Bashar Al Assad: চোখের ডাক্তার থেকে নৃশংস একনায়ক, গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের উত্থান ও পতন
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Bashar al-Assad From Doctor To Brutal Dictator: বাশার আল আসাদ পেশায় চক্ষু চিকিৎসক। তবে পৃথিবীকে দেখেছেন অন্য চোখে। লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন। সেখানেই ব্রিটিশ-সিরিয় বংশোদ্ভূত আসমার সঙ্গে আলাপ, প্রেম এবং বিয়ে। বাশারের বাবা হাফেজ আল-আসাদ ছিলেন সিরিয়ার একনায়ক।
বাংলাদেশের পর এবার সিরিয়া। গণ অভ্যুত্থানে পতন হয়েছে বাশার সরকারের। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন রাষ্ট্রপতি তথা একনায়ক বাশার আল-আসাদ (Bashar Assad)। তাঁর বাসভবনে ঢুকে তাণ্ডব করেছে সিরিয়াবাসী। ঠিক যেমনটা বাংলাদেশে হয়েছিল। Photo: AP
advertisement
বাশার আল আসাদ পেশায় চক্ষু চিকিৎসক। তবে পৃথিবীকে দেখেছেন অন্য চোখে। লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন। সেখানেই ব্রিটিশ-সিরিয় বংশোদ্ভূত আসমার সঙ্গে আলাপ, প্রেম এবং বিয়ে। বাশারের বাবা হাফেজ আল-আসাদ ছিলেন সিরিয়ার একনায়ক। অনেকেই বলেন, নৃশংসতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২০০২ সালে তাঁর কুর্সিতেই বসেন বাশার। Photo: AP
advertisement
সিরিয়ার তখন বেহাল দশা। দাঙ্গাবিধস্ত একটা দেশ। চাকরি নেই, বাসস্থান নেই, একমুঠো অন্নের জন্য হাহাকার। কুর্সিতে বসেই পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির চেষ্টা করেন বাশার। বোঝাতে চান, তাঁর নেতৃত্বে এক অন্য সিরিয়া দেখবে বিশ্ববাসী। শুরু হয় জনসংযোগ। বিলাসবহুল প্রাসাদে থাকতেন। কিন্তু নিজেকে এমনভাবে পেশ করতেন, যেন তিনি খুব সাধারণ একজন। Photo: AP
advertisement
রাজনীতির কারবারিরা বলেন, বাশার আল-আসাদ ছিলেন বাবার মতোই উচ্চাকাঙ্খী। অনেকটা জর্ডনের রাজপরিবারের ঢংয়ে সিরিয়াতে পিতৃতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তবে আরও মসৃণ আরও সুশৃঙ্খলভাবে। Photo: AP
advertisement
আসাদ পরিবারের একনায়কতন্ত্রের অর্ধ-শতাব্দীর নাটকীয় সমাপ্তি হয়েছে। বাইশ বছর পর গদিচ্যুত হয়েছেন আশাদ। তবে সিরিয়ায় নিছক গণঅভ্যুত্থান হয়নি, এর পিছনে কলকাঠি নেড়েছে আল-কায়দার একটি শাখা সংগঠন। মধ্যপ্রাচ্যে এবার অনেক ওলটপালট হবে। বেশ কিছু দেশের মানচিত্রও বদলে যেতে পারে বলে অনুমান করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। Photo: AP
advertisement
বাবা-ছেলের শাসনে সিরিয়া: অনেকেই বাশারের সঙ্গে লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মর গদ্দাফির মিল পান। হাট-বাজার, মুদিখানা, চায়ের ঠেক, সর্বত্র গোয়েন্দা এজেন্ট। তাঁদের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জো নেই। বাশার অর্থনৈতিক সংস্কার করতে চেয়েছিলেন। তাঁর মতে, আগে দেশের আর্থিক উন্নতি দরকার, তারপর রাজনৈতিক সংস্কার হবে। বেশ কিছু পদক্ষেপও নেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের তাতে কোনও লাভ হয়নি। বাশার ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীই ক্ষীর খেয়ে যান। Photo: AP
advertisement
ধীরে ধীরে বিশ্ব বোঝে, বাশার অবিকল তাঁর বাবার মতোই। একইরকম একনায়ক। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখাতেই যাঁর আগ্রহ। আর সামরিক বাহিনীই তাঁর সেই ক্ষমতার উৎস। বিশেষ করে বিমান বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ক্ষমতায় এসেই রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে শুরু করেছিলেন বাশার। এই তালিকার বেশিরভাগই ছিলেন বামপন্থী। বাশার পশ্চিমা বিশ্বকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, সিরিয়ায় পরিবর্তন হচ্ছে। Photo: AP
