চিনের হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা শিশুদের দেওয়া হচ্ছে আইভি ড্রিপ; এটা কি আদৌ 'HMPV'? না কি এর পিছনে অন্য কোনও গল্প রয়েছে?
- Published by:Tias Banerjee
- trending desk
Last Updated:
China HMPV Virus: কারণ হাসপাতালগুলিতে ক্রমাগত রোগীর ভিড় বৃদ্ধির কারণ হল হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। আর অনেকেই এটাকে কোভিড ১৯-এর পুনরুত্থান বলে মনে করছেন।
advertisement
সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, দুর্বল অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছে শিশুরা। সকলের শরীরেই চলছে ইন্ট্রাভেনাস (আইভি) ড্রিপস। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের টেনশনও ফুটে উঠেছে ওই ভিডিওটিতে। আবার ছড়িয়ে পড়া কিছু কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের একাধিক ওয়ার্ডে উপচে পড়া ভিড়, রোগীদের লম্বা লাইন। সেই সঙ্গে প্রোটেক্টিভ গিয়ার পরে কাজ করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
advertisement
advertisement
আসলে চিনা স্বাস্থ্য পরিষেবার সংস্কৃতিটা একটু আলাদা। একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ছোটখাটো শরীর খারাপ হলেও চিনারা বড় হাসপাতালে যান এবং আইভি ড্রিপ চান। যেখানে ভারতীয়রা কোনও শারীরিক সমস্যা হলে প্রথমেই জেনারেল ফিজিশিয়ানদের কাছেই প্রথম যান। আসলে প্রবল ঠান্ডার কারণে একাধিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে সংক্রামক এই রোগে সংক্রমিত হচ্ছেন বহু মানুষই। যার জেরে বড় হাসপাতালগুলিতে ভিড় বাড়ছে রোগীদের।
advertisement
হাসপাতালে এমন উপচে পড়া ভিড় কেন? ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ হেলথ পলিসি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে প্রকাশিত একটি চিনা সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে যে, চিনের জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের (পিএইচসি) সামগ্রিক কর্মক্ষমতা অসন্তোষজনক রয়ে গিয়েছে। যে কোনও দেশের মেডিকেল পরিষেবার ক্ষেত্রে সবার প্রথম যোগাযোগ করা হয় পিএইচসি-র সঙ্গেই। বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্রমাগত এই পিএইচসি পরিষেবার উপর বিনিয়োগ করে গিয়েছে চিনা সরকার। তবে রোগীরা টার্শিয়ারি অথবা বড় হাসপাতালের দিকেই মনোনিবেশ করছেন।
advertisement
প্রকাশ করা নথি বলছে যে, চিনের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা ভয়ঙ্কর ভাবে ভেঙে পড়েছে। কারণ প্রাইমারি, সেকেন্ডারি এবং টার্শিয়ারি কেয়ারের মধ্যে সমন্বয় একেবারেই শোচনীয়। আর পারিবারিক চিকিৎসকদের ছাড়া প্রাইমারি হেলথকেয়ার ব্যর্থ হয়েছে। তারা আর বড় হাসপাতালগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারছে না। যার জেরে রোগীদের সরাসরি পৌঁছতে হচ্ছে টার্শিয়ারি হাসপাতলগুলিকে। ফলে অতিরিক্ত ভিড় বাড়ছে বড় বড় হাসপাতালগুলিতে।
advertisement
চিনে স্থানীয় চিকিৎসকরা কেন পসার জমাতে পারছেন না? পিএইচসি প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ চিকিৎসকের চিকিৎসা হচ্ছে, তার হার টার্শিয়ারি হাসপাতালগুলির তুলনায় তিন ভাগের মাত্র এক ভাগ। চিনা ওই গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, পারিবারিক চিকিৎসকদের সাধারণ সমস্যা হল রোগীর হারের ঘাটতি। সেই সঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে যে, রোগীর হার পর্যাপ্ত না হওয়ার ফলে পারিবারিক চিকিৎসকদের ক্ষমতার উন্নতি করা অত্যন্ত কঠিন।
advertisement
রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে, চিনের এক উন্নত শহরের স্থানীয় পিএইচসি ফেসিলিটিগুলি ৪৪.১১ শতাংশ আনস্টেবল অ্যাঞ্জিনা এবং অ্যাজমার স্ট্যান্ডার্ডাইজড রোগীর রোগ নির্ধারণ করতে পেরেছে সঠিক ভাবে। তবে সঠিক চিকিৎসার হার মাত্র ২৪.১৯ শতাংশ। আর সাংহাইয়ের রোগীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে আর একটি গবেষণা করা হয়েছিল। যেখানে দেখা গিয়েছে যে, পারিবারিক চিকিৎসকদের উপর রোগীদের বিশ্বাস খুবই কম। মাত্র ২৫.৩ শতাংশ রোগীই নিজেদের পারিবারিক চিকিৎসকের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছেন। যার জেরে বড় হাসপাতালগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে।
advertisement
advertisement
আবার চিনা সংস্কৃতিতে আইভি ড্রিপ নেওয়া একটা সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এমনটাই উঠে এসেছে বহু সমীক্ষাতেই। মেডিকেল জার্নাল বিএমজে-তে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়েছিল। যা লিখেছিলেন লিভার সার্জারি ডিপার্টমেন্টে কর্মরত এক চিনা নার্স। ওই সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল যে, ২০০৯ সালে ইনফিউশন ফ্লুইডের ১০.৪ বিলিয়ন বোতল সেবন করেছে গোটা দেশ। যার অর্থ হল, জনপ্রতি গড়ে আটটি বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে অন্যান্য দেশগুলিতে জনপ্রতি ২.৫ থেকে ৩টি বোতল ব্যবহৃত হয়।
advertisement
advertisement
advertisement
ডা. রাজীব জয়াদেবন ব্যাখ্যা করে বলেন যে, এমন বহু রোগী আছেন, যাঁরা নিজেরাই চিকিৎসকদের ওষুধ এবং ইঞ্জেকশন ও মাল্টিভিটামিন প্রেসক্রাইব করতে বলেন। এমনকী যদি তাঁদের কথামতো ওষুধ না লেখা হয়, কিংবা কোনও ওষুধ না দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়, তাহলে তাঁরা অনেক সময় চিকিৎসকের যোগ্যতার উপরেও প্রশ্ন তোলেন। চিনে তো সমস্ত রোগীই এমন। তাঁরা নিজেদের সন্তানদের জন্যও আইভি ড্রিপ খোঁজেন। আর চিকিৎসক তা না দিলে তাঁরা পরিষেবা নেই, এমন অভিযোগও তোলেন। সেই কারণে ছড়িয়ে পড়া এই সমস্ত আনভেরিফায়েড ছবি কিংবা ভিডিও কিন্তু আশঙ্ক করার জন্য যথেষ্ট নয়।