জমি :-
মাটি ও জমি তৈরি উঁচু ও মাঝারি জমিতে ভুট্টা ভাল হয়। তবে জলনিকাশী ব্যবস্থা যুক্ত বায়ু চলাচলে সক্ষম এমন হালকা বেলে, দোঁয়াশ এবং কাদা দোঁয়াশ মাটিতে ভুট্টা ভাল হয়। মাটিতে যথাযথ জৈব পদার্থ ও খাদ্যোপাদান থাকা বাঞ্ছনীয়। কারন ভুট্টা প্রচুর পরিমানে মাটির খাবার টেনে নেয়। সামান্য আম্লিক মাটিতে ভুট্টা চাষ ভাল হয়।
advertisement
রোপনের সময় :-
বছরের প্রায় সকল সময়েই ভুট্টা চাষ করা যায়। খারিফ চাষের জন্য জুন-জুলাই (আষাঢ়), রবি চাষের জন্য অক্টবর -নভেম্বর (কার্ত্তিক) এবং গ্রীষ্মে সেচের জলে চাষের জন্য ফেব্রুয়ারী-মার্চ (ফাল্গুন) মাসে ভুট্টা বীজ রোপনের উপযুক্ত সময়।
রোপনের পদ্ধতি :-
রোপনের সময় বা বীজ ছিটিয়ে লাগানোর সময় যাতে এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমান গাছ যাতে থাকে সেই কথা মাথায় রাখতে হবে। বেশি গাছে যেমন ভুট্টা ছোট হয় ও পুষ্ট বীজের অভাব থাকে, তেমনি কম পরিমান গাছ থেকে ফলন কম পাওয়া যায়।
সার প্রয়োগ :-
সর্বদা মাটি পরীক্ষা করার পর সুপারিশ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা উচিত। জাতীয় ফসলের মধ্যে ভুট্টা সর্বাধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ফলন দিতে পারে। সেই অনুযায়ী ভুট্টার যথোপযুক্ত খাদ্যোপাদান ও মাটিতে সার থাকা উচিত।
উর্বর দোঁয়াশ পলিমাটিতে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়। অন্যান্য জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব। পর্যাপ্ত পরিমানে জৈবসার প্রয়োগে গাছ ও ফলন দুইই ভাল হয়।
জলসেচ ব্যবস্থাপনা :-
গ্রীষ্ম ও রবি মরসুমে চাষের জন্য মোটামুটি ৬-১০ টি সেচের প্রয়োজন হয়। নিচু জমিতে জল থাকলে ৪ টি সেচেও স্বল্পমেয়াদি ভুট্টা চাষ করা যায়। ভুট্টার সবথেকে সংকটময় দশা হল চারা বেরোনোর ৪৫-৬৫ দিন অবধি। এই সময় জলটান থাকলে ভুট্টার ফলন মার খায়।
খারিফ বা বর্ষাকালীন চাষে আলাদা করে জলসেচ দেবার প্রয়োজন থাকে না। বিশেষ ক্ষেত্রে জলনিকাশির ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন হয়। ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোন ক্রমেই জমিতে যাতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।
ফসল কাটা, ঝাড়াই ও মাড়াই :-
বিভিন্ন জাত অনুযায়ী ভুট্টা বিভিন্ন সময়ে পাকে। গাছের পাতা হলুদ হতে শুরু করলে ও ভুট্টার খোসাটি শুকোতে শুরু করলে ৮০ শতাংশ ভুট্টা পেকে গেছে বলে ধরা হয়। বীজ করার জন্য ভুট্টাকে এই অবস্থায় তুলে নিতে হয় ও শুকোতে হয়।
আরও পড়ুন: মালদহের আম বালুরঘাটে পৌঁছতেই হুড়োহুড়ি
কি কি খাদ্য তৈরি হয়ে থাকে ভুট্টা থেকে:-
ভুট্টা মোটামুটি সব মরশুমেই চাষের উপযোগী। গর্ভকালীন মাতৃত্বে, দৈনন্দিন ছাতু হিসাবে, গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে গরুর দুধ বাড়াতে এবং মুরগীর খাবার হিসাবে এর চাহিদা বাড়ছে।
মুরগির খাবারের উপাদান হিসাবে ৬০ শতাংশের বেশি ভুট্টার দানা থাকে। ভুট্টার দানার মাধ্যমে মুরগির খাবারের প্রোটিনের পরিমান বাড়াতে পারলে, মাংসেও প্রোটিনের পরিমান বাড়ে।
এছাড়া ভুট্টা থেকে বেবিকর্ন ও পপকর্ন-সহ একাধিক মুখরোচক খাদ্য তৈরি হয়ে থাকে। এই সমস্ত নানাবিধ কারণে চাষীদের মধ্যে ভুট্টা চাষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে ক্রমশ।
সুস্মিতা গোস্বামী