

ওজন কম করতে কে না চান? ছিপছিপে হতে কে না চান? সব্বাই হাত তুলবেন এই প্রশ্নের উত্তরে। আদতে ওজন কম করা বিষয়টা কী, সেটা কি কেউ ভেবে দেখেছেন কোনও দিন? ভাবছেন, এটা আবার একটা প্রশ্ন হল না কি? অনেক এক্সারসাইজ আর প্রায় না খেয়ে থাকলেই ওজন কমে যায়- এ তো