মাত্র ১৫ বছর বয়সেই দেশ মাতৃভূমির ডাকে সাড়া দিয়ে নাম লিখিয়েছিলেন সশস্ত্র আন্দোলনে। যুবক ললিত তখন যেন ছিল ইংরেজ শাসকদের কাছে এক ত্রাশ। ললিত এবং তার দলবলকে শান্ত করতে তৎপর হয়ে উঠেছিল ইংরেজ প্রশাসন। দিনের পর দিন পালিয়ে পালিয়েই দিন কাটাতে হয়েছিল ললিত দেবনাথ কে। একাধিক বার ধরা পড়েন তিনি।
advertisement
আরও পড়ুন প্রয়াত হুগলির প্রাক্তন সাংসদ রূপচাঁদ পাল
এমনকি ইংরেজদের সঙ্গে লড়াইয়ে একবার গুলিবিদ্ধও হন তিনি। অবশেষে আসে সেই সন্ধিক্ষণ। কোন ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট। ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের আকাশে ওঠে এক নতুন সূর্য। ততকালীন কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি মানুষকেই তাদের সম্মান জানানোর জন্য এক সান্মানিক ভাতা প্রদানের ঘোষণা করেন। সেই ভাতা দিয়েই এতদিন সংসার চলত ললিত দেবনাথের পরিবারের।
আলিপুরদুয়ার জেলার কামাখ্যাগুড়ি লাগোয়া মধ্য পারোকাটায় ললিত বাবুর বাড়ি। ১০১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় ললিতবাবুর। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন । তারপর সাড়ে তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও আর তা মেলেনি। বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে ওই পরিবার। রেশনের চাল এবং ললিত বাবুর ছেলে সজল দেবনাথের সামান্য রোজগারের ওপরই চলছে চারজনের সংসার।ললিতবাবুর স্ত্রী রেণুদেবী বলেন, ও তো স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিল। সেই হিসাবে যে পেনশন পেত, ওই দিয়ে চলত সংসার। ওর মৃত্যুর পর পারিবারিক পেনশন পাওয়ার কথা। কিন্তু তা মিলছে না।'
আরও পড়ুন Murshidabad News: অবাক করল ক্লাস ইলেভেনের দুই খুদে বিজ্ঞানী! তৈরি করে ফেলল আস্ত একটা ড্রোন
ললিতবাবুর ছেলে সজল দেবনাথ জানালেন, পেনশনের 'খোঁজে' কত পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে। এখনও ঘোরাঘুরি চলছেই। যে অফিস যা যা কাগজ চেয়েছে তাই পাঠানো হয়েছে। সাড়ে তিন বছর কেটে গেলেও আজও মায়ের পেনশন চালু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের নিজের প্রোফাইলের ছবি বদলে ফেলছে তরুণ প্রজন্ম। সরকারি বেসরকারি দফতর গুলিতে সাজো সাজো রব। আর এসব জাঁকজমকের উলটোদিকে রয়েছেন কামাখ্যাগুড়ির ললিত দেবনাথের পরিবার। অর্ধাহারেই কাটাতে হচ্ছে তাদের।
আলিপুরদুয়ার,কলকাতা, দিল্লি সবকটি অফিসের দোরে পৌঁছেও আজও চালু হয়নি স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের সম্মানিক ভাতা। এমনকি ভাতা পেতেও পড়তে হয়েছে দালালের খপ্পরে। কোন এক সরকারি অফিসের ফাইলের গেড়োতে আটকে রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামী ললিত দেবনাথ এর পরিবারিক ভাতা। যার জট গত তিন বছরেও খোলেনি। সরকারের কাছে পরিবারের একটাই আরজি তাদের প্রাপ্য তাদেরকে দেওয়া হোক।
Annanya Dey