এর একমাত্র কারণ হল, ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছেন না অনেকেই। ফলে শিক্ষা ঋণ পোর্টফোলিওতে নন পারফর্মিং অ্যাসেট প্রায় ৮ শতাংশের উচ্চ হারে বেড়েছে। অর্থাৎ ঋণ শোধের তুলনায় পরিশোধ করছেন না এমন সংখ্যাই বেশি। ফলে ব্যাঙ্কগুলিও আগের তুলনায় সতর্ক। নতুন শিক্ষা ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরো দমে চলছে ঝাড়াই-বাছাই। ঋণ যদি শোধ না হয়, তাহলে ব্যাঙ্কের চলে কী করে! শুধু সরকারি ব্যাঙ্ক নয়, অন্যান্য বেসরকারি ব্যাঙ্কের অবস্থাটাও একই। শিক্ষা ঋণ বিভাগে এনপিএ চলতি আর্থিক বছরের জুন প্রান্তিকের শেষে ৭.৮২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, জুনের শেষ ভাগ অবধি বকেয়া শিক্ষা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০,০০০ কোটি টাকায়।
advertisement
আরও পড়ুন: 'প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলছেন মমতা', এবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর
এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন যে, উচ্চ হারে এনপিএ-এর কারণে বর্তমানে শিক্ষা ঋণ মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। এর ফলে যাঁরা ঋণ মেটাতে চান তাঁরাও বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদেরকেও ঋণ দিতে গড়িমসি করছে ব্যাঙ্কগুলো। শিক্ষা ঋণ পোর্টফোলিওর স্টক নেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রক সম্প্রতি পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলির একটি সভা আহ্বান করেছিল। সেখানে সুদ ভর্তুকি স্কিম সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাঁচ দিন ধরে চলছে কর্মবিরতি,সরকারি বাস না পেয়ে দুর্ভোগে নাজেহাল যাত্রীরা
বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে ঋণের এনপিএ বেশি: আরবিআইয়ের তরফে একটি চিঠিতে বলা হয়েছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির দ্বারা প্রদত্ত শিক্ষা ঋণের এনপিএ বিপুলভাবে বেড়েছে। এটা দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যাঙ্কগুলির দেওয়া ঋণের বৃদ্ধিকেও প্রভাবিত করতে পারে। ২০২০ সালের জুনে প্রকাশিত এই চিঠিতে বলা হয়েছিল যে ভারতে প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষা ঋণ সরকারি খাতের ব্যাঙ্কগুলি দিয়ে থাকে। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত, শিক্ষা ঋণের মোট বকেয়ায় প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাঙ্কগুলির অংশ প্রায় সাত শতাংশ এবং আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলির অংশ তিন শতাংশ।
এই কারণে ঋণ শোধ হচ্ছে না: রিপোর্ট অনুসারে, ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত, সমস্ত ব্যাঙ্কের মোট শিক্ষা ঋণের বকেয়া ছিল ৭৮, ৮২৩ কোটি টাকা, যা ২৫ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত বেড়ে ৮২,৭২৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে, রিসার্জেন্ট ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর জ্যোতি প্রকাশ গাদিয়া বলছেন, প্রতি বছর কলেজগুলি থেকে যে সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী উত্তীর্ণ হচ্ছেন ততজন চাকরি পাচ্ছেন না। ফলে ঋণ শোধ হচ্ছে না। এই কারণেই এনপিএ ক্রমশ বাড়ছে। ব্যাঙ্কগুলিও নতুন শিক্ষা ঋণ দিতে দোলাচলে ভুগছে। বিশেষ করে ৭.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিক্ষা ঋণ দেওয়া হয় কোনও জামানত বা তৃতীয় পক্ষের গ্যারান্টি ছাড়াই, এটা মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এর থেকে বেরোনোর উপায়? জ্যোতি প্রকাশ গাদিয়া জোর দিচ্ছেন নয়া শিক্ষা নীতির উপর। তাঁর মতে, নতুন শিক্ষা নীতি যথাযথভাবে কার্যকর হলেই মৌলিক দক্ষতা বাড়বে। তার হাত ধরে আসবে কর্মসংস্থান। তাহলেই ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ হবে। সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে’।
প্রসঙ্গত, শিক্ষা ঋণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ব্যাঙ্কই ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন মডেল এডুকেশন লোন স্কিম অনুযায়ী ভারতে এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। এই মডেল লোন স্কিম অনুসারে, ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিক্ষা ঋণের জন্য ঋণগ্রহীতার থেকে কোনও জামানত বা গ্যারান্টার নেওয়া হয় না। এরপর ৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ তৃতীয় পক্ষের গ্যারান্টি বা জমানতের বদলে পাওয়া যায়। ৭.৫ লক্ষ টাকার উপরে ঋণের ক্ষেত্রে বাস্তব জামানত প্রয়োজন।
৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিক্ষা ঋণ সাধারণত সেই সমস্ত পড়ুয়াদের দেওয়া হয় যারা ম্যানেজমেন্ট কোটার মাধ্যমে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং যদি তারা পূর্ববর্তী পরীক্ষায় ন্যূনতম নম্বরের মানদণ্ড পূরণ করে। ৭.৫ লক্ষ টাকার বেশি শিক্ষা ঋণের মধ্যে রয়েছে শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (আইটিআই), পলিটেকনিক, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্পোরেশন (এনএসডিসি) বা সেক্টর স্কিল কাউন্সিল, রাষ্ট্রীয় দক্ষতা মিশন/কর্পোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত প্রশিক্ষণ অংশীদারদের দ্বারা চালিত বৃত্তিমূলক শিক্ষা কোর্স।