বেতনে গ্র্যাচুইটি কী: সোজা কথায় গ্র্যাচুইটি হল এককালীন টাকা যা নিয়োগকর্তা কোনও কর্মীকে তাঁর সংস্থায় পরিষেবা দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে দেন। এটি একজন কর্মচারী যে বেতন পান তার একটি অংশ এবং কর্মীকে তার অবসর গ্রহণে সহায়তা করার জন্য ডিজাইন করা একটি সুবিধা পরিকল্পনা হিসাবে দেখা যেতে পারে। একজন কর্মী যখন একই প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ৫ বছর কাজ করার পর চাকরি ছেড়ে দেন তখন গ্র্যাচুইটি প্রদান করা হয়।
advertisement
আরও পড়ুন: এই মাসেই মিলবে পিএম কিষাণ যোজনার ১৩তম কিস্তির টাকা, অনলাইনে স্টেটাস দেখে নিন এভাবে!
গ্র্যাচুইটি পাওয়ার যোগ্যতা: গ্র্যাচুইটি পাওয়ার যোগ্য কি না তার কয়েকটি মাপকাঠি রয়েছে। সেগুলি হল – ক) একজন কর্মচারীকে চাকরির মেয়াদের জন্য যোগ্য হতে হবে। খ) অবসর নেওয়ার সময় দেওয়া হয়। গ) কর্মীকে একই প্রতিষ্ঠানে একটানা ৫ বছর বা তার বেশি কাজ করতে হবে। ঘ) অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কারণে একজন কর্মচারী মারা যান বা অক্ষমতার শিকার হন।
গ্র্যাচুইটি গণনার ফর্মুলা: গ্র্যাচুইটির পরিমাণ গণনা করার একটি ফর্মুলা আছে। সেটা কর্মী কোম্পানিতে কত বছর কাজ করেছেন এবং শেষ পাওয়া বেতনের উপর নির্ভর করে। ফর্মুলাটা হল, গ্রাচুইটি = এন*বি*১৫/২৬।
আরও পড়ুন: Gold Price Today: বছরের তৃতীয় দিনের জোর ধাক্কা! গতকালের থেকে ১২ হাজার টাকা সোনার দামে পার্থক্য
কীভাবে গ্র্যাচুইটি গণনা করা হয়: ধরা যাক অমিত নামের একজন কর্মী কোনও কোম্পানিতে টানা ২০ বছর ধরে কাজ করছেন। এবং তাঁর শেষ বেসিক এবং ডিএ-এর পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার টাকা। তাহলে অমিতের গ্র্যাচুইটির পরিমাণ ২০*২৫,০০০*১৫/২৬ = ২,৮৮,৪৬১.৫৪ টাকা। যাই হোক, একজন নিয়োগকর্তা কোনও কর্মীকে আরও গ্র্যাচুইটি প্রদান করতে পারেন। এছাড়াও, কর্মজীবনের শেষ বছরের মাসের সংখ্যা হিসেব করতে, ৬ মাসের বেশি হলে পরবর্তী সংখ্যায় রাউন্ড অফ করা হয় এবং চাকরির শেষ বছরে ৬ মাসের কম হলে আগের নিম্ন সংখ্যায় রাউন্ড অফ করা হয়।
গ্র্যাচুইটি আইনের আওতায় নেই এমন কর্মচারীদের জন্য গ্র্যাচুইটির গণনা: কোনও সংস্থা আইনের অংশ না হলেও তারা গ্র্যাচুইটি দিতে পারে। যাই হোক, এক্ষেত্রে গ্র্যাচুইটি গণনা করা হয় একজন ব্যক্তির অর্ধ মাসের বেতনের উপর ভিত্তি করে যা প্রতি বছর সম্পন্ন হয়েছে। বেতনের মধ্যে কমিশন (বিক্রয়-ভিত্তিক), মহার্ঘ ভাতা এবং মূল বেতন অন্তর্ভুক্ত। গ্রাচুইটি আইনের আওতায় নেই এমন কর্মচারীদের জন্য গ্রাচুইটি পরিমাণ গণনার জন্য এই সূত্রটি বিবেচনা করা হয়: গ্র্যাচুইটির পরিমাণ = (১৫ * শেষ টানা বেতনের পরিমাণ * পরিষেবার সময়কাল) / ৩০।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কেউ একটি কোম্পানিতে ১০ বছর ৮ মাস কাজ করেন এবং বেতন হয় ৫০ হাজার টাকা তাহলে গ্র্যাচুইটির পরিমাণের হিসাব দাঁড়াবে - গ্র্যাচুইটির পরিমাণ: (১৫ * ৫০,০০০ * ১১) / ৩০ = ২.৭৫ লক্ষ টাকা।
