বিমানবন্দর থেকেই শুরু হয়েছিল এক প্রেম কাহিনী। কোঁকড়ানো ঝাঁকড়া চুলের নিষ্পাপ মুখের মিষ্টি একটা ছেলেকে দেখামাত্রই তার প্রেমে পড়েছিলেন প্রায় বছর ছয়েকের বড় সুন্দরী যুবতী। প্রথমে ছেলেটি লজ্জা পেলেও যুবতী কিন্তু হাল ছাড়েননি। অবশেষে প্রেমে ধরা দেন ছেলেটিও। তত দিনে অবশ্য বাইশ গজের দুনিয়ায় নিজের নাম করে ফেলেছে কোঁকড়া চুলের ওই কিশোর। আর এভাবেই শুরু হয়েছিল সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে অঞ্জলি মেহতার প্রেমকাহিনী। বর্তমানে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার গড়েছেন তাঁদের। তবে সচিন আর অঞ্জলির সেই প্রেমকাহিনী আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে।
দু’জনের প্রথম দেখা হয়েছিল সেই ১৯৯০ সালে। সচিনের বয়স তখন সবেমাত্র ১৭। আর অঞ্জলি তখন বছর তেইশের যুবতী। সদ্য ইংল্যান্ড সফর সেরে বিমানবন্দরে নেমেছিলেন সচিন। আর সেই সময় মাকে নিতে বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন অঞ্জলিও। সেখানেই প্রথম বার চার চোখের মিলন ঘটে। যদিও সচিন তেন্ডুলকর আসলে কে, সেটা জানতেন না অঞ্জলি। একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি। অঞ্জলির কথায়, “আমি তখনও জানতাম না যে, সচিন তেন্ডুলকর কে এবং তিনি কী করেন! আমার সঙ্গে এক বন্ধু ছিলেন। তিনি জানান যে, উনি আসলে ক্রিকেট তারকা সচিন তেন্ডুলকর। আর তিনি ইতিমধ্যেই সেঞ্চুরিও হাঁকিয়ে ফেলেছেন। এতে অবশ্য আমার কিছু আসে-যায়নি। বরং ছেলেটিকে আমার বেশ কিউট লেগেছিল।”
অঞ্জলি আরও জানিয়েছেন, ওই সময় পরিস্থিতি এমন হয় যে, মা-কে নেওয়ার কথাই ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। সচিনের পিছনে রীতিমতো চিৎকার করতে করতে ছুটতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সচিন ভীষণই লাজুক ছিলেন। এক বার চোখ তুলে শুধু অঞ্জলির দিকে তাকিয়েছিলেন। আসলে খুবই লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলেন সচিন। কারণ সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই দাদাও। এদিকে একটা মেয়ে তাঁর নাম ধরে চিৎকার করছেন, ফলে সব মিলিয়ে সচিনও বেশ আতান্তরেই পড়েছিলেন। মাথা নিচু করে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে উঠে বসেছিলেন।
এ তো না হয় গেল বিমানবন্দরে প্রথম দেখার কথা। এখানেই হয়তো প্রেমের গল্পটা শেষ হতে পারত। কিন্তু হাল ছাড়েননি অঞ্জলি। সচিনের ফোন নম্বর খুঁজে বার করে তাঁকে ফোন করেছিলেন অঞ্জলি। সৌভাগ্যবশত ফোন তোলেন খোদ লিটল মাস্টারই। অঞ্জলি তখন জানান যে, বিমানবন্দরে তাঁদের দেখা হয়েছিল। উল্টো দিক থেকে সচিন জানান, সে কথা মনে আছে তাঁর। এর পর অঞ্জলি মজা করে একটা প্রশ্ন করেছিলেন, বলা ভাল, সচিনের স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নিয়েছিলেন। লিটল মাস্টারকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, বিমানবন্দরে তিনি কী রঙের পোশাক পরে গিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য সঠিক জবাব দিয়ে সচিন জানান, ওই দিন অঞ্জলি কমলা রঙা টি-শার্টে এসেছিলেন। আর এই ফোন কলের পরেই আক্ষরিক অর্থে প্রেম কাহিনী শুরু হয় তাঁদের।
শোনা যায়, বাইশ গজের দাপুটে নায়ক কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে খুবই লাজুক ছিলেন। নিজের পরিবারের সঙ্গে প্রেমিকাকে কীভাবে পরিচয় করিয়ে দেবেন, তা নিয়ে বেশ চাপেই ছিলেন তিনি। এর পর নিজেই একটি ফন্দি আঁটেন। তার জন্য তিনি অঞ্জলিকে সাংবাদিক সেজে তাঁর বাড়িতে যেতে বলেন। এদিকে অঞ্জলি আবার পেশায় চিকিৎসক। কিন্তু সচিনকে পেতে মরিয়া অঞ্জলিও সালোয়ার-কামিজে সাংবাদিকের ছদ্মবেশ ধরে সেখানে উপস্থিত হন। কিন্তু একটি চকোলেট তাঁদের সমস্ত পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছিল।
আসলে অঞ্জলি যখন সাংবাদিক সেজে সচিনের বাড়ি যান, সেই সময় কিছু একটা গণ্ডগোলের আঁচ পেয়েছিলেন সচিনের বউদি। কারণ তিনি সচিনকে চকোলেট উপহার দেওয়ার বিষয়টা দেখে ফেলেছিলেন। তখন সচিনের বউদি অঞ্জলির কাছে তাঁর সঠিক পরিচয় জানতে চান। আর এভাবেই পরিবারের সামনে আসেন সচিনের প্রেমিকা। ফলে এখান থেকেই যেন অন্য খাতে বইতে শুরু করে দুজনের সম্পর্ক।
অঞ্জলি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, তাঁদের দেখা হওয়া প্রেম - এই সব কিছুই আগে থেকেই ভাগ্যের খাতায় লেখা ছিল। কারণ এর আগেও দুবার সচিনের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। আসলে তাঁর বাবাই এক বার ইংল্যান্ডে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে সচিনের পরিচয় করাতে চেয়েছিলেন। তবে ক্রিকেটে তেমন আগ্রহ না-থাকায় অঞ্জলি আর পরিচয় করতে চাননি। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “সেই সময় যদি আমি ওকে দেখতাম, তাহলে ওর মাত্র ১৫ বছর বয়সেই আমি প্রেমে ওর পড়ে যেতাম!”