গান্ধিজি'র লবণ সত্যাগ্রহে বাংলার প্রথম শহিদ কারা জানেন? এই দুই তরুণের কথা আপনারও অজানা

Last Updated:
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী পটাশপুরও সেই আন্দোলনের সক্রিয় অংশীদার হয়েছিল। এখানকার মানুষ লবণ উৎপাদনের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত থাকায়, এই অঞ্চলে ব্রিটিশের লবণ আইন বিরোধিতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতার জন্য পটাশপুরের মানুষের এই দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই তরুণ শহিদের আত্মত্যাগের কাহিনী
1/6
সেটা ১৯৩০ সালের উত্তাল সময়। মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন। ব্রিটিশদের লবণ আইন ভেঙে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ডাক সারা দেশে এক নতুন জাগরণের সৃষ্টি করে। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী পটাশপুরও সেই আন্দোলনের সক্রিয় অংশীদার হয়েছিল। এখানকার মানুষ লবণ উৎপাদনের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত থাকায়, এই অঞ্চলে ব্রিটিশের লবণ আইন বিরোধিতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতার জন্য পটাশপুরের মানুষের এই দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই তরুণ শহিদের আত্মত্যাগের কাহিনী। যা আজও এলাকার ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায় হিসাবে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে।[ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি]
advertisement
2/6
১৯৩০ সালের ১ জুন, পটাশপুরের প্রতাপদিঘির পাড়ে লবণ সত্যাগ্রহের সমর্থনে আয়োজিত হয়েছিল এক বিশাল জনসমাবেশ। স্বাধীনতার স্বপ্নে উদ্দীপ্ত মানুষের সেই ভিড়ে উৎসাহ আর দেশপ্রেম ছিল প্রবল। সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাগমারি গ্রামের ২১ বছরের তরুণ রামকৃষ্ণ দাস ও শ্রীরামপুর গ্রামের ১৭ বছরের কিশোর কার্তিক মিশ্র। ব্রিটিশ প্রশাসন শান্তিপূর্ণ সেই সমাবেশ দমন করতে নিষ্ঠুর পথ বেছে নেয়। হঠাৎই পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এই দুই তরুণ। তাঁদের রক্তে প্রতাপদিঘির পাড় লাল হয়ে ওঠে। তারা বাংলার লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রথম শহিদ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।[ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি]
advertisement
3/6
পটাশপুরের প্রতাপদিঘি আজ শুধুমাত্র একটি জলাশয় নয়, বরং এটি স্বাধীনতা সংগ্রামের এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে অবস্থান করছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, দিঘিটির নামকরণ হয়েছিল রাজা প্রতাপচন্দ্র ভানের নামে। লবণ সত্যাগ্রহের সময় এই দিঘির পাড়েই রামকৃষ্ণ দাস ও কার্তিক মিশ্র ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। তাঁদের স্মৃতিকে অমর রাখতে পটাশপুরবাসী দিঘির ধারে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছেন। আজও এই দিঘি ও স্মৃতিসৌধ শুধু স্থানীয়দের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য প্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছে।[ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি]
advertisement
4/6
রামকৃষ্ণ ও কার্তিকের আত্মত্যাগ শুধু পটাশপুরের মানুষের নয়, সমগ্র ভারতের গর্ব। লবণ সত্যাগ্রহের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের সূচনালগ্নে এই দুই তরুণের আত্মত্যাগ আমাদেরকে স্বাধীনতার মূল্য মনে করিয়ে দেয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যের লড়াইয়ের জন্য বয়স বা অভিজ্ঞতা নয়, প্রয়োজন সাহস, দৃঢ়তা ও দেশপ্রেম। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তাঁদের এই বীরত্বগাথা তরুণদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে।[ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি]
advertisement
5/6
তবে দুঃখের বিষয় হল প্রতাপদিঘির এই ঐতিহাসিক ঘটনা যেন অনেকটাই অন্তরালে চলে গিয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্য অনেক ঘটনার মত জাতীয় পর্যায়ে এই আত্মত্যাগের কাহিনী সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। যদিও এর তাৎপর্য অপরিসীম, তবুও এটি অনেকের কাছে অজানা রয়ে গেছে। ইতিহাসের এই গৌরবময় অধ্যায়কে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি, যাতে নতুন প্রজন্ম এই সত্য জানতে পারে এবং স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে এই আত্মত্যাগের মূল্য বুঝতে পারে।[ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি]
advertisement
6/6
স্থানীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ক লেখক-গবেষক গোলকেশনন্দ গোস্বামী বলেন, পটাশপুরের প্রতাপদিঘির ঘটনাটি আমাদের ইতিহাস বইতে সেভাবে জায়গা পায়নি। কিন্তু এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। রামকৃষ্ণ দাস এবং কার্তিক মিশ্রের মত তরুণরা যে সাহস সেদিন দেখিয়েছিলেন, তা আজকের দিনে কল্পনাতীত। আমি মনে করি, এই বীরদের স্মৃতিকে সঠিকভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নতুন প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস পৌঁছে দিতে পারলে তাঁরা দেশের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হবেন। এই স্থানটিকে যথাযথ সম্মান দেওয়া উচিত, কারণ এটি শুধু পটাশপুরের নয়, সমগ্র দেশের গর্ব।[ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি]
advertisement
advertisement
advertisement