Teacher: নিজের বাড়িতে পড়ুয়াদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত, সন্তানের মতো লালন-পালন! শিক্ষক দিবসের ‘এই’ শিক্ষকের কর্মকাণ্ড জানলে স্যালুট না জানিয়ে থাকতে পারবেন না
- Published by:Madhab Das
- hyperlocal
- Reported by:Madan Maity
Last Updated:
নিজের বাড়ির দোতালায় ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। পরিবার সহ তাঁদের দেখাশোনা করতেন যেন নিজের সন্তানের মতো। তাঁর বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে বহু ছাত্র-ছাত্রী আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
কাঁথির প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়ই, নিজের বাড়ির দোতালায় ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। পরিবার সহ তাঁদের দেখাশোনা করতেন যেন নিজের সন্তানের মতো। তাঁর বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে বহু ছাত্র-ছাত্রী আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। যাদব মাঝি আমেরিকায় গবেষণা করছেন, পিন্টু মাইতি আইআইটি খড়গপুরে পিএইচডি করছেন, বুদ্ধদেব মণ্ডলের লক্ষ্য ডব্লিউবিসিএস। এঁদের মতো আরও অনেকে চাকরিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। বসন্তবাবুর মানবিক উদ্যোগই ছাত্রদের জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে। শিক্ষক দিবসকে সামনে রেখে তাঁর এই মহৎ মানবিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে বহু মানুষ। (তথ্য ও ছবি : মদন মাইতি)
advertisement
শুধু পড়াশোনা নয়, দুর্যোগের সময়ও মানুষের পাশে থেকেছেন বসন্তকুমার। করোনার লকডাউনে অসহায় মানুষদের সাহায্য করেছেন। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ২০ দিন ধরে খাবার জুগিয়েছিলেন তিনি। পরে পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও শুভানুধ্যায়ীরা। বড় মেয়ে মিমোসা, তখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি, বাবার উদ্যোগে কলকাতার বন্ধুদের নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ছাত্রদের ও সমাজের পাশে দাঁড়ানোই তাঁর জীবনের অঙ্গীকার।
advertisement
কাঁথির নয়াপুট সুধীর কুমার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বসন্তবাবু এনএসএস ও এনসিসি ইউনিটকে সক্রিয় করেছেন। ২০১০ সালে শৌলা পার্শ্ববর্তী রঘুসর্দারবাড় জলপাই গ্রামকে দত্তক নেন। সেখানকার শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব নিয়েছেন। গ্রামে স্বাস্থ্যশিবির, প্লাস্টিক বিরোধী প্রচার, নাবালিকা বিয়ে প্রতিরোধ, বিপর্যয় মোকাবিলা প্রশিক্ষণ, সচেতনতা কার্যক্রম—সবই তাঁর নেতৃত্বে হয়েছে। করোনা কালেও শিক্ষা সচল রাখতে নিরলস ছিলেন তিনি।
advertisement
কিন্তু তাঁর নিজের পড়াশোনার পথ ছিল দারিদ্রের কারণে অনিশ্চিত। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে পারেননি। প্রতিবেশী শিক্ষক সত্য জেঠুর উৎসাহে পড়া চালিয়ে যান। গোপালপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল মাইতির সহায়তায় উচ্চ মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় বাবার বিরোধিতা ও আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও নাছোড় বসন্ত ফর্ম পূরণ করেন। আত্মীয়দের সামান্য সাহায্যে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে গ্রামে ফিরে যেতে হয় তাঁকে।
advertisement
ঠিক সেই সময় এসএফআই নেতা গোপাল প্রামাণিক তাঁকে উৎসাহ দেন ছাত্র সংসদে যোগ দিতে। হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা হয়, টিউশন করে নিজের খরচ চালাতেন। ১৯৯০ সালে শূন্য হাতে ঘর ছাড়লেও ১৯৯৬ সালে তিনি ফিরে আসেন শিক্ষকতার চাকরির স্থায়ী নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে। নিজের জীবনের লড়াই তাঁকে শিখিয়েছে দারিদ্র কোনও বাধা নয়, যদি পাশে থাকে সহমর্মিতা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি। সেই শিক্ষা আজ তিনি ছাত্রদের দিয়ে যাচ্ছেন।
advertisement