বাঁকুড়ার বছর সাতাশের নরেন ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখেছিল ইঞ্জিনিয়ার হবার। কলকাতার মেঘনাথ সাহা নামে একটি স্বনামধন্য বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ২০১৮ সালে বিটেক ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রিও অর্জন করে সে। তারপর কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার সাইট ইঞ্জিনিয়ার পদে মিলেছিল একটি চাকরিও। কিন্তু ২০২০ সালের নরেনের জীবনে নেমে আসে কালো ছায়া। কোভিড নরেনের জীবনের পরিপূর্ণ স্বপ্নকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। তাকে ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয় ওই সংস্থার পক্ষ থেকে। কিন্তু নরেন স্পষ্টত ওই সংস্থার মুখের উপর না বলে একরাশ হতাশা নিয়ে সোজা চলে আসে সে তার নিজ গৃহে। বাঁকুড়া পৌরসভার অন্তর্গত ৪ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন কেরানীবাঁধ বাইপাস রোডের ভাটিগোড়া এলাকায় বাড়ি নরেনের। মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে নরেনের পরিবারে রয়েছেন বাবা, মা, ভাই, তার স্ত্রী, জেঠু, জেঠিমা। কিডনি অসুখে একটি কিডনি হারিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসাধীন বাবা।
advertisement
বাড়ির ভরসা বলতে সেই নরেন তার উপর মুখ চেয়ে রয়েছে এতগুলি মানুষ। কোনো উপায় না পেয়ে নরেন সিদ্ধান্ত নেয় বাড়িতে থেকেই কিছু করার। খুলে ফেলে নিজের চায়ের দোকান। শুধু চা নয় সাথে ম্যাগি, পাস্তা, বার্গার, পপকন এর মত বাঙালির বিভিন্ন সুস্বাদু সব খাবারই প্রদান করে চলেছে। তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে দোকান আরো বৃহৎ আকারে করার চিন্তাভাবনা রয়েছে হাসিমুখে ক্রেতাদের সব আবদার মেটাতে। এই ভাবেই বিটেক চা ওয়ালার সংগ্রাম চলছে তার নিজের মতো করে।নরেন কর্মকার বলেন টেলিকম ডিপার্টমেন্ট এর সাইট ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করতেন তিনি।কোভিডের কালো ছায়া তছনছ দিয়েছে তার জীবন। পশ্চিমবঙ্গে সেইভাবে চাকরি নেই। আর চাকরি করতে হলে যেতে হবে ভিন রাজ্যে। এই মুহূর্তে তার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ পরিবারের সদস্যদের ভরসা তার উপর। বাবা অসুস্থ। বাড়িতে এতগুলো মানুষের দায়িত্ব তার ঘাড়ে। কিছু তো করতে হবে সেই ভেবেই খোলা এই চা দোকান।
আরও পড়ুন: বটেশ্বরী জটেশ্বরী কালী মায়ের মন্দিরে একী ঘটল? এলাকায় চাঞ্চল্য ! জানলে অবাক হবেন
শঙ্খদীপ চক্রবর্তী নামে একটা ক্রেতা বলেন নরেনের ব্যবহার এবং নরেনের চা আমাদের এখানে বারবার আসতে বাধ্য করে। তাছাড়া নরেনের মত আমরাও বেকার। শুধু চা দোকান নয় তার সাথে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য আরও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে সে দোকান করার সাথে সাথে। যদি ভালো কোন কোম্পানিতে কাজের সুযোগ মেলে তাহলে এই কাজ ছেড়ে সে যেতে রাজি। তবে ভালো সুযোগ না পেলে এই চা দোকান থেকে পরবর্তী ক্ষেত্রে বাঁকুড়া শহরের বুকে একটি বৃহৎ আকারে প্রতিষ্ঠার দোকান রূপে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এখন।
JOYJIBAN GOSWAMI