গণনার সময় একজন কর্মীর মেয়াদ এক বছর ধরা হয়। যদি সাম্প্রতিক বছরে কাজ করা মাসের সংখ্যা ছয় মাসের কম হয় তাহলে সম্পূর্ণ বছরের আগের সংখ্যা বিবেচনা করা হয়। গণনার সময় বছরটিকে পূর্ণ বছর হিসাবে গণ্য করা হয় যদি পরিষেবার সাম্প্রতিক বছরে সম্পূর্ণ হওয়া মাসের সংখ্যা ছয় মাসের বেশি হয়। তাই ১১ বছর কার্যকাল নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি কাজের সময়কাল ১০ বছর এবং ৪ মাস (বা ৬ মাসের কম কিছু) হত তবেই পরিষেবার বছরের সংখ্যা ১০ বছর ধরা হত৷
সরকারের পেনশনার পোর্টালে নথিভুক্ত নিয়ম অনুসারে, অবসর গ্রহণের সময় গ্র্যাচুইটির পরিমাণ যেভাবে গণনা করা হয়: গ্র্যাচুইটির পরিমাণ প্রতি ছয় মাসের মেয়াদের জন্য একজন কর্মচারীর শেষ অঙ্কিত মূল বেতনের এক-চতুর্থাংশের সমান। অবসরকালীন গ্র্যাচুইটির পরিমাণ প্রদেয় মূল বেতনের ১৬ গুণ। যাই হোক, এটি ২০ লক্ষ টাকার ক্যাপ সাপেক্ষে৷
একজন কর্মচারীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে গ্র্যাচুইটির হিসাব: একজন কর্মচারীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে, কর্মচারীর চাকরির মেয়াদের উপর ভিত্তি করে গ্র্যাচুইটি সুবিধা গণনা করা হয়। পরিমাণ, যাই হোক, সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা সাপেক্ষে।
চাকরির মেয়াদ – গ্রাচ্যুইটির জন্য প্রদেয় পরিমাণ
১ বছরেরও কম – ২* বেসিস বেতন।
১ বছর তার বেশি কিন্তু ৫ বছরের কম – ৬* মূল বেতন।
৫ বছর তার বেশি কিন্তু ১১ বছরের কম – ১২* মূল বেতন।
১১ বছর তার বেশি কিন্তু ২০ বছরের কম – ২০* মূল বেতন।
২০ বছর বা তার বেশি - প্রতিটি সম্পূর্ণ ছয় মাসিক সময়ের জন্য মূল বেতনের অর্ধেক। যাইহোক, এটি মূল বেতনের সর্বোচ্চ ৩৩ গুণ সাপেক্ষে।
গ্র্যাচুইটি সংক্রান্ত সর্বশেষ আপডেট: প্রাইভেট-সেক্টরের কর্মচারীদের জন্য গ্র্যাচুইটির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির মধ্যে একটি হল করমুক্ত গ্র্যাচুইটির জন্য সর্বোচ্চ সীমা ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে৷ ৭তম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের ঘোষণা এবং বাস্তবায়নের ঠিক পরেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্যও এই নিয়ম আনা হয়েছে।
দেশ জুড়ে করোনা অতিমারীর বাড়বাড়ন্তর পর কেন্দ্রীয় সরকার কর্মীদের জন্য বেশ কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছে। সম্প্রতি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ জানিয়েছিলেন, কোনও কোম্পানিতে এক বছর পূর্ণ হলেই কর্মী গ্র্যাচুইটি পাওয়ার যোগ্য, এমন প্রস্তাব নিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটা কোনও সংস্থার স্থায়ী কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
