বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইলেকট্রিক ও টুনি বাল্বের আড়ালে ফিকে পড়েছে এই লন্ঠন। সারা বছরে সেইভাবে লন্ঠণ আর বিক্রি হয় না, ফলে ধীরে ধীরে বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীরা এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। গুটিকয়েক শিল্পী রয়েছে তারা সারা বছর অধীর আগ্রহে বসে থাকে দুর্গাপুজোর জন্য। বিভিন্ন প্যান্ডেল থেকে বরাত আসে লণ্ঠনের, তাতেই সংসার চলে তাদের।
advertisement
অন্যদিকে মল্ল রাজাদের সময়ে বিনোদনের খেলা দশ অবতার তাস। আজ বিলুপ্তের পথে। জানা যায়, দশাবতার তাস, যা পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের এক ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প ও খেলা। মূলত হিন্দুধর্মের বিষ্ণুর দশ অবতার-কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। এই গোল তাসগুলি কাপড় দিয়ে তৈরি হয় এবং প্রতিটি তাসে একজন অবতারের ছবি থাকে, যার সঙ্গে মন্ত্রী সহ আরও ১১টি তাস থাকে, মোট ১২০টি তাস নিয়ে একটি সম্পূর্ণ সেট হয়।
আরও পড়ুন: চতুর্থীর সকালেই পয়সা উসুল! উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি থেকেই যা দেখলেন পর্যটকরা, মন ভাল করা ছবি
মুঘল আমলে এই তাস খেলাটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। কোনও একদিন মল্ল রাজা বীর হাম্বির মুঘল সাম্রাজ্যের দরবারে গিয়ে এই তাস খেলা দেখে আসেন। তারপর বিষ্ণুপুর এসে ফৌজদার পরিবারকে এই তাস তৈরীর নির্দেশ দেন। রাজা বীর হাম্বিরের নির্দেশে ফৌজদাররা প্রথম এই বিশেষ তাস তৈরি করেন। এই তাসে মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ (জগন্নাথ দেবের আদলে) ও কল্কি – এই দশ অবতারের ছবি থাকে। আজ আর মল্ল রাজাদের রাজত্বও নেই আর এই তাস খেলার প্রতি আগ্রহ দেখায় না কেউ। স্বাভাবিকভাবেই কালের নিয়মে বিলুপ্তের পথে এই তাস। গুটি কয়েকজন শিল্পী এখন বিষ্ণুপুরে এই তাস তৈরি করেন বর্তমান প্রজন্ম এই কাজে আর আগ্রহ দেখায় না তেমন।
তবে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের শিল্পী প্রশান্ত ফৌজদার বিষ্ণুপুরের এই প্রাচীন দুটি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এক সুতোয় দুই শিল্পকে গেঁথে রেখেছেন। লন্ঠন শিল্পীরা লন্ঠন তৈরি করেন, সেই লন্ঠন সংগ্রহ করেন প্রশান্ত ফৌজদার। সেই লন্ঠনের কাঁচের ওপর দশ অবতার তাসের বিভিন্ন অবতারের ছবি এঁকে বাজারে বিক্রি করেন। যার ফলে এই লন্ঠনের সৌন্দর্য অনেক বেড়েছে সাধারণ মানুষ থেকে পর্যটক সকলেই ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্যও এই সুদৃশ্য লন্ঠন ক্রয় করেন। সারা বছর কমবেশি এই লন্ঠন বিক্রি হলেও দুর্গাপুজোর আগে এই লণ্ঠন বিক্রি অনেক গুণ বেড়ে যায়।
শিল্পী প্রশান্ত ফৌজদার জানান, বিষ্ণুপুর মহকুমা শাসক দফতর থেকেও এই লন্ঠন ক্রয় করেন এবং সরকারি বিভিন্ন মেলাতেও তার এই লন্ঠন নিয়ে বিক্রি করার সুযোগ করে দেন সরকার। বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ জানান, প্রাচীন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার অভিনব উদ্যোগ এই শিল্পীর তাই তাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য করা হয়।