ভাঙা কার্যত অসম্ভব! ক্রিকেট ইতিহাসের ১০টি এমন রেকর্ড, না জানলে মিস করবেন
- Published by:Soumendu Chakraborty
Last Updated:
এক সময় ছিল, যখন ক্রিকেট খেলা দেশগুলোর সংখ্যা ছিল পাঁচটিরও কম। আজ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ ক্রিকেট খেলছে, যার মধ্যে প্রায় ২০টি দল আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলেছে। তবুও ক্রিকেটে এমন কিছু মহারেকর্ড রয়েছে, যেগুলো ভাঙা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হয়।
ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের পাহাড়সম ইনিংস বা রোহিত শর্মার ওয়ানডেতে অপরাজেয় ২৬৪ রান তার উজ্জ্বল উদাহরণ। স্যার জ্যাক হবস প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৯৯টি শতরান করেছেন, আর সচিন তেন্ডুলকর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেছেন ১০০টি শতরান—যা দীর্ঘদিন ধরেই অটুট রয়েছে। সচিন তেন্ডুলকর ইতিহাস গড়েছেন প্রথম এবং একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি শতরান করেছেন। তার এই রেকর্ডে রয়েছে ৫১টি টেস্ট শতরান এবং ৪৯টি ওয়ানডে শতরান। এই অসাধারণ কীর্তি তার ব্যতিক্রমী প্রতিভা এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ ও সফল ক্যারিয়ারের প্রমাণ। তেন্ডুলকরের ১০০ শতরানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার প্রথম টেস্ট শতরান দিয়ে এবং ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তার প্রথম ওয়ানডে শতরান দিয়ে। পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে তিনি দুই ফরম্যাটেই একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন এবং নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। এত বছর ধরে দুই ফরম্যাটেই এমন ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যে কতটা কঠিন, তা বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে কোনো খেলোয়াড় এই কীর্তি ছুঁতে পারবে—এমনটা কল্পনা করাই কঠিন।
advertisement
রাহুল দ্রাবিড় টেস্ট ক্রিকেটে কখনও গোল্ডেন ডাকে আউট হননি। তার ২৮৬টি টেস্ট ইনিংসের মধ্যে তিনি একবারও প্রথম বলেই আউট হননি। এই অসাধারণ কীর্তি প্রতিটি বল সামলানোর তার অতুলনীয় দক্ষতার পরিচয় দেয়। ‘দ্য ওয়াল’ নামে পরিচিত দ্রাবিড় ১৬৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন এবং ৫২.৩১ গড়ে মোট ১৩,২৮৮ রান করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ৩৬টি শতরান করেছেন। এই রেকর্ডে তিনি কেবল ডেভিড গাওয়ার (২০৪) এবং জাভেদ মিয়াঁদাদের (১৮৯) পরেই অবস্থান করছেন।
advertisement
ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়ক ব্রায়ান লারাকে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে ধরা হয়। এই প্রাক্তন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ২০০৪ সালে অ্যান্টিগুয়ায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি টেস্ট ম্যাচের এক ইনিংসে অপরাজেয় ৪০০ রান করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে ৪০০ রান করা ব্রায়ান লারাই বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড়। তিনি ৫৮২ বল খেলে এই ঐতিহাসিক স্কোর গড়েছিলেন। লারার এই ম্যারাথন ইনিংসটি চলেছিল ৭৭৮ মিনিট, যার মধ্যে তিনি ৪৩টি চার এবং ৪টি ছক্কা মেরেছিলেন।
advertisement
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান উইয়ান মুল্ডার সম্প্রতি ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ডের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। মুল্ডার অপরাজেয় ৩৬৭ রান করেছিলেন, যা টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরি হিসেবে বিবেচিত হয়। তার এই ইনিংসে ছিল ৪৯টি চার। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের প্রতি সম্মান জানিয়ে লারার রেকর্ড থেকে মাত্র ৩৩ রান দূরে থাকতেই মুল্ডার নিজের ইনিংস ঘোষণা (ডিক্লেয়ার) করে দেন। এর ফলে ব্রায়ান লারা তার বিশেষ ও ঐতিহাসিক রেকর্ডটি অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হন।
advertisement
রোহিত শর্মা ১৩ নভেম্বর ২০১৪ সালে ইডেন গার্ডেন্সে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি ওয়ানডে ম্যাচে ২৬৪ রান করেছিলেন। তিনি এই রেকর্ডগড়া ইনিংসটি খেলেছিলেন মাত্র ১৭৩ বলে, যেখানে ছিল ৩৩টি চার এবং ৯টি ছক্কা। এই ঐতিহাসিক ইনিংসের পাশাপাশি রোহিত শর্মাই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনটি দ্বিশতক করেছেন। তার বাকি দুই দ্বিশতকের মধ্যে রয়েছে ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০৯ রান এবং ২০১৭ সালে মোহালিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অপরাজেয় ২০৮ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্য কোনো খেলোয়াড় একের বেশি দ্বিশতক করতে পারেননি।
advertisement
শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি অফ-স্পিনার মুথাইয়া মুরলিধরনের নামে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। মুরলিধরন ১৩৩টি টেস্ট ম্যাচে মোট ৮০০টি উইকেট নিয়েছেন। ১৯৯২ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে নিজের ঘূর্ণি ও রহস্যময় বোলিংয়ের জাদুতে তিনি এই অসাধারণ কীর্তি গড়ে তোলেন। বর্তমান ক্রিকেটে যেখানে তুলনামূলকভাবে কম টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়, সেখানে তার এই রেকর্ড ভাঙা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হয়। মুরলিধরনের নামে আরও বহু উল্লেখযোগ্য রেকর্ড রয়েছে, যার মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক দশ উইকেট নেওয়া (২২ বার) এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট (৫৩৪টি) অন্যতম।
advertisement
ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান স্যার জ্যাক হবস তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মোট ১৯৯টি শতরান করেছিলেন। তিনি ১৯০৫ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ৮৩৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন এবং ৬১,৭৬০ রান সংগ্রহ করেন। তাকে সর্বকালের সেরা ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। হবস ৬২টি টেস্ট ম্যাচে ৫৬.৯৪ গড়ে ৫,৪১০ রানও করেছিলেন, যার মধ্যে ছিল ১৫টি টেস্ট শতরান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ১৯৯টি শতরানের রেকর্ড এখনও অক্ষত রয়েছে। আধুনিক ক্রিকেটের গতি ও সূচি বিবেচনায় নিলে এই রেকর্ড ভাঙা অত্যন্ত কঠিন।
advertisement
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকালের সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪–এর বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী। তার প্রায় ২০ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ব্র্যাডম্যান ৫২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন এবং ২৯টি শতরানসহ মোট ৬,৯৯৬ রান করেছেন। তিনি ১২টি দ্বিশতকও হাঁকিয়েছিলেন, যা আজও এক অটুট রেকর্ড। ১৯৩০ সালে তিনি একটি মাত্র টেস্ট সিরিজেই ৯৭৪ রান করেছিলেন, যা আরেকটি অসাধারণ রেকর্ড। এই কীর্তি যে কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষেই কল্পনার বাইরে। ক্রিকেটের বদলে যাওয়া চরিত্র—যেখানে এখন ছোট ফরম্যাটের আধিক্য এবং খেলোয়াড়দের উপর বাড়তি শারীরিক ও মানসিক চাপ রয়েছে—এসব বিষয় বিবেচনা করলে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড় ক্রিকেট ইতিহাসে এমন এক রেকর্ড বলে মনে হয়, যা ভাঙা প্রায় অসম্ভব।
advertisement
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার উইলফ্রেড রোডস টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক করা সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়। ১৯৩০ সালের এপ্রিল মাসে, কিংস্টনের সাবিনা পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলতে নামার সময় তার বয়স ছিল ৫২ বছর ১৬৫ দিন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, রোডস তার টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন নিচের দিকে ব্যাটিং করে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি নিজেকে একজন ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
advertisement
অস্ট্রেলিয়ার জেসন গিলেস্পির নামে টেস্ট ক্রিকেটে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে খেলা সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড রয়েছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সফরে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত একটি টেস্ট ম্যাচে তিনি এক ইনিংসে অপরাজেয় ২০১ রান করেছিলেন। এই অসাধারণ ইনিংসটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাট করা কোনো খেলোয়াড়ের করা সর্বোচ্চ স্কোর। গিলেস্পি এই দ্বিশতকটি করেছিলেন ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে, যেখানে তিনি মাইকেল হাসির সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ ৩২০ রানের জুটি গড়ে তুলেছিলেন।
advertisement
ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি বাঁহাতি স্পিনার হেডলি ভেরিটির বোলিং রেকর্ড আজও অটুট রয়েছে। ইয়র্কশায়ারের এই বোলার ১৯৩২ সালের জুলাই মাসে হেডিংলিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই ঐতিহাসিক কীর্তি গড়েছিলেন। নটিংহ্যামশায়ারের বিরুদ্ধে এক ইনিংসে ভেরিটি ১৯.৪ ওভারে ১৬টি মেডেন ওভার করেন এবং মাত্র ১০ রান দিয়ে ১০টি উইকেট নেন। এই দুর্দান্ত বোলিং স্পেলে এমন একটি পর্যায় ছিল, যখন তিনি মাত্র ১৫ বলের মধ্যে ৭টি উইকেট তুলে নেন, যার মধ্যে একটি হ্যাটট্রিকও ছিল। মাত্র ১০ রান দিয়ে ১০ উইকেট নেওয়া আজও বোলিংয়ের নিখুঁততার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আধুনিক ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে এই কীর্তি প্রায় অসম্ভব বললেই চলে।







