ভারত পেতে চলেছে 'গাণ্ডীব' ব্রহ্মাস্ত্র! ঘণ্টায় ৫৫০০ কিমি ধেয়ে ঘায়েল করবে শত্রুকে...নতুন প্রজন্মের এই মিসাইলের ক্ষমতা জানেন?

ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আসছে এক নতুন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ — ASTRA MK-3 “গাণ্ডীব”। ঘণ্টায় ৫৫০০ কিলোমিটার গতিতে শত্রুপক্ষের বিমান উড়িয়ে দিতে সক্ষম এই মিসাইলের আঘাতের পরিধি হবে ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

২০২৮ সাল থেকে এই মিসাইলের উৎপাদন শুরু হবে, জানিয়েছে DRDO (Defence Research and Development Organisation)। পরবর্তী সময়ে এটি সংযোজিত হবে সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানে, এবং পরবর্তী ধাপে রাফাল ফাইটার জেটেও।

ভারতের বায়ুসেনার যুদ্ধক্ষমতায় আসছে এক বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন। ASTRA MK-3 বা ‘গাণ্ডীব’, যা মহাভারতের কিংবদন্তি ধনুক ‘গাণ্ডীব’-এর নামে নামকরণ করা হয়েছে, হবে ভারতের সবচেয়ে আধুনিক Beyond Visual Range Air-to-Air Missile (BVRAAM)। শক্তি, নিখুঁততা আর নির্ভুল আঘাত— এই তিনের প্রতীক হিসেবেই এই নাম বেছে নেওয়া হয়েছে।

DRDO জানিয়েছে, এই মিসাইল বিশ্বের দীর্ঘপাল্লার এয়ার-টু-এয়ার মিসাইলগুলির অন্যতম হবে, যা ভারতের আকাশযুদ্ধ ক্ষমতাকে “সুপারপাওয়ার”-এর স্তরে পৌঁছে দেবে।

DRDO জানিয়েছে, এই মিসাইল বিশ্বের দীর্ঘপাল্লার এয়ার-টু-এয়ার মিসাইলগুলির অন্যতম হবে, যা ভারতের আকাশযুদ্ধ ক্ষমতাকে “সুপারপাওয়ার”-এর স্তরে পৌঁছে দেবে।

🔹 পরিসর ও গতি: উচ্চ উচ্চতায় এটি ৩৪০–৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে শত্রুকে আঘাত করতে পারে, আর নিচু উচ্চতায় (প্রায় ৮ কিমি) টার্গেট ধ্বংস করতে পারে ১৯০ কিলোমিটার দূর থেকে। এটি চালিত হয় Solid Fuel Ducted Ramjet (SFDR) প্রযুক্তিতে তৈরি দ্বৈত জ্বালানি ইঞ্জিনে, যা তাকে Mach 4.5 (প্রায় ঘণ্টায় ৫৫০০ কিমি) গতিতে উড়তে সাহায্য করে।

এই ইঞ্জিন বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন ব্যবহার করে, ফলে মিসাইল হয় হালকা, দ্রুত ও অধিক কার্যকর। Throttleable Ramjet Technology থাকার কারণে এটি উড়ন্ত অবস্থায়ও গতি বাড়াতে পারে — অর্থাৎ শত্রুপক্ষের বিমান যত দ্রুতই পালাক, ‘গাণ্ডীব’-এর হাত থেকে বাঁচার সুযোগ প্রায় নেই।

🔹 টার্গেট অনুসরণ ক্ষমতা: ‘গাণ্ডীব’ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিমি পর্যন্ত যেকোনও উচ্চতা থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়। এর ২০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল অব অ্যাটাক এবং উন্নত ম্যানুভারিং ক্ষমতা রয়েছে, যা তাকে চলন্ত টার্গেটেও নিখুঁতভাবে আঘাত করতে সক্ষম করে।

এতে ব্যবহৃত হয়েছে আধুনিক AESA (Active Electronically Scanned Array) সিকার, যা এখন GaAs থেকে GaN প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে এটি ইলেকট্রনিক জ্যামিং থেকে সুরক্ষিত এবং নিখুঁতভাবে টার্গেট লক করতে সক্ষম।

এটি শত্রুপক্ষের ফাইটার জেট, বোমারু বিমান, এয়ার রিফুয়েলার, AWACS এবং কমান্ড প্ল্যাটফর্ম ধ্বংস করতে সক্ষম। বিশেষত চীনের জে-২০ স্টেলথ ফাইটার-এর মতো যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে এটি হবে ভারতের গোপন অস্ত্র।

🔹 প্রযুক্তিগত দিক: ‘গাণ্ডীব’-এর ওজন প্রায় ১৬০ কেজি, দৈর্ঘ্য ৩.৮ মিটার, এবং ব্যাস ১৭৮ মিলিমিটার। এতে রয়েছে উন্নত ECCM (Electronic Counter-Counter Measures) ব্যবস্থা, যা শত্রুর জ্যামিং সত্ত্বেও নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদ করতে সাহায্য করে।

২০২৫ সালের মধ্যেই এই মিসাইল সফলভাবে গ্রাউন্ড টেস্ট, লাইভ ফায়ার ট্রায়াল, সুপারসনিক ফ্লাইট ভ্যালিডেশন এবং সীমিত ফ্লাইট ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে এটি সুখোই-৩০ এমকেআই বিমানে পরীক্ষাধীন, এবং ভবিষ্যতে রাফাল ও AMCA-তেও যুক্ত হবে।

এখন পর্যন্ত ভারত নির্ভর করেছে ASTRA MK-1 ও MK-2-এর ওপর (যাদের পাল্লা যথাক্রমে ১০০–১৬০ কিমি)। কিন্তু MK-3 যুক্ত হলে ভারতীয় বায়ুসেনা পাবে এক দ্বৈত সুবিধা—গতি ও মারাত্মক নিখুঁততা।

“গাণ্ডীব” শুধু একটা মিসাইল নয়— এটা ভারতের আকাশরক্ষার নতুন মহাযন্ত্র, যেখানে বিজ্ঞান, পুরাণ আর বীরত্ব মিলেছে এক বিন্দুতে। আসছে এমন এক যুগ, যখন শত্রুপক্ষ জানবে,  ভারতের আকাশে প্রবেশ মানে, ‘গাণ্ডীব’-এর তীরের সামনে দাঁড়ানো।