সারা দুনিয়ায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা মনে বিস্ময় জাগায়। আর আমাদের দেশও তো তার ব্যতিক্রম নয়। কারণ ভারত তো বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। আসলে আমাদের দেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের মহামিলন ঘটেছে। আর এই দেশে রয়েছে নানা ধর্মের উপাসনালয়। যেখানকার আচার-নিয়মরীতি সবই আলাদা। কোথাও গাছগাছালির পুজো করা হয় তো, কোথাও বা পশুরাই ঈশ্বর জ্ঞানে পূজিত হয়ে থাকেন।
উত্তর প্রদেশের ঝাঁসিতে এমনই এক অভিনব মন্দিরের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। যার গায়ে লেখা রয়েছে ‘জয় কুতিয়া মহারানি মা’। আসলে এই মন্দিরের আরাধ্যা দেবী হলেন একটি কুকুর। শুনে হয়তো অনেকেই চমকে যাবেন। কারণ মন্দিরের বিষয়ে লোকমুখে প্রচলিত অদ্ভুত এক গল্প রয়েছে। সম্প্রতি এই মন্দিরের ছবি এবং এর কথা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তাহলে শুনে নেওয়া যাক, এই মন্দিরের গল্প।
সূত্রের খবর, আদতে উত্তর প্রদেশের ঝাঁসি জেলার মৌরানিপুর তহসিলে অবস্থিত মন্দিরটি। মৌরানিপুরের রেবান এবং কাকওয়াড়া গ্রামের সীমানায় রাস্তার ধারেই এটি তৈরি করা হয়েছে। সাদা রঙের একটি ছোট্ট বেদির মতো করে তৈরি করা হয়েছে মন্দিরটি। আর সেই মন্দিরেই স্থাপন করা হয়েছে একটি কালো কুকুরের মূর্তি। দুই গ্রামের মানুষই কুকুর মহারানির মন্দিরে আসেন। ভক্তি ভরে পুজো করেন এবং প্রণাম করেন। এভাবেই রীতি চলে আসছে।
এই মন্দির প্রসঙ্গে দুই গ্রামের মানুষের মুখেই শোনা গেল এই অদ্ভুত রীতির কাহিনী। গ্রামবাসীদের কথায়, এক সময় একটি কুকুর ছিল। সে দুটো গ্রামেই মিলিয়ে-মিশিয়ে থাকত। আর যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে খাবারের জন্য সেখানে পৌঁছে যেত সে। এক বার রেবান গ্রামে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। ভেরীর আওয়াজ শুনে সেখানে পৌঁছে যায় কুকুরটি। কিন্তু ততক্ষণে সমস্ত খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল। এর পর সে ফের কাকওয়াড়া গ্রামে যায় খাবার খোঁজে। কিন্তু সেখানেও খাবার মেলে না। অবশেষে খিদের জ্বালায় ক্লান্ত-শ্রান্ত কুকুরটির মৃত্যু হয়।
ওই এলাকায় বসবাসকারী ইতিহাস বিশেষজ্ঞ হরগোবিন্দ কুশওয়াহা বলেন, কুকুরটির মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন উভয় গ্রামের মানুষই। পরে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেবান এবং কাকওয়াড়া গ্রামের সীমানায় কুকুররের মৃতদেহটিকে কবর দেওয়া হয়। এর কিছু পরে সেখানে একটি মন্দিরও নির্মাণ করা হয়। আর এখনকার রীতি অনুযায়ী, আশেপাশের গ্রামে কোনও রকম অনুষ্ঠান হলেই গ্রামবাসীরা এই মন্দিরে গিয়ে খাবার নিবেদন করে আসেন।