হিন্দু শাস্ত্রে যে কোনও শুভ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে চাঁদের হ্রাস এবং বৃদ্ধির উপরে নির্ভর করে, সেই মতো মাসের ১৫টি দিন নির্দিষ্ট করা হয় কৃষ্ণপক্ষ রূপে এবং বাকি ১৫টি দিন পরিচিতি পায় শুক্লপক্ষ হিসেবে। এই হিসেবে মাসে দু'টি চতুর্থী তিথি পাওয়া যায়। একটি শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি এবং অন্যটি কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথি। এর মধ্যে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিটি সঙ্কষ্টী চতুর্থী নামে পরিচিত। আর শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি বিনায়ক চতুর্থী বা গণেশ চতুর্থী নামে প্রসিদ্ধ।
সাধারণ ভাবে শুক্লপক্ষের গণেশ চতুর্থীতে চাঁদ দেখা বারণ। কেন না, এক পুরাণ মতে চাঁদের জন্যই একদন্ত হয়েছিলেন গজানন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের গণেশ খণ্ড বলে, একদা শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতেই গণেশ কুবেরের ভবন থেকে একটু বেশিই ভোজ খেয়ে মূষিক বাহনে চড়ে ফিরছিলেন কৈলাসে। পথে একটা সাপ তাঁর সামনে দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে গেলে বাহনটি ভয় পেয়ে এক দৌড় দেয় গণেশকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে!
আকাশ থেকে এই ঘটনা দেখে চন্দ্র অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন, তাঁর কলা হাসির চোটে বিক্ষিপ্ত হয়। তখন আর ক্রোধ সম্বরণ করতে না পেরে গণেশ নিজের একটা দাঁত ভেঙে নিয়ে ছুঁড়ে মারেন তাঁর দিকে। সঙ্গে এই অভিশাপও দেন- চন্দ্র কোনো দিনই আর পূর্ণ রূপে বিরাজ করতে পারবেন না। সেই থেকেই প্রতি পক্ষে চন্দ্রকলার হ্রাস এবং বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
কিন্তু পরে চন্দ্রদেব তাঁর কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হলে তাঁকে ক্ষমা করে দেন গজানন। সেই উপলক্ষ্যে কৃষ্ণপক্ষের এই বিশেষ গণেশ চতুর্থীতে তাঁর পাশাপাশি চাঁদকেও অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের গণেশ খণ্ডে স্বয়ং বিষ্ণু একদন্ত নামটির ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে এক অর্থ প্রধান আর দন্ত অর্থ বল! তাই যিনি প্রধান বলের উৎস এবং যিনি প্রধান বলে আমাদের বলীয়ান করে জীবনযাপনে সাহায্য করেন, তিনিই একদন্ত! তাই এই চতুর্থীতে গণেশের আরাধনায় বিপুল ক্ষমতা এবং সৌভাগ্যের অধিকারী হয় মানুষ।
পঞ্জিকা মতে আজ সারা দিন চতু্র্থী তিথি রয়েছে। তাই নিয়ম মতে সন্ধ্যাকালে গণেশের পূজা বিধেয়। হলুদ বা লাল রঙের বস্ত্র পরে, শুদ্ধ চিত্তে লাল ফুল, দূর্বা, সিঁদুর, মিষ্টান্ন অর্পণ করতে হবে গণেশকে। এর পর তাঁর সামনে জ্বেলে দিতে হবে ঘিয়ে প্রদীপ এবং ধূপ। ওম গং গণপতয়ে নমঃ- এই বীজমন্ত্র জপ করতে হবে। পরে দুধের মধ্যে মধু, চন্দন, সিঁদুর মিশিয়ে তা নিবেদন করতে হবে চন্দ্রদেবের উদ্দেশে।