Strait of Hormuz: ইরান ‘হরমুজ প্রণালী’ বন্ধ করে দিলে ভারত কি সমস্যায় পড়বে? তার আগে জেনে নিন হরমুজ প্রণালী কী এবং এর তাৎপর্যই বা কী?
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
What is the Strait of Hormuz and why is it so significant: এমনকী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অয়েল ফিউচার্স প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি এ-ও আশঙ্কা যে, হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচল ব্যাহত করে ইরান প্রতিশোধ নিতে পারে।
ইরানের উপর হামলা জারি রেখেছে ইজরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এখনও পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহে কোনও বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেনি। তবে এই ঘটনা বিনিয়োগকারীদের প্রচণ্ড বিচলিত করেছে। এমনকী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অয়েল ফিউচার্স প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি এ-ও আশঙ্কা যে, হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচল ব্যাহত করে ইরান প্রতিশোধ নিতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির দিক থেকে দেখতে গেলে এমন কয়েকটি জায়গা রয়েছে, যেগুলি কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পারস্য উপসাগর এবং ওমান উপসাগরের মধ্যবর্তী স্থলে অবস্থিত এই জলপথটি তার সবথেকে সংকীর্ণ স্থানে মাত্র ২১ মাইল প্রশস্ত। আর সবথেকে বড় কথা হল, তেলসমৃদ্ধ পারস্য উপসাগর থেকে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে অপরিশোধিত তেল পরিবহণের এটিই একমাত্র উপায়। এর উত্তর দিকটি নিয়ন্ত্রণ করে ইরান।
advertisement
এদিকে ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিগুলিতে আমেরিকা বিমান হামলা চালানোয় পশ্চিম এশিয়া জুড়ে অশান্তির পরিবেশ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তবে এই উত্তেজনার মধ্যে যদি ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এই উত্তাপের প্রভাব কিন্তু কোনও সরাসরি এসে পড়বে না ভারতের উপরে। কারণ ইন্ড্রাস্ট্রির আধিকারিক এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, ভারত তার তেল আমদানির উৎস এবং বিকল্প উৎসগুলিতে অবশ্য বৈচিত্র্য এনেছে। তাই যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধও করে দেওয়া হয়, তাহলে রাশিয়া থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের মতো বিকল্প উৎসগুলি থেকে আমদানি করে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবে ভারত। তাই প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, হরমুজ প্রণালী কী এবং এর তাৎপর্যই বা কী!
advertisement
হরমুজ প্রণালী এবং এর তাৎপর্য: হরমুজ প্রণালী হল বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ। এর মাধ্যমেই তেলের ভাণ্ডার পারস্য উপসাগর বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ এই জলপথ দিয়েই যায়। এই উপসাগরের উত্তর দিকটা নিয়ন্ত্রণ করে ইরান। মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল অর্থাৎ দৈনিক বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এই প্রণালী দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যা এই প্রণালীটিকে ক্রিটিক্যাল অয়েল চোকপয়েন্ট বানিয়ে তুলেছে।
advertisement
Refinitiv ডেটা থেকে জানা যাচ্ছে যে, রবিবার সন্ধ্যায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক ঘাঁটিতে মার্কিন বিমান হামলার পরে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে ৮০ ডলারের উর্ধ্বে উঠে গিয়েছে। জানুয়ারির পর এটাই প্রথম হল। কিন্তু ইউরোপীয় এবং মার্কিন বাজারে সোমবারের ট্রেডিংয়ে ব্রেন্ট এবং মার্কিন বেঞ্চমার্ক WTI ৬ শতাংশেরও বেশি নেমে এসেছে। যার ফলে দাম কমে ৭১ ডলারের নীচে চলে গিয়েছে। আসলে কাতার এবং ইরাকের মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরানের হামলার পরেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এবার তেলের দাম বাড়বে কি না, তা নির্ভর করছে ইরানের জবাবের উপর।
advertisement
এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম Tortoise Capital-এর সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার রব থামেল সিএনএন-এর কাছে জানিয়েছে যে, ইরান-নিয়ন্ত্রিত সমুদ্রপথে সম্ভাব্য ব্যাঘাতের ফলে তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ১০০ ডলারে পৌঁছে যেতে পারে। তাহলে ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় তিন বছরের মধ্যে এটিই হবে তেলের সর্বোচ্চ দাম। এদিকে ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পোস্ট করে লিখেছেন, “সকলে, তেলের দাম কমিয়ে রাখুন। আমি কিন্তু নজর রাখছি! আপনারা কিন্তু শত্রুর সঙ্গে খেলা করছেন। এটা করবেন না।”
advertisement
এই প্রণালী কি বন্ধ করে দেওয়া হবে: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেইনির এক বিশিষ্ট উপদেষ্টা ইতিমধ্যেই এই প্রণালী বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন যে, বিশ্ব অর্থনীতির ভাল স্বাস্থ্যের বজায় রাখার জন্য হরমুজ প্রণালীর কার্যকারিতা একেবারে অপরিহার্য। আমওয়াজ নিউজ আউটলেটের ইরান বিশেষজ্ঞ এবং এডিটর মহম্মদ আলি শাবানি সিএনএন-এর কাছে জানিয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচলের উপর ভৌগোলিক প্রভাব ইরানকে তেল বাজারে ধাক্কা দেওয়ার, তেলের দাম বৃদ্ধির, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির, এমনকী ট্রাম্পের অর্থনৈতিক কর্মসূচি ভেঙে ফেলার ক্ষমতাও প্রদান করে। এছাড়া এই প্রণালী বন্ধ করার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেশের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপর নির্ভর করছে। তবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট সোমবার হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে ইরানকে সাবধান করেছেন।
advertisement
advertisement
ভারতের জন্য কেন তাৎপর্যপূর্ণ হরমুজ প্রণালী: উত্তরে ইরান এবং দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে অবস্থিত হরমুজ প্রণালী সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে তেল রফতানির প্রধান পথ বা রুট হিসেবে কাজ করে। অনেক লিক্যুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি)-এর চালান, বিশেষ করে কাতার থেকে আসা চালান এই প্রণালী দিয়েই চলাচল করে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক এবং গ্রাহক দেশ ভারত তার প্রায় ৯০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে, যার ৪০ শতাংশেরও বেশি আমদানি পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি থেকে আসে, যার রফতানি হরমুজ প্রণালী দিয়ে পরিবহণ করা হয়। ভারত বিদেশে প্রায় ৫.১ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আনে, যা পরিশোধনাগারগুলিতে পেট্রোল এবং ডিজেলের মতো জ্বালানিতে রূপান্তরিত হয়।