সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একাধিক ডায়েট ট্রেন্ড, এর উপর নির্ভর করা উচিত না কি এটা একটা খামখেয়াল? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ
- Published by:Siddhartha Sarkar
- trending desk
Last Updated:
Social Media Diet Trends: দ্রুত গতির সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে প্রচণ্ড বেগে স্ক্রোল করার তুলনায় বদলে যাচ্ছে ডায়েট ট্রেন্ড বা খাদ্যাভ্যাসের প্রবণতা। যার মাধ্যমে ওজন কমানো, শরীর স্বাস্থ্য ভাল রাখা এবং দুর্দান্ত লাইফস্টাইল বজায় রাখা সম্ভব বলে দাবি করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, এই ডায়েট ট্রেন্ড বা খাদ্যাভ্যাসের প্রবণতা কি ক্ষণস্থায়ী খামখেয়াল?
আজকালকার দ্রুত গতির সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে প্রচণ্ড বেগে স্ক্রোল করার তুলনায় বদলে যাচ্ছে ডায়েট ট্রেন্ড বা খাদ্যাভ্যাসের প্রবণতা। যার মাধ্যমে ওজন কমানো, শরীর স্বাস্থ্য ভাল রাখা এবং দুর্দান্ত লাইফস্টাইল বজায় রাখা সম্ভব বলে দাবি করা হয়। Grocery Store Hauls থেকে শুরু করে ভাইরাল ডিটক্স টি-এর মতো ট্রেন্ড ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, এই ডায়েট ট্রেন্ড বা খাদ্যাভ্যাসের প্রবণতা কি ক্ষণস্থায়ী খামখেয়াল? অথবা খাবার ও ফিটনেসের ক্ষেত্রে আমাদের মনোভাবের কি পরিবর্তন হচ্ছে?
advertisement
আর ইনফ্লুয়েন্সার কালচারের এই যুগে স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার বিষয়বস্তু সর্বব্যাপী। আমরা কী খাই আর আমরা আমাদের শরীরকে কীভাবে দেখি, সেটাকেই যেন নতুন ভাবে গঠন করছেন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা। সঠিক ভাবে বাছাই করা খাবার, ফিটনেস রুটিন এবং ট্রান্সফর্মেশনের আগে অথবা পরের রূপ সংক্রান্ত পোস্ট করার ক্ষেত্রে একটা বিষয়ই সব সময় উঠে আসে। আর সেটা হল - দ্রুত ফলাফলের প্রতিশ্রুতি। যদিও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানাচ্ছেন যে, এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে ভাগ করে নেওয়া সমস্ত পরামর্শ সমান ভাবে তৈরি করা হয় না এবং সঠিক পরামর্শ ছাড়াই ভাইরাল প্রবণতা অনুসরণ করলে কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ডেকে আনতে পারে। Photo: Instagram
advertisement
নিজেদের ফিটনেস সফর ভাগ করে নিয়ে মানুষের জন্য অনেকটাই সহজ করে তুলেছেন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা। এর ফলে খাদ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে পরামর্শ প্রদানকারী অযোগ্য ব্যক্তিদের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। আর এই সংক্রান্ত বিষয়ে স্বঘোষিত ডায়েটিশিয়ান অথবা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দেখে নিজের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করলেন এএম মেডিকেল সেন্টারের পুষ্টিবিদ ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্ত। তাঁর কথায়, এখনকার দিনে আমরা যখন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া ওপেন করি, তখন আমরা দেখি যে, একাধিক অ্যাকাউন্টধারী নিজেদের পুষ্টিবিদ অথবা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করছেন। অথচ যাঁরা এক্ষেত্রে সঠিক ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাঁরা এক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় ব্যয় করে তবেই অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান অর্জন করছেন।
advertisement
সতর্ক করে ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্ত জানাচ্ছেন যে, এই সমস্ত ইনফ্লুয়েন্সারের ডায়েট প্ল্যান মেনে হয়তো অনেকেই সাফল্য পান। তবে এই রুটিন কিন্তু সকলের জন্য উপযুক্ত নয়। তাঁর বক্তব্য়, প্রত্যেক ডায়েট যে প্রত্যেকের জন্য উপযুক্ত, তেমনটা কিন্তু একেবারেই নয়। এতে দেহের চাপ বৃদ্ধি, লিভার, কিডনি অথবা হার্টের মতো অঙ্গের ক্ষতি এবং এমনকী অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাপ্ত ডায়েট প্ল্যান চোখ বুজে মেনে না চলার উপর জোর দিয়েছেন ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্ত। কারণ প্রত্যেকের শরীরের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়।
advertisement