advertisement
আসলে এটা ছিল ‘আইওয়াশ’। আসাদ পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই সেই গ্রেফতারি, সেই নির্যাতন। একেবারে তাঁর বাবার জমানায় যেমনটা হত। সবকিছু সেরকমই চলতে থাকে। এর মধ্যেই সামনে আসে সেডানায়া জেলের ঘটনা। ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় ১৩ হাজার বন্দীকে। এই ঘটনা বাশারের মুখোশ খুলে দেয়। Photo: AP
advertisement
ক্ষমতায় বসার পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিজের ভাবমূর্তি উদ্ধারের সবরকম চেষ্টা করেছিলেন বাশার। স্ত্রী আসমা ছিলেন জেপি মর্গ্যানের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনে তাঁকে নিয়ে বড় নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল। সেখানে তাঁকে বলা হয়েছিল “মরুভূমির গোলাপ”। কিন্তু সেডানায়ার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, বাশার তাঁর বাবার চেয়েও ভয়ঙ্কর। মরুভূমিতে গোলাপ তো দূরের কথা কোনও ওয়েসিস-ও নেই। Photo: AP
advertisement
বাশারের বাবা হাফেজ ছিলেন সিরিয়া বিমান বাহিনীর কর্তা। ১৯৬৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারীদের একজন। তাঁর হাত ধরেই সিরিয়ায় বার্থ পার্টি ক্ষমতায় আসে। শাসন যাতে আসাদ পরিবারের হাতেই থাকে, তার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন হাফেজ। বাশার আলাদা ছিলেন না। তিনি সেগুলোকেই এগিয়ে নিয়ে যান। Photo: AP
advertisement
১৯৬৬ সালে তথাকথিত দাঙ্গার সময় হাফেজ যে নীতি নিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে সেগুলোই হয়ে উঠেছিল আসাদ পরিবারের শাসনের মূলমন্ত্র। যে কোনও বিরোধিতাকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে, তার জন্য যদি গণহত্যা চালাতে হয়, কুছ পরোয়া নেহি। Photo: AP
advertisement
আরেকটা অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে সিরিয়ার ক্ষমতা সম্পূর্ণ কুক্ষিগত করেন হাফেজ। নিজের গোষ্ঠীর আলাওয়াইতদের পুলিশে নিয়োগ করতে শুরু করেন। সিরিয়া ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে পুলিশ রাষ্ট্র। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি মুসলিম ব্রাদারহুড বিদ্রোহ শুরু হয়। দমনপীড়ন চালু করেন হাফেজ। নির্যাতন, হত্যা কিছুই যাদ যায়নি। Photo: AP
advertisement
মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাদের পরিবারের সদস্যদের পর্যন্ত খুঁজে খুঁজে খুন করে হাফেজের পুলিশ। ১৯৮২ সালে স্থল এবং বায়ু পথে দেশবাসীর উপরেই হামলা চালান হাফেজ। যা ‘হামা গণহত্যা’ নামে পরিচিত। এতে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর ভাই মাহিরও ছিলেন একই রকমের নিষ্ঠুর। Photo: AP
advertisement
আরব বসন্ত: সিরিয়ার কুর্সিতে বসার কথা ছিল হাফেজের বড় ছেলে বাসেলের। ১৯৯৪ সালে একটি গাড়ি দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। তখন ডাক পড়ে বাশারের। বাশার সেই সময় লন্ডনে। রাজনীতিতে তাঁর কোনও আগ্রহও ছিল না। হাফেজ তাঁকে সিরিয়ায় নিয়ে আসেন। তারপর হাতে ধরে শেখান ‘শাসন’ কীভাবে করতে হয়। Photo: AP
advertisement
তিনি বাবার থেকে আলাদা। হলিউডের সিনেমা দেখেন। দামাস্কাসের রেস্তোরাঁয় খান। এভাবেই সিরিয়াবাসীর সামনে নিজেকে পেশ করেন বাশার। কিন্তু সিরিয়াবাসীর মন গলেনি। ২০১১ সালে শুরু হয় আরব বসন্ত। আসাদ শাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে জনগণ। প্রথমদিকে খুচরো বিক্ষোভ। মার্চ নাগাদ তা জনবিপ্লবের রূপ নেয়। মাহেরের নির্দেশে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালায় সেনা। শুধু মাহেরের নির্দেশ নয়, এটাই ছিল সরকারি নীতি। বহু মানুষের মৃত্যু হয়। বাশারও সেই পথই নেন। দমনপীড়নকেই শাসকের অস্ত্র করে তোলেন তিনি। Photo: AP