আরও পড়ুন: সরকার আজ দিচ্ছে ৫০০ টাকা সস্তায় সোনা কেনার সুযোগ, জেনে নিন কি করতে হবে
মিউচুয়াল ফান্ডই (Mutual Fund) বিনিয়োগকারীর হয়ে সরাসরি বিনিয়োগ (Investment) করে দেবে। এর জন্য বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানিগুলিতে থাকেন ফান্ড ম্যানেজাররা (Fund Managers)। বিনিয়োগকারী কোথায় বিনিয়োগ করলে সব চেয়ে বেশি লাভবান হবেন, তা নিজেদের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করে দেন এই ফান্ড ম্যানেজাররা।
advertisement
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের সুবিধা:
- কোথায় বিনিয়োগ করলে সব চেয়ে বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেটা অনেক সময়েই আমরা বুঝে উঠতে পারি না। আর এর জন্যই রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। যেমন-- অনেকে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার জন্য এক জন অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগ করেন। আবার বাড়ি তৈরির সময় প্রায় প্রত্যেকেই এক জন আর্কিটেক্ট বা স্থপতি নিয়োগ করে তাঁকে দিয়েই বাড়ির নকশা তৈরি করিয়ে নেন। ঠিক তেমনই মিউচুয়াল ফান্ডের অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজাররা বিনিয়োগকারীদের বোঝাবেন যে, কোথায় বিনিয়োগ করলে মুনাফা বেশি হবে।
- ধরা যাক, বিনিয়োগকারীর পর্যাপ্ত সময় অথবা আগ্রহ-- কোনওটাই নেই। এ ক্ষেত্রেও মিউচুয়াল ফান্ডই বিনিয়োগের জন্য আদর্শ ঠিকানা। এটা অনেকটা নিজে গাড়ি চালাতে জানা সত্ত্বেও ড্রাইভার নিয়োগ করার মতো বিষয়। কারণ যখন মিউচুয়াল ফান্ড কেনা হয়, তখন বিনিয়োগকারী ব্যয়ের অনুপাতের অংশ হিসেবে একটি ম্যানেজমেন্ট ফি প্রদান করেন। যা এক জন পেশাদার পোর্টফোলিও ম্যানেজার নিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়। যিনি স্টক, বন্ড ইত্যাদি কেনেন এবং বিক্রি করেন। ফলে একটি বিনিয়োগ পোর্টফোলিও পরিচালনার জন্য বিনিয়োগকারী সব রকম সাহায্য পেয়ে থাকেন। আবার প্রতিটা মিউচুয়াল স্কিম, পেশাদার পরিচালক দ্বারা পরিচালিত হয়। তাঁরা নিয়মিত বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্য সম্পাদন, গবেষণা এবং বিশ্লেষণ করেন। বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগে অবিচ্ছিন্ন নজরদারি চালিয়ে সময়মতো পর্যালোচনা করে এবং প্রয়োজনে যথাযথ পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই স্কিমটি থেকে সর্বাধিক উপার্জন নিশ্চিত করাই পেশাদার পরিচালকদের কাজ।
- বিনিয়োগকারী নিজে কাজটি করার পরিবর্তে তা আউটসোর্স করলে অর্থ সঞ্চয় করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন, নিজে গাড়ি চালিয়ে কোথাও যাওয়ার থেকে ট্রেনে যাওয়াটা অনেক বেশি সাশ্রয়ের। এ ছাড়া বেশি লেনদেনের জন্য কম খরচে ন্যায্যমূল্যের সুবিধা মেলে মিউচুয়াল ফান্ডে। অর্থাৎ বেশি পরিমাণে ক্রয় করলে সাধারণত দাম কমে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি ১০০ গ্রাম টুথপেস্টের দাম ১০ টাকা হয়, তা হলে কেউ যদি ৫০০ গ্রামের প্যাক কেনেন, সে ক্ষেত্রে তিনি সেটা ৪০ টাকায় পেতে পারেন। ঠিক সে রকম ভাবেই মিউচুয়াল ফান্ডেও এই সুবিধাই মেলে। যদি বিনিয়োগকারী একসঙ্গে একাধিক মিউচুয়াল ফান্ড কিনে থাকেন, তা হলে একটি মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট কেনার তুলনায় প্রসেসিং ফি বা অন্যান্য কমিশন চার্জ কম হবে। এ ছাড়া আরও একটি সুবিধা হল, যে হেতু ফান্ডের জন্য অন্যান্য সুদের আয়ের উৎস দেওয়া হয়, তাই সেগুলি মিউচুয়াল ফান্ডে অতিরিক্ত শেয়ার কেনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। যা বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- বিনিয়োগকারী নিয়মিত তাঁর বিনিয়োগগুলি ট্র্যাক করতে পারবেন। এটা অনেকটা ক্রিকেট খেলার মতো। একটি ম্যাচে যখন দ্বিতীয় দল ব্যাট করতে নামে, তখন কত রান করতে হবে, হাতে কত উইকেট আছে এবং কত ওভার খেলা বাকি-- এই সব তথ্য তার সামনে পরিষ্কার থাকে। ঠিক সে রকম ভাবেই, বিনিয়োগকারী কত পরিমাণ অর্থ জমিয়েছেন, সেটা হল- তাঁর এখনও পর্যন্ত করা স্কোর বা রান। তার পরে কত স্কোর করতে হবে অর্থাৎ কত টাকা জমা করতে হবে, এই বিষয় তাঁর কাছে স্পষ্ট থাকে। আর বাকি থাকা সময় হল, ওভার। উইকেটের অবস্থা বা বিপক্ষ বোলারের মান কেমন, তার সঙ্গে বিভিন্ন ঝুঁকির তুলনা করা যেতে পারে। সেটা জাতীয় বা বিশ্ব অর্থনীতি, মূলধনের প্রবাহ, আইন, কর ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। এ বার এই সমস্ত দিকগুলি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন অনলাইন সরঞ্জাম এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারী তাঁর বিনিয়োগের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এটাকে স্কোর বোর্ডের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
আরও পড়ুন- ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গাঁজা পাচার; বাবা-ছেলে সহ গ্রেফতার আরও ৫!
এ ছাড়াও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী কর সাশ্রয়ের সুবিধাও উপভোগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ইক্যুইটি-লিঙ্কড সেভিংস স্কিম (Equity-Linked Savings Scheme) বা ইএলএসএস (ELSS) নামে কর সঞ্চয়কারী মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়। যার মাধ্যমে ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের ধারা ৮০সি অনুযায়ী বার্ষিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর সাশ্রয় করা যায়। অর্থাৎ, যদি কোনও বিনিয়োগকারী একটি ইএলএসএস-এর মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন, তা হলে মোট করযোগ্য আয়ের থেকে ওই টাকাটি কাটা যাবে।
আরও পড়ুন: ক্রিপ্টোকারেন্সি মাধ্যমে হয়েছেন আমেরিকার সবথেকে ধনী ব্যক্তি; জায়গা করে নিয়েছেন ফোর্বসের লিস্টে!
এই স্কিমগুলির ইউনিট বরাদ্দ করার তারিখ থেকে একটি লক-ইন মেয়াদ থাকে। এই লক-ইন মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মুক্ত হয়ে যায়। তখন ইএলএসএস থেকে বৃদ্ধি এবং লভ্যাংশের বিকল্প প্রদান করা হয়। বিনিয়োগকারীরা এই স্কিমে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন, যা একটি আর্থিক বছরের জন্য পুরোপুরি করমুক্ত হয়ে যাবে।