সোশ্যাল মিডিয়া হেলথ ট্রেন্ডগুলির মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হল শরীরকে ডিটক্স করা। একাধিক ইনফ্লুয়েন্সার ডিটক্স ডায়েটের উপযোগিতা তুলে ধরেন। তাঁরা দাবি করেন যে, এই ধরনের ডায়েট শরীরের টক্সিন সাফ করে। ত্বকের উন্নতি ঘটায় এবং শরীর-স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। যদিও ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্ত সতর্ক করে জানান যে, এই কৌশলটা বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে সেই সব রোগীদের জন্য, যাঁদের আগে থেকেই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। তাঁর পরামর্শ, নির্দিষ্ট কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ডিটক্স ট্রেন্ড কিন্তু বিপজ্জনক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, যাঁদের সুগার লেভেল হাই, তাঁদের গাজর এড়িয়ে চলা উচিত। অথবা যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের লেবু খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। সঠিক পরামর্শ ছাড়া ডিটক্স মেথড কিন্তু স্বাস্থ্যের সমস্যার উন্নতির করার বদলে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
advertisement
জ্যুস, চা এবং দেহকে পরিষ্কার বা বিষাক্ত পদার্থমুক্ত রাখার বিষয়ে কম কম খাওয়া বিষয়টা এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে, এই ধরনের অভ্যাস নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এটা আদৌ উপযোগী না কি মার্কেটিং গিমিক, সেই প্রশ্নটাই বারবার উঠে আসছে। ফলে এই ডিটক্স নিয়ে মাতামাতি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্ত। নিজেদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চাহিদা মেটানোর জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। আসলে দ্রুত ওজন হ্রাসের প্রলোভন মারাত্মক। তাই পার্সোনালাইজড ডায়েটের উপর জোর দিয়েছেন ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্ত। তাঁর মতে, রোগীর স্বাস্থ্য, ওজন, জীবনযাত্রা এবং পরিবেশ সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে তবেই বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদেরা পার্সোনালাইজড পরামর্শ গিয়ে থাকেন। আসলে রোগীর নির্দিষ্ট চাহিদার উপর ভিত্তি করেই সঠিক ডায়েট প্ল্যান তৈরি করা হয়।
advertisement
সোশ্যাল মিডিয়া ডায়েট ট্রেন্ডের সবথেকে বড় সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম হল যে, সেগুলি বহু ক্ষেত্রেই একজন ব্যক্তির অনন্য স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করতে ব্যর্থ। আসলে একজন ব্যক্তির জন্য যা উপযোগী, সেটা অন্যজনের জন্য কার্যকর না-ও হতে পারে। সেই সঙ্গে জেনেরিক প্ল্যানের সঙ্গে থাকা সম্ভাব্য ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্য হতে পারে। ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্ত আরও জোর দিয়েছেন প্যাকেজড খাবারের বিপদের উপর। তাঁর পরামর্শ, আপনার রান্নাঘর আপনার ক্লিনিক হওয়া উচিত। অর্গ্যানিক খাবার এবং মশলা ব্যবহার করে নিজের ওষুধ প্রস্তুত করা উচিত। তাতে বাহ্যিক ওষুধের উপর কম নির্ভর করতে হবে।
advertisement
সোশ্যাল মিডিয়া ডায়েট ট্রেন্ডের ক্ষেত্রে আরও একটি সাধারণ প্রতিশ্রুতি হল, দ্রুত ওজন হ্রাস। আসলে খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে দুর্ধর্ষ ফলাফল বোঝানো হয় আগের এবং পরের ছবি দিয়ে। যা সকলের নজর কাড়ে। কিন্তু ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্ত এই ফল নিয়েও সতর্ক করেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, মাত্র এক মাসের মধ্যে ১০-১৫ কেজি ওজন কমানোর দাবি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এই ধরনের ওজন ঝরানোর ক্ষেত্রে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির উপর প্রবল চাপ পড়ে। একটি স্বাস্থ্যকর ওয়েট লস রুটিনের লক্ষ্য হওয়া উচিত, প্রতি মাসে ৩-৫ কেজি ওজন কমানো। তাঁর মতে, স্থায়ী ওয়েট লসের ক্ষেত্রে ব্যালেন্সড অ্যাপ্রোচ থাকা উচিত। যেখানে ডায়েট এবং এক্সারসাইজ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেখানে ডায়েট ৭০ শতাংশ কাজ করে, আর বাকি ৩০ শতাংশ কাজ করে শরীরচর্চা। ডায়েট এবং ক্যালোরি বার্ন সমান ভাবে জরুরি।
advertisement
ডায়েট এবং ফিটনেসের প্রতি মানুষের মনোভাব নিঃসন্দেহে পরিবর্তন করেছে সোশ্যাল মিডিয়া। তাই ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্তের মতো বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শের উপর জোর দিয়েছেন। ভাইরাল ট্রেন্ড মেনে চলার পরিবর্তে সকলের উচিত নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য স্থায়ী এবং ব্যালেন্সড মনোভাবের প্রতি মনোযোগ দেওয়া আবশ্যক। স্বাস্থ্য এবং ভাল থাকা সকলের ক্ষেত্রে সমান নয়। অর্থাৎ যেটা ইনফ্লুয়েন্সার অথবা তারকাদের জন্য কার্যকর, সেটা প্রত্যেকের জন্য কার্যকর না-ও হতে পারে ৷ সোশ্যাল মিডিয়া অনুপ্রেরণা এবং শিক্ষার উৎস হতে পারে। কিন্তু মনোভাবের ক্ষেত্রে নজর দেওয়া জরুরি। ডায়েটিশিয়ান জয়তী দত্ত বলেন যে, লেটেস্ট ট্রেন্ড না মেনে জ্ঞান এবং সঠিক শিক্ষার ভিত্তিতে একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট তৈরি করা উচিত।