অবশ্য গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে করোনা ও তার জেরে লকডাউনের জন্য এই জরিমানায় ছাড় ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। অবশ্য সেটা শুধুই পোস্ট অফিসে। ডাক বিভাগের তরফে বলা হয়েছিল, যদি ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ এবং ২০২০ সালের এপ্রিলের কোনও কিস্তির টাকা বাকি থাকে, তা হলে রেকারিং ডিপোজিট বা এসএসএ বা পিপিএফ অ্যাকাউন্ট গ্রাহকরা ৩০ জুন পর্যন্ত সেই টাকা জমা দিতে পারবেন। সে জন্য কোনও জরিমানা লাগবে না। তবে এখন করোনার প্রকোপ কিছুটা কমেছে। লকডাউনও প্রায় উঠে গিয়েছে। ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করছে স্কুল-কলেজের দরজাও। ফলে এই সুবিধা এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। এখন কিস্তির টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না-দেওয়া হলে আগের নিয়মেই জরিমানা দিতে হবে।
advertisement
আরও পড়ন : Post Office RD: পোস্ট অফিসের এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেই ব্যাপক লাভ, ভবিষ্যত গড়তে তুমুল সাহায্য করে
এখন দেখে নেওয়া যাক, এই জরিমানা নেওয়া হয় কী ভাবে? রেকারিং ডিপোজিটের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তির টাকা জমা দিতে হয়। এখন কোনও মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, তা হলে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত টাকা জমা দেওয়া যায়। আর যদি কোনও মাসের ১৬ তারিখ থেকে সেই মাসের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, তবে পরবর্তী মাসের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত টাকা দেওয়ার সুবিধা মেলে। এখন ধরা যাক, কোনও অসুবিধার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কিস্তির টাকা জমা দিতে পারলেন না গ্রাহক।
Post Office Recurring
সে ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী, ওই গ্রাহকের থেকে প্রতি ১০০ টাকায় ১ টাকা জরিমানা ধার্য্য করা হবে। অর্থাৎ যদি কিস্তির পরিমাণ ১০০০ টাকা হয়, তা হলে জরিমানার পরিমাণ হবে ১০ টাকা। স্বাভাবিক নিয়মে কিস্তির টাকার পরিমাণ বেশি হলে জরিমানার অঙ্কও বাড়বে। পরের মাসে কিস্তির টাকা দেওয়ার আগে গ্রাহককে জরিমানা মেটাতে হবে। তার পর জমা দিতে হবে কিস্তির টাকা।
এ বার ধরা যাক, কোনও গ্রাহক পর-পর ৪ মাস কিস্তির টাকা জমা দিতে পারলেন না। সে ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁর অ্যাকাউন্টটাই বন্ধ হয়ে যাবে। অবশ্য চিন্তার কিছু নেই। পরবর্তী ২ মাসের মধ্যে ফের সেই অ্যাকাউন্টকে সচল করার সুযোগ থাকবে। কিন্তু তার জন্য বকেয়া কিস্তি এবং জরিমানার টাকা-- দুটোই একসঙ্গে মেটাতে হবে। সেটা কেমন? ধরা যাক, রামবাবু ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কিস্তির টাকা জমা করতে পারেননি।
আমরা আগেই জানি, ১০০ টাকায় ১ টাকা জরিমানা। এখন যদি রামবাবুর মাসিক কিস্তির পরিমাণ ১০০০ টাকা করে হয়, তা হলে ৪ মাসে বকেয়া দাঁড়াচ্ছে চার হাজার টাকা। একই সঙ্গে ১০০০ টাকায় জরিমানা যেহেতু ১০ টাকা হচ্ছে, তা হলে চার হাজার টাকায় জরিমানা হচ্ছে ৪০ টাকা। অর্থাৎ অ্যাকাউন্টকে পুনরায় সচল করতে হলে রামবাবুকে জুন মাসের মধ্যে চার হাজার চল্লিশ টাকা জমা করতে হবে।
তবে আর একটা ব্যাপার আছে। রেকারিং ডিপোজিটে নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তির টাকা দিতে না-পারলে যেমন জরিমানা হয়, তেমনই যদি গ্রাহক কিস্তির টাকা অগ্রিম দেন, তা হলে তাঁকে ছাড়ও দেওয়া হয়। গ্রাহককে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার জন্যই এই ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন দেখে নেওয়া যাক, কী ভাবে গ্রাহক এই ছাড়ের সুবিধা পেতে পারেন। নিয়ম অনুযায়ী, ১০ টাকায় ১ টাকা ছাড় দেওয়া হয়। অর্থাৎ ১০০০ টাকায় ছাড় মিলবে ১০০ টাকা। এখন ধরা যাক, রামবাবু পুজোর বোনাস হিসেবে মোটা টাকা পেয়েছেন। আমরা জানি, তাঁর মাসিক কিস্তি ১০০০ টাকা করে। তিনি চান আগামী ১০ টা কিস্তির টাকা মিটিয়ে দিতে।
তাহলে তাঁকে দিতে হবে দশ হাজার টাকা। এখন ১০০০ টাকায় যদি ১০০ টাকা ছাড় মেলে তাহলে দশ হাজার টাকায় পুরো এক হাজার টাকা ছাড় পাবেন রামবাবু। এই টাকা তিনি অন্য কাজে লাগাতে পারেন। আবার অন্য ভাবে দেখলে, অগ্রিম টাকা দেওয়ার ফলে যে ছাড় রামবাবু পেলেন, তাতে তাঁর এক মাসের কিস্তির টাকাও উঠে এল। ফলে রেকারিং ডিপোজিটে কিস্তির টাকা দিতে না-পারলে যেমন জরিমানা দিতে হয়, তেমনই অগ্রিম দিতে পারলে ছাড়ের সুবিধাও মেলে।