Saikhom Mirabai Chanu : কানেও অলিম্পিক, চিত্রাঙ্গদার ভূমির অতীত কাঠকুড়ুনিই এখন দেশের ক্রীড়ামানচিত্রের সম্রাজ্ঞী

চিত্রাঙ্গদার ভূমির মেয়ের প্রথমে শখ ছিল তিরন্দাজিতেই ৷ কিন্তু জীবন তার জন্য ভেবে রেখেছিল অন্য কিছু ৷ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে উঠে আসা মণিপুরীকন্যা সইখোম মীরাবাঈ চানু বিশ্বক্রীড়ার মানচিত্রে নতুন করে লিখলেন ভারতের ইতিহাস ৷ ইম্ফলের নংপক কাকচিঙে মেইতেই সম্প্রদায়ের এক পরিবারে চানুর জন্ম ১৯৯৪ সালের ৮ অগাস্ট ৷ শৈশবেই বোঝা গিয়েছিল তাঁর সাহস ও শক্তির প্রমাণ ৷ ১২ বছরের চানু বন থেকে অনায়াসে মাথায় বিশাল কাঠপাতার বোঝা চাপিয়ে ফিরে আসতেন বাড়িতে ৷ সে সময় অত ভারী বোঝা তুলতে পারতেন না তাঁর দাদাও ৷ মেয়ের সম্ভাবনার কথা বুঝতে পেরে চানুর বাবা মা-ই তাঁকে উৎসাহিত করেন ভারোত্তোলনে ৷ ইম্ফলের খুমান লাম্ফাক স্টেডিয়ামের পর স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা সাই ৷ পরবর্তী গন্তব্য ছিল পাতিয়ালা ৷ দেশের মধ্যে ভারোত্তোলনের দুনিয়ায় নিজের জায়গা তৈরির পর চানুর পাখির চোখ ছিল আন্তর্জাতিক মঞ্চ ৷ ২০১৪ সালে কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জয় করেন বিজয় শর্মা ও অ্যারন হরশ্চিং-এর ছাত্রী ৷ চার বছর পর আর রুপো নয় ৷ কমনওয়েলথ থেকে দেশকে উপহার দেন স্বর্ণপদক ৷ তার আগে ২০১৭ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও তাঁর গলাতেই শোভা পেয়েছিল স্বর্ণপদক ৷ গত বছর তাসখন্দে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল ব্রোঞ্জ পদকেই ৷ ৫ বছর আগেই চানুর কাছ থেকে অলিম্পিক পদক আশা করেছিলেন প্রশিক্ষকরা ৷ অসাধারণ ছন্দে থাকা চানু বহু সাড়া জাগিয়েও ব্যর্থ হন ২০১৬-র রিও অলিম্পিকে ৷ সে বার ক্লিন ও জার্ক বিভাগে ওজন তুলতে ব্যর্থ হন চানু ৷ মাত্র এক বার ভার বহন করতে পেরেছিলেন স্ন্যাচে ৷ ফলে রিও অলিম্পিকে চানুর নামের পাশে লেখা ছিল তিনি প্রতিযোগিতা অসম্পূর্ণ রেখে গিয়েছেন ৷ শেষ করতে পারেননি ৷ গত পাঁচ বছর ধরে এই যন্ত্রণা তাঁকে ক্ষত বিক্ষত করেছিল ৷ মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে যোগ হয়েছিল শারীরিক আঘাত ৷ কোমরে চোট পেয়ে কার্যত প্রশ্নচিহ্ন বসে গিয়েছিল কেরিয়ারের মুখে ৷ কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি ৷ পোড়া ছাই থেকে পাখা মেলে উড়ে গিয়েছেন ফিনিক্স হয়ে ৷ ইতিমধ্যেই সম্মানিত হয়েছে পদ্মশ্রী ও রাজীব খেলরত্ন সম্মানে ৷ কিন্তু সবকিছু ভুলে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিলেন নিবিড় অনুশীলনে ৷ মানসিক আঘাত সামলাতে মনোবিদের সাহায্যও নিয়েছিলেন ৷ অতিমারিত্রস্ত পারিপার্শ্বিকও আমেরিকার সেন্ট লুইসে চানুর অনুশীলনে চির ধরাতে পারেনি ৷ অবশেষে একনিষ্ঠ অনুশীলনের ফল পেলেন ৷ টোকিয়ো অলিম্পিক্সে তিনি ছিলেন ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা একমাত্র প্রতিনিধি ৷ তাঁর হাত ধরেই দেশ পেল এ বারের প্রথম পদক ৷ মহিলাদের ৪৯ কেজি ভারোত্তোলন ক্যাটেগরিতে রুপো জিতলেন মীরা। প্রথম চেষ্টায় ৮৪ কেজি ওজন তোলেন। এর পর দ্বিতীয়বার তোলেন ৮৭ কেজি। তবে তৃতীয় চেষ্টায় ৮৯ কেজি তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। অন্যদিকে চিনের হোউ জিহুই ৯২ কেজি ওজন তুলে দেন। শেষ পর্যন্ত ১১৫ কেজি ওজন তোলেন ভারতের মীরবাঈ। তবে শেষ চেষ্টায় ১১৭ কেজি তুলতে তিনি ব্যর্থ হন। রুপো পান তিনি। চিনের হোউ জিহুই জেতেন সোনা। অলিম্পিকে ভারোত্তোলনে এই প্রথম ভারতের ঘরে রুপোর পদক এল। এর আগে ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে কর্নম মালেশ্বরী ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন। পঞ্চম ভারতীয় মহিলা ক্রীড়াবিদ হিসেবে অলিম্পিক্সে ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণপদক জয়ী হলেন মীরাবাঈ ৷ তাঁর আগে কর্ণম মালেশ্বরী ছাড়া এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন সাইনা নেহওয়াল, পিভি সিন্ধু এবং সাক্ষী মালিক ৷ দেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিলেন মীরাবাঈ চানু ৷ চিত্রাঙ্গদার মতো তিনি মণিপুরনৃপদুহিতা নন ঠিকই ৷ তবে দেশের ক্রীড়ামানচিত্রে তিনিই এখন সম্রাজ্ঞী ৷ পদকজয়ী চানুর কানের সোনার দুলও এখন চর্চিত ৷ সেখানেও শোভা পাচ্ছে অলিম্পিকের প্রতীক পাঁচটি রিং ৷

Saikhom Mirabai Chanu : কানেও অলিম্পিক, চিত্রাঙ্গদার ভূমির অতীত কাঠকুড়ুনিই এখন দেশের ক্রীড়ামানচিত্রের সম্রাজ্ঞী

ছবি

লেটেস্ট খবর