নেতিবাচক প্রভাব যে পড়তে চলেছে আগামী কয়েক মাসে সে বিষয়েও তাঁরা এক প্রকার নিশ্চিত।
আরও পড়ুন: শেয়ার বাজারে ঠিক কতটা ঝুঁকি নিতে পারবেন? বুঝে নিন সব হিসেব নিকেশ
advertisement
নীতি আয়োগের প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান রাজীব কুমার মনে করছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত ৬ থেকে ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চিয়তার প্রভাব ভারতেও পড়বে সে বিষয়েও তিনি নিশ্চিত।
রাজীব কুমার জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান এবং চিনে একটি সুসংগত মন্দা রয়েছে। তার ফলেই আগামী মাসগুলিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা সৃষ্টি হতে পারে।
পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, ভারতে মন্দার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। যদিও আমাদের প্রবৃদ্ধি বৈশ্বিক অবস্থার দ্বারা নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত হতে পারে। তবে আমরা এখনও ২০২৩-২৪ সালে ৬ থেকে ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পরিচালনা করতে পারি।’
আরও পড়ুন: Petrol Diesel Price: অনেক শহরেই বাড়ল পেট্রোল-ডিজেলের দাম! কোথায় কত হল? জানুন...
গত ৬ অক্টোবর বিশ্বব্যাঙ্ক ২০২২-২৩ সালে ভারতীয় অর্থনীতির জন্য ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধির হার অনুমান করেছে। যদিও এর আগে জুন মাসে বিশ্বব্যাঙ্ক আরও দশমিক এক শতাংশ বেশি বৃদ্ধির কথা বলেছিল ভারতের ক্ষেত্রে।
যদিও আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি আপেক্ষিক ভবিষ্যদ্বাণীর ধরাছোঁয়ার বাইরে ক্রমশ বৃহত্তর অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে।
উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে রাজীব কুমার জানান, খুচরা মুদ্রাস্ফীতি সম্ভবত আরও কিছু সময়ের জন্য ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে থাকবে। তিনি মনে করেন, প্রথমে এটি আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে, তারপর ক্রমশ নেমে আসবে।
কুমার বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী তেলের দামের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত অব্যহত থাকায় তেলের দাম বাড়তে পারে। না হলে দেশীয় মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম পরানো সম্ভব।’
মুদ্রাস্ফীতি যে খানিকটা বাগে আসতে পারে, তার ইঙ্গিতও মিলেছে বলে দাবি। খুচরা মূল্যবৃদ্ধি অক্টোবরে ৬.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময় পাইকারি মূল্য সূচক ১৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। এর কারণ মূলত খাদ্যদ্রব্যের নিম্নহার।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তরফে মুদ্রাস্ফাতীর হার সর্বোচ্চ ৪ থেকে সর্বনিম্ন ২ শতাংশের মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে। ডলারের তুলনায় ভারতীয় টাকার দামের পতন বিষয়ে নীতি আয়োগের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভারতের সাধারণ মানুষ প্রচুর পরিমাণ আমদানিকৃত ভোগ্য পণ্য বা পরিষেবা ব্যবহার করেন না। ফলে সাধারণ জনজীবনে এর প্রভাব অন্য ভাবে পড়তে পারে।’
গত শুক্রবার মার্কিন ডলারের তুলনায় ৬ পয়সা কমে রুপির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮১.৭৪ এ।
ভারতের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে কুমার বলেন, অক্টোবরে রফতানিতে নেতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। পণ্য এবং পরিষেবা রফতানি কী ভাবে সম্প্রসারিত করা যায় সে বিষয়ে বাস্তব নীতিতে জোর দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন রাষ্ট্র-নির্দিষ্ট রফতানি উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করতে হবে। কারণ সারা দেশের জন্য একক রফতানি উন্নয়ন নীতি লাভজনক নয়।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পাঞ্জাবের মতো একটি দ্বৈত স্থলবেষ্টিত রাজ্যের সঙ্গে এবং তামিলনাড়ুর মতো একটি উপকূলীয় রাজ্য, যার প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি বাণিজ্যিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের এক করে দেখলে চলবে না। উভয় রাজ্যের একই নীতি থাকা প্রাসঙ্গিক নয়।’
কিছু রাজ্য পুরনো পেনশন স্কিম (ওপিএস)-এ ফিরে যাওয়ার বিষয়েও কুমার বলেন, ‘এটি অবশ্যই পশ্চাদ অপসরণ। আমি মনে করি না, এমন হওয়া উচিত।’
তিনি দাবি করেন, ‘আমি মনে করি ভারতীয় অর্থনীতি, ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণি, ভারতীয় মধ্যবিত্তরা পরিপক্ক হয়ে উঠছেন। তাঁরা তাঁদের নিজস্ব পেনশন তহবিল পরিচালনা করতে পারেন এবং নতুন পেনশন প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন, যা পুরনো পেনশন প্রকল্পের চেয়ে অনেক বেশি ভাল।’
গত শুক্রবারই পাঞ্জাব মন্ত্রিসভা পুরনো পেনশন প্রকল্প ফের প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে, যা ২০০৪ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।