

ভূত চতুর্দশী মানেই চারপাশে অতৃপ্ত আত্মাদের আনাগোনা৷ কখনও ঘাড়ে চেপে বসতে পারে ব্রহ্মদৈত্য, তো কখনও নিশির ডাকে উড়ে যেতে পারে প্রাণ৷ ছোট থেকেই মামদো, পেত্নি, শাকচুন্নিদের নাম শুনেই পিলে চমকে যায়৷ ভূতেদের এই সব রকমফেরের পিছনের গল্প জানা আছে?


পেত্মি- মহিলা ভূতেদের মধ্যে দুটি ভাগ রয়েছে৷ যেই মহিলারা অবিবাহিত অবস্থায় মারা যায়, তারা নিজেদের অতৃপ্ত বাসনা পূরণ করতে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়৷ যেই অতৃপ্ত বাসনার মধ্যে অধিকাংশ সময়ই লুকিয়ে থাকে দুরাভিসন্ধি৷ জলা জায়গা বা শ্যাওড়া গাছে বাসা বাঁধে পেত্নিরা৷


শাকচুন্নি- বিবাহিত মহিলারা মৃত্যুর পর শাকচুন্নি হয়৷ আর তাই হাতে শাঁখা-পলা, সিঁথিতে সিঁদূর পরে এদের অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়৷ মৃত্যুর পরও বিবাহিত জীবনের শখ, আহ্লাদ ত্যাগ করতে পারে না এরা৷ তাই সাধারণত বিবাহিত নারীদের ওপর ভর করে শাকচুন্নিরা৷


ব্রহ্মদৈত্য- বাঙালি ব্রাহ্মণরা অপঘাতে মারা গেলে ব্রহ্মদৈত্য হয়৷ সাদা ধুতি, খালি গায়ে পৈতে পরে এরা আশ্রয় নেয় বেল গাছে৷ বেগতিক দেখলেই যখন তখন যেকোনও কারও ঘাড়ে চেপে বসতে পারে এরা৷


মামদো ভূত- মামদো কথাটি এসেছে মহম্মদ থেকে৷ বাঙালি ব্রাহ্মণরা মারা গেলে যেমন ব্রহ্মদৈত্য হয়, তেমনই মুসলমানদের অপঘাতে মৃত্যু হলে তারা মামদো ভূত হয়৷ মামদোরা ঘাড়ে চাপলে বলা হয় জিন ভর করেছে৷


মেছোভূত- এই ভূত একেবারে বাঙালি৷ মাছ প্রিয় বাঙালিরা মৃত্যুর পরও মাছের লোভ ছাড়তে না পারলে মেছোভূত হয়ে পুকুরের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়৷ রাত বা ভর দুপুরে নির্জন রাস্তা দিয়ে কেউ মাছ কিনে ফিরলেও এরা ঘাড়ে চেপে বসে৷


স্কন্ধকাটা- ট্রেন বা বাসে কাটা পড়লে যদি মুণ্ডচ্ছেদ হয়ে মৃত্যু হয় তাহলে হয় স্কন্ধকাটা৷ অর্থাত্, যার কাঁধ থেকে কাটা৷ মনে করা হয় এরা নিজেদের কাটা মাথার খোঁজেই মর্ত্যে ঘুরে বেড়ায়৷


নিশি- রাতে কখনও নিশির ডাক শুনেছেন? ভূতে বিশ্বাস করে না, চরম যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্করাও নিশির ডাকের ভয়ে কাবু৷ রাতের অন্ধকারে আমাদের নাম ধরে ডাকে নিশি৷ সেই ডাকে সারা দিলে টেনে নিয়ে যায় বাড়ির বাইরে৷ আর তারপর চিরকালের মতো হারিয়ে যেতে হয় রাতের অন্ধকারেই৷ তাই গ্রাম বাংলায় প্রচলিত রয়েছে নিজের নাম ধরে তিনবার কেউ ডাকলে তবেই সাড়া দেওয়া উচিত৷ কারণ, নিশি কখনই দুবারের বেশি ডাকতে পারে না৷