গল্প বলতে আর শুনতে আমার খুব ভাল লাগে। বলতেন মিলখা সিং। সেই মিলখা সিং যাঁর গোটা জীবনটাই একটা গল্পের মতো। কখনও সেই গল্প দুঃখ, দুর্দশায় ভরা। কখনও আবার সেই গল্পে সাফল্যের মোচড়। তবে গল্প গল্পই থেকেছে। তাঁর জীবন কখনও সাদামাটা হয়নি। জীবন প্রতিটা মোড়ে তাঁর জন্য কিছু না কিছু নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। মিলখা সিং সেই গল্পগুলোই বলতে চেয়েছিলেন। মানুষ কিন্তু তাঁকে ভুলতে বসেছিল। ভাগ্যিস, একখানা বায়োপিক এই দেশের মানুষকে ভুলতে দেয়নি।
চোখের সামনে মা, বাবা, ভাই, বোন, গ্রামবাসীদের মৃত্যু দেখেছেন। তখন মিলখার ১১ বছর বয়স। দেশভাগ দেখেছেন। হিন্দুস্থান-পাকিস্তান বিভাজনের সময় ট্রেনের ছাদে বসে চলে এসেছিলেন। এর পর ছোরা হাতে ছিনতাই করেছেন। জেল খেটেছেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সত্ পথে উপার্জন করতে হবে। তার পরই সেনায় চাকরির আবেদন করেন। সেনায় যোগ দিয়ে প্রথম ট্র্যাকে নামেন। প্রথম দৌড় এক গ্লাস দুধের জন্য।
দৌড়ে প্রথম দশ জন এক গ্লাস করে দুধ পাবে। মিলখা দুপা সম্বল করে ছুটেছিলেন। ক্রস কান্ট্রি দৌড়। মিলখা তখন জানতেনও না, ক্রস কান্ট্রি দৌড় আসলে কী! সেই দৌড় তাঁকে এমন সাফল্য এনে দিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ৮০টি দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন মিলখা। জিতেছেন ৭৬টি। মিলখা চাইতেন, এদেশে যেন দ্বিতীয় মিলখা সিং জন্মায়। জীবদ্দশায় সেটা দেখে যেতে পারেননি। আসলে এদেশে আর দ্বিতীয় মিলখা সিং জন্মাবে না। মিলখা সিং একজনই। যিনি ট্র্যাক ও জীবনের লড়াই একসঙ্গে জিতেছিলেন।
ছেলে জিব খেলাধূলায় আসুক, চাইতেন না মিলখা ও তাঁর স্ত্রী নির্মল। সেটা আর হয়নি। মিলখা বলতেন, লালা আমরনাথ বলেছিলেন, প্রতি ম্যাচে খেলে ২ টাকা করে পেতেন। আমি তো ওর থেকেও কম পেতাম। সেনা আমাকে তিনবার রিজেক্ট করেছিল। তখনও সুযোগ পেতে টাকা না হলে সুপারিশ লাগত। আমার কোনওটাই ছিল না। তবে এটাও ঠিক, সেনায় যোগ না দিলে আমি মিলখা সিং হতে পারতাম না। সেনায় যোগ দিয়েছিলাম বলেই কোচ, ট্রেনিং পেয়েছিলাম। আমি তো খালি পায়ে দৌড়াতাম। অলিম্পিক, এশিয়ান কী তাও জানতাম না।
১৯২৯ সালে পাকিস্তানের গোবিন্দপুরায় জন্ম হয়েছিল মিলখার। দেশপ্রেম ছিল মনে। আর খেলাধূলার প্রতি প্রবল টান। পরবর্তীতে দুটোই মিলেমিশে একাকার। তাঁর স্ত্রী নির্মলও জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়িকা ছিলেন। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে স্ত্রীকে পাশে পেয়েছেন মিলখা। তাই হয়তো স্ত্রীকে ছেড়ে সাতটা দিনও এই স্বার্থপরের দুনিয়ায় মন টিকল না তাঁর।