Dr Manmohan Singh: ‘ইতিহাস ততটাও নির্দয় হবে না’, একেবারেই সঠিক কথা বলেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং; কিন্তু কেন ইতিহাসের প্রতিই বেশি ভরসা ছিল তাঁর?
- Published by:Siddhartha Sarkar
- trending desk
Last Updated:
Dr Manmohan Singh Here's Why History Will Remember Him: ফলে সেই সময় ড. মনমোহন সিং বলেছিলেন যে, “সংবাদমাধ্যম আমার প্রতি যতটা নির্দয় ছিল, ইতিহাস আমার প্রতি তার থেকেও বেশি সদয় থাকবে।”
আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ সাংবাদিক সম্মেলনে একটি মন্তব্য করেছিলেন ড. মনমোহন সিং। আর তাঁর প্রয়াণের পরে তাঁর বলা সেই উক্তিই এখন চর্চায় রয়েছে। আসলে সেই সময় তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে উঠেছিল একাধিক বড় বড় কেলেঙ্কারির অভিযোগ। যার জেরে তীব্র ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। ফলে সেই সময় ড. মনমোহন সিং বলেছিলেন যে, “সংবাদমাধ্যম আমার প্রতি যতটা নির্দয় ছিল, ইতিহাস আমার প্রতি তার থেকেও বেশি সদয় থাকবে।”
advertisement
advertisement
একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭১ সালে ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকে আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা, প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং আরবিআই গভর্নরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের জন্য ড. সিং একাধিক অর্থনৈতিক এবং উদারীকরণ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ড. সিং।
advertisement
অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন সারা দেশ রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। শুধু তা-ই নয়, পেমেন্ট ঘাটতির ভারসাম্য এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে পতনেরও মুখোমুখি হয়েছিল দেশ। কিন্তু তিনি সেই সময় একাধিক সংস্কারমূলক কাজ করেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম হল পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংয়ের বেসরকারিকরণ, আমদানি-রফতানি নীতির সহজীকরণ ইত্যাদি।
advertisement
বিনয়ী অথচ দৃঢ়চেতা ড. সিংয়ের ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। বিশ্বের নেতাদের থেকে প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। যখন ড. মনমোহন সিং ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দফতর থেকে পদত্যাগ করেন, সেই সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার থেকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পেয়েছিলেন। সেই সময় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন যে, আপনার সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। আর জনজীবনে খুব কম মানুষই রয়েছেন, যাঁদের নামে আমি প্রশংসা করেছি।
advertisement
advertisement
প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য অন্যান্য দাবিদার থাকা সত্ত্বেও ড. সিংকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। তবে সেই সময় এই অর্থনীতিবিদ তথা রাজনীতিবিদ অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তবে সহজে তিনি সব কিছু পেয়ে যাননি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ভারত-মার্কিন পারমাণবিক চুক্তি পাশ করার জন্য যখন তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন, তখন তিনি নিজের সরকারকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন। আর এই দৃঢ় সঙ্কল্পই ড. মনমোহন সিংয়ের মধ্যে দেখেছিলেন সনিয়া গান্ধি।
advertisement
সেই কারণে পুরোপুরি ভাবে সমর্থন করে গিয়েছিলেন তাঁকেই। তবে রাহুল গান্ধি প্রকাশ্যে ইউপিএ সরকারকে দোষী সাব্যস্ত সাংসদ এবং বিধায়কদের অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশ প্রত্যাখ্যান করতে একটি অধ্যাদেশ জারি করার নিন্দা করেছিলেন। যার জেরে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হয়েছিল ড. মনমোহন সিংকে। আর সেই যন্ত্রণাই ফুটে উঠেছিল তাঁর চোখেমুখে, যা শুধুমাত্র চাক্ষুষ করেছিলেন ড. সিংয়ের কাছের মানুষরাই।
advertisement
সেই সময় আসলে অফিসিয়াল সফরে আমেরিকায় ছিলেন ড. সিং। এখানেই শেষ নয়, টিআর বালুর মতো কিছু নেতাকে মন্ত্রী করা না হলে ইউপিএ ২ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল ডিএমকে। যার জেরে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছিল ড. মনমোহন সিংকে।
কিন্তু নিজের মন্ত্রিসভা থেকে সম্পূর্ণ সমর্থনের অভাব এবং কংগ্রেসের কিছু সমস্যা সত্ত্বেও ড. সিং নিজের মাথা উঁচু রাখতে পেরেছিলেন। তাঁর বিদেশ সফর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সেই সঙ্গে তিনি প্রচুর শ্রদ্ধা-সম্মানও লাভ করেছিলেন। ড. সিংয়ের অধীনেই MGNREGA, খাদ্য নিরাপত্তা বিল এবং আধারের মতো অনেকগুলি ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হয়েছে।
কিন্তু নিজের মন্ত্রিসভা থেকে সম্পূর্ণ সমর্থনের অভাব এবং কংগ্রেসের কিছু সমস্যা সত্ত্বেও ড. সিং নিজের মাথা উঁচু রাখতে পেরেছিলেন। তাঁর বিদেশ সফর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সেই সঙ্গে তিনি প্রচুর শ্রদ্ধা-সম্মানও লাভ করেছিলেন। ড. সিংয়ের অধীনেই MGNREGA, খাদ্য নিরাপত্তা বিল এবং আধারের মতো অনেকগুলি ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হয়েছে।
advertisement
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারের অবসান ঘটানোর পথে অগ্রসর হন ড. মনমোহন সিং। সেই শেষ বারের মতোই তাঁকে রাজ্যসভায় দেখা গিয়েছিল। তবে একটা ছবি বারবার চোখের সামনে এখনও ভেসে ওঠে। আসলে সেই সময় ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজের ভোট দেওয়ার জন্য হুইলচেয়ারে এসেছিলেন তিনি। দুর্বল অথচ দৃঢ়চেতা একজন ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত নিজের পথ ধরে রেখেছিলেন - ঠিক যেমন ভাবে তিনি বলেছিলেন যে, ইতিহাস সব সময় তাঁকে সদয় ভাবেই মনে রাখবে।