কিছু না পেলে নিজেকেই নিজে গিলে খায় এই প্রাণী! কেন এই অদ্ভুত আত্মহনন? জানলে আপনি স্তব্ধ হয়ে যাবেন

সাপ দেখলেই আতঙ্কে গলা শুকিয়ে আসে অনেকের। হাত-পা কাঁপতে শুরু করে। জানেন, সেই সাপই কখনও কখনও নিজের শরীরকেই শিকার বানায়! হ্যাঁ, একেবারে সত্যি কথা — সাপ মাঝেমধ্যেই নিজেই নিজের লেজ কামড়ে খায় বা গিলে ফেলে। ঘটনাটা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এর পিছনে রয়েছে পরিষ্কার বৈজ্ঞানিক এবং জৈবিক ব্যাখ্যা।

বহু বছর ধরে এমন ছবি বা ভিডিও ইন্টারনেটে ঘোরাফেরা করছে, যেখানে সাপকে নিজের লেজ কামড়ে ধরতে বা গিলে ফেলতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই ভাবেন এটা বুঝি কোনও অলৌকিক বা মায়াবী ব্যাপার। কিন্তু বাস্তব বলছে, এর পেছনে রয়েছে সাপের শরীর, পরিবেশ উপলব্ধি, আর মানসিক অবস্থার প্রভাব।

সাপ একপ্রকার ঠান্ডা রক্তবিশিষ্ট প্রাণী (ectothermic)। এর মানে, তারা শরীরের তাপমাত্রা নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, বাইরে থেকে তাপ শুষে তা সাম্যাবস্থায় রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে এই সাম্যাবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে যায়, এমনকি নিজের লেজকেই খাদ্য ভেবে সাপ তা কামড়ে ফেলে।

এছাড়াও মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণেও সাপের আচরণ বদলে যায়। কেউ কেউ লুকিয়ে পড়ে, কেউ খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়, আবার কেউ কেউ নিজেই নিজের শরীর আক্রমণ করে বসে। এমনও হয়েছে, একটানা না খেয়ে সাপ এতটাই ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে যে যেকোনও নড়াচড়াকেই শিকার বলে ভুল করে — এমনকি নিজের লেজও।

কিছু প্রজাতির সাপ, যেমন কিং স্নেক বা মিল্ক স্নেক, অত্যন্ত খাদ্য-আগ্রাসী। ক্ষুধার তাড়নায় তারা নিজের লেজকেও চলমান কিছু ভেবে কামড়ে ধরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরণের আচরণ অনেক সময় ঘটে যখন আশেপাশে শিকার থাকে, কিংবা সাপ দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকে।

মস্তিষ্কে আঘাত, জন্মগত সমস্যা বা স্নায়বিক বিকলতা থাকলেও সাপ এমন আচরণ করতে পারে। এতে তার চলাফেরা, সংবেদনশীলতা, এবং আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। অনেক সময় এমন সাপকে নিজের লেজ অনুসরণ করতে বা নিজের শরীর কামড়াতে দেখা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি যে সব ভিডিও বা ছবি দেখেন, সেগুলো বানানো নয়। এমনটা সত্যিই ঘটে। কিন্তু তার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে সাপের তীব্র মানসিক চাপ, শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্যহীনতা, ক্ষুধা, অথবা স্নায়বিক সমস্যা। তাই সাপ যখন নিজের লেজ গিলে ফেলে, সেটা কোনও ভূতের গল্প নয় — সেটা শরীর ও মনস্তত্ত্বের একটি দুর্বল মুহূর্তের প্রতিফলন।