সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ৩০০ ফুট উঁচুতে দেবীর অধিষ্ঠান। বৈষ্ণো দেবী। ভারতের অন্যতম পবিত্র ধর্মস্থান। মায়ের কাছে পৌঁছনোর পথটা কিন্তু মোটেই সোজা নয়। এক-দুই নয়, গুণে গুণে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার চড়াই ভেঙে তবে দর্শন মেলে দেবীর। মাতার দরবারে পৌঁছতে কৃচ্ছ্রসাধনই অন্যতম পথ। তাতেই সুখ। তাতেই শান্তি। কিন্তু, যাঁরা বয়সের ভারে কিংবা অসুস্থতার জন্য সেই কষ্ট করে উঠতে পারেননা, তাঁরাও কিন্তু মায়ের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হন না। তীর্থযাত্রীদের বেস ক্যাম্প কাটরা থেকে ঘোড়া, খচ্চর, পিট্টু বা পালকিতে চড়ে মাতার ভবনে পৌঁছনো যায়। যার মূল্যও মন্দির কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে রেখেছে। এছাড়াও কাটরা থেকে সাঁঝি ছট পর্যন্ত একটি দৈনিক হেলিকপ্টর পরিষেবাও রয়েছে। অবশ্য, হেলিকপ্টারে যেতে হলে আগে থেকেই বুকিং করে রাখতে হয়। সাঁঝি ছট থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গেলেই মায়ের মন্দির।
যাইহোক, অনেকটা টাকার খরচ বাঁচাতে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তো বটেই, কাটরা থেকে হেঁটে ভবনে ওঠাই পছন্দ করেন অধিকাংশ ভক্ত। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় ৯১ লক্ষ ভক্ত এখানে দেবীর দর্শন করতে এসেছিলেন। তাঁদের বেশিরভাগই জম্মুর কাছে ৫ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ত্রিকূট পর্বতের মন্দির পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েছিলেন।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক বছর ধরে এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থার চাহিদা তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে সহজেই কাটরা থেকে ভবনে যেতে পারবেন যাত্রীরা। খরচটাও হবে আয়ত্তের মধ্যে। ঠিক সেই কথা মাথায় রেখেই বৈষ্ণোদেবীর মন্দিরে রোপওয়ে নির্মাণ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে, অবশেষে শুরু হয়েছে সেই রোপওয়ে তৈরির প্রক্রিয়া। তৈরিতে খরচ হবে ২৫০ কোটি টাকা। আর এই রোপওয়ে নির্মাণ সম্পূর্ণ হলেই এই এতটা পথ হাঁটার ক্লান্তিদূর হয়ে যাবে নিমেষেই। রোপওয়ের পথে কয়েক ঘণ্টার যাত্রা শেষ হয়ে যাবে মাত্র ৬ মিনিটে। এই রোপওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ২.৪ কিলোমিটার। রোপওয়ের জন্য টেন্ডার ডেকেছে RITES (Rail India Technical and Economic Service)।
এই রোপওয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ৩ বছরে। কাটরার বেস ক্যাম্প তারাকোট থেকে শুরু হবে রোপওয়ে। যাবে মাতা বৈষ্ণো দেবীর মন্দিরের কাছে সাঁঝি ছট পর্যন্ত। রোপওয়েতে গন্ডোলা ক্যাবল কার সিস্টেম বসানো হবে। গন্ডোলা ক্যাবল কার সিস্টেম এরিয়াল রোপওয়ে নামেও পরিচিত। এটি এক ধরনের এরিয়াল ক্যাবল কার সিস্টেম। এতে, একটি কেবিন অনেকগুলি তারের মাধ্যমে পাহাড় বা উপত্যকার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়। যেমনটা জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমর্গে আছে।
এই রোপওয়েতে দ্বিমুখী তারের ব্যবস্থা থাকবে। উভয় কেবিন একটি ট্র্যাকশন তারের মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। বছর দুই আগে ত্রিকুট পাহাড়ের উপরে অবস্থিত মাতা বৈষ্ণো দেবীর মন্দির থেকে ভৈরব মন্দির পর্যন্ত এই রোপওয়ে চালু করা হয়েছিল। তাতে বেশ ফালই সাফল্য মিলেছে। এ জন্য ক্লান্তি ও কষ্টে ভরা ভৈরব মন্দির যাত্রা খুবই সহজ হয়ে গেছে।
এই রোপওয়ে নির্মাণের ফলে শুধু যে ভক্তদের যাতায়াত সহজ হবে তাই নয়, পরিবেশও রক্ষা হবে। অন্যদিকে, এটি পর্যটকদের জন্যও একটি আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। এতে চড়ে ভক্তেরা পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতেই মাতার মন্দির পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারবেন। এতে এলাকার পর্যটন ব্যবসাতেও নতুন করে জোয়ার আসবে।