দীর্ঘতম মেয়াদী মুখ্যমন্ত্রী, রাজনীতির ‘সাহেব’ জ্যোতি বসুর জীবনের নানা জানা-অজানা কথা
Last Updated:
তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও দলের আপত্তিতে বসতে পারেননি কুর্সিতে ৷ সময়টা ১৯৯৬ ৷ দেশে রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি ৷ স্বয়ং রাজীব গান্ধির প্রস্তাব ৷ এমন সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া হওয়ায় আফসোস প্রকাশ করেছিলেন শুধুমাত্র দুটো শব্দে- ঐতিহাসিক ভুল ৷ আজও ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছেন তিনি ৷ কমরেড জ্যোতি বসু ৷ আজ তাঁর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ৷
advertisement
প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার অভিমান থাকলেও সংগঠনের জন্য সারাজীবনটাই উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন তিনি ৷ সরকারের আসার আগে বিধানসভার সদস্য হিসেবে মাসের রোজগার ছিল মাত্র আড়াইশো টাকা ৷ পুরো টাকাটাই যেত পার্টি ফাণ্ডে ৷ এদিকে বসু পরিবারে টানাটানির সংসারে রোজকার ডাল-ভাত যোগানোই ছিল কষ্টকর ৷ পরে অবশ্য বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর সেই মাইনে ২৫০ থেকে বেড়ে ৭৫০ টাকা হওয়ার পরও সংসারের জন্য বরাদ্দ বাড়েনি কিন্তু বেড়ে গিয়েছিল পার্টি ফাণ্ডের বরাদ্দ ৷ সংসার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তেন স্ত্রী কমলা বসু ৷ সিদ্ধার্থশঙ্কর সহ জ্যোতি বাবুর বন্ধুস্থানীয় নেতাদের কাছে অনুযোগও করতেন তিনি ৷
advertisement
advertisement
জনপ্রিয়তায় বিশ্বে সব রাজনৈতিক নেতাকে টেক্কা দিতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের এই কমিউনিস্ট নেতা ৷ অনুগামী ও ভক্তদের সংখ্যাও ঈর্ষনীয় ৷ একবার জ্যোতি বসুকে ঘিরে ধরেন এক দল মহিলা ভক্ত ৷ চাহিদা অটোগ্রাফ ৷ শুধু সই নয়, তাঁরা চাইছিলেন জ্যোতিবাবু সইয়ের সঙ্গে দু-চার লাইন লিখেও দিন ৷ কিন্তু সেরকম কিছুই ঘটল না ৷ গম্ভীর মুখে গাড়িতে উঠে পড়লেন জ্যোতিবাবু ৷ সঙ্গে থাকা আরেক দাপুটে নেতা প্রশ্ন করলেন, এটা কি ঠিক হল? রবীন্দ্রনাথ থেকে ২-৪টে লাইন লিখে দিলেও তো হত ৷ উত্তরে জ্যোতিবাবু বলেন, জানিই না তো লিখব কোথা থেকে ৷ সেদিন জ্যোতি বসুর সঙ্গী ছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ৷
advertisement
বিরোধীদের সঙ্গে বরাবরই সদ্ভাব জ্যোতি বসুর ৷ সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় থেকে এবিএ গনি খান ৷ জ্যোতি বাবুকে সাহেব বলে ডাকতেন গনি খান ৷ শুধু গনি খানই নন, তাঁর পরিবারেরও খুব কাছের ছিলেন জ্যোতি বসু ৷ গনি খানের বোন নিয়ম করে প্রতি দুসপ্তাহ অন্তর বিরিয়ানি রান্না করে পাঠাতেন জ্যোতিবাবুকে ৷ অন্যথা হলেই ফোন করে জ্যোতিবাবু খোঁজ নিতেন কেন আসেনি বিরিয়ানি ৷
advertisement
এক শিক্ষিত উচ্চবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। লেখাপড়া করেছেন কলকাতার অভিজাত স্কুল ও কলেজে। ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন । কলকাতার পড়াশোনা শেষে তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন ল’ পড়তে। বিলাত থেকে ব্যারিস্টার হয়ে তিনি দেশে ফিরে আসলেন, কিন্তু ব্যারিস্টারী করলেন না। তিনি হলেন কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী।
advertisement
কমিউনিস্ট হয়ে যাওয়া ব্যরিস্টার জ্যোতি বসু ট্রামে বাসে রাস্তায় পার্টির পত্রিকা বিক্রি করেছেন, রেলওয়ে শ্রমিকদের সংগঠিত করতে নানা জায়গায় ঘুরেছেন, শ্রমিক বস্তিতে থেকেছেন। এইভাবে তিনি নিজেকে শ্রেণীচ্যুত করেছিলেন। তাঁর হাত ধরেই এক টানা ৩৪ বছর উড়েছে বামেদের পতাকা ৷ ভারতের দীর্ঘতম মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু ৷