পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে বদলি হয়ে দুর্গাপুরে নতুন পোস্টিং হয়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজ ছেড়ে দেন স্বামী। আর সেই সময়ই সংসারের হাল ধরতে এগিয়ে আসেন ওই মহিলা। তাম্রলিপ্ত পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পিউ আদক। বরাবরই তার হাতের রান্না খেয়ে বাড়ির লোক থেকে শুরু করে আত্মীয়রা প্রশংসায় ভরিয়ে তুলত। সেই হাতের জাদুকেই কাজে লাগিয়ে ২০২২ সালে মাঝামাঝি সময়ে তমলুকের মেয়ে পিউ রোজকার জীবনের বদলে শুরু করে অন্য এক জীবন।
advertisement
আরও পড়ুন: ফুল চাষে ১ লক্ষ টাকা ভর্তুকি! কীভাবে মিলবে? অঢেল লাভের পথ দেখালেন কৃষি বিজ্ঞানী
প্রথমে বাড়িতে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে খাওয়ার পৌঁছন। পাঁচটা, দশটা থেকে শুরু করলেও বছর দুয়েকের মধ্যে সেটা মাঝেমধ্যে ৫০ টাতে পৌঁছে যায়। তারপর সিদ্ধান্ত নেয় বাড়িতে নয়, এবার একটি দোকান ভাড়ায় নিয়ে এই ব্যবসাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করার ও আরও বড় চ্যালেঞ্জ নেওয়ার। তারপর থেকেই নানা প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়েই শুরু হয় লড়াই। অবশেষে সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া মেছেদা রাজ্য সড়কের পাশেই শুরু হল নতুন খাবারের দোকান।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এ বিষয়ে পিউ আদক জানান, “অন্যান্য সচ্ছল পরিবারের মতোই রোজ দিন খাওয়া দাওয়া সবার সঙ্গে আড্ডা আনন্দ এইভাবে বেজায় কেটেছিল দিনগুলি। হঠাৎই করোনা মহামারীর কোপে সবকিছুই শেষ হয়। স্বামী করোনা আক্রান্ত হন। শারীরিক কারণে কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। স্বামী অমিত আদক বাড়ির আয়ের মাধ্যম ছিল। যার জেরে সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন। বেশ কিছুদিন কষ্ট সৃষ্ট করেই চলছিল সংসার। অবশেষে অভাবের তাড়নায় শুরু হয় লড়াই। আর সেই লড়াই এ জয়ী হয়েছে কিছুটা নিজের হাতের রান্নার গুনে। রান্না করাটা শখ ছিল সেটাই বর্তমানে আবারও জীবনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।”
রান্নাকে সঙ্গী করে পিউ এখন বর্তমানে একজন সফল ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বর্তমানে প্রতিদিন তমলুক শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজনেরা দুপুর থেকে রাত্রের খাবার খেতে আসেন পিউর খাবার হোটেলে। এর পাশাপাশি জন্মদিন ছোটখাটো যেকোনও অনুষ্ঠানের খাবার অর্ডার নিয়ে খাওয়ার পৌঁছে দেয় পিউ। তখন মেনুর অর্ডার অনুযায়ী বানানো হয় খাওয়ার। পিউ-এর ১১ বছরের একটি ছেলে ও ১৫ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। শুধু সংসারের খরচ নয়, এই উপার্জনের মাধ্যমে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ থেকে থেকে সমস্ত আবদার পূরণ করে চলেছে পিউ। পিউএর ভবিষ্যতের লক্ষ্য শুধু এই একটি নয় আরও কয়েকটি খাওয়ারের দোকান চালু করার। পিউএর এই লড়াইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বামী অমিত আদকও!