গ্র্যাচুইটি সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: ক) একজন কর্মচারী তাঁর নিয়োগকর্তার থেকে ১০ লাখ টাকার বেশি গ্র্যাচুইটি পেতে পারেন। এই ক্ষেত্রে বর্ণিত মাণদণ্ড অনুযায়ী ট্যাক্স ছাড় নির্ধারণ করা হবে। খ) ২০১৯-এ অন্তবর্তীকালীন বাজেটে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ঘোষণা করেছিলেন, করমুক্ত গ্র্যাচুইটির সীমা ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হবে। গ) যদি অসদাচারণের কারণে চাকরি ছাড়তে হয় তাহলে নিয়োগকর্তা কর্মীকে গ্র্যাচুইটি দিতে অস্বীকার করতে পারেন। ঘ) একজন কর্মী মারা গেলে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারী গ্র্যাচুইটি পান।
গ্র্যাচুইটির উপর কর: একজন কর্মী কত টাকা গ্র্যাচুইটি পাচ্ছেন তার উপর ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। কেন্দ্র সরকার, রাজ্য সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ কোনও কর্মচারি যে টাকা গ্র্যাচুইটি হিসেবে পান তা সম্পূর্ণ কর মুক্ত।
গ্র্যাচুইটির নিয়ম: গ্র্যাচুইটি বাজেয়াপ্ত করা – পেমেন্ট অফ গ্র্যাচুইটি অ্যাক্ট ১৯৭২-এর অধীনে নিয়োগকর্তা কোনও কর্মচারীর গ্র্যাচুইটি পেমেন্টের সমস্তটাই কিংবা আংশিক আটকে রাখার ক্ষমতা রয়েছে। এমনকী সেই কর্মী যদি পাঁচ বা তার বেশি চাকরি করেন তাও। এটা তখনই কার্যকর যখন কর্মীকে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে বরখাস্ত করা হয়। এর মধ্যে কাজের সময় অন্য কর্মীদের শারীরিকভাবে আহত করার চেষ্টাও অন্তর্ভুক্ত।
গ্র্যাচুইটি পেমেন্টের টাইমলাইন: গ্র্যাচুইটি পেমেন্টের তিনটি ধাপ। এর মধ্যে রয়েছে – সূচনা: একজন ব্যক্তি তাঁর নিয়োগকর্তা বা কোম্পানির কাছে গ্র্যাচুইটির জন্য আবেদন করবেন। স্বীকৃতি এবং গণনা: কোম্পানি আবেদন খতিয়ে দেখে গ্র্যাচুইটির পরিমাণ গণনা করবে এবং গভর্নিং কর্তৃপক্ষকে বিবৃত পরিমাণ সহ একটি নোটিশ পাঠাবে। বিতরণ: কোম্পানি গভর্নিং কর্তৃপক্ষকে বিবৃতি পাঠানোর পর গ্র্যাচুইটির টাকা পরিশোধ করার জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা রয়েছে।
যদি সাড়ে ৪ বছর কাজের পর কেউ চাকরি ছাড়েন তিনি কি গ্র্যাচুইটি পাবেন: এর উত্তর, না। গ্র্যাচুইটি পেতে হলে কোনও কর্মচারিকে একটি কোম্পানিতে টানা পাঁচ বছর কাজ করতেই হবে। সম্প্রতি মাদ্রাজ হাই কোর্ট একটি রায়ে জানিয়েছে, যদি কোনও কর্মী পঞ্চম বছরের ২৪০ দিন কাজ করেন তাহলে তিনি গ্র্যাচুইটি পেতে পারেন। এই বিষয়ে কোম্পানির এইচআর-এর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলে নেওয়া উচিত। তবে, চাকরিরত অবস্থায় কেউ মারা গেলে, তিনি ৫ বছর চাকরি না করলেও গ্রাচুইটির পরিমাণ তার আইনি উত্তরাধিকারীকে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, একজন মনোনীত বা উত্তরাধিকারী কর্তৃক প্রাপ্ত পরিমাণ কর আরোপ করা হবে না।
চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাও কি ৫ বছর কাজ করলে গ্র্যাচুইটি পাবেন: কোম্পানির কর্মী তালিকায় নাম থাকলে গ্র্যাচুইটির যোগ্য। কিন্তু যদি সেই কর্মী এমন কোনও চুক্তির আওতায় থাকে যা কোম্পানির থেকে পৃথক তাহলে গ্র্যাচুইটি ঠিকাদারের থেকে পাওনা হয়, কোম্পানির থেকে নয়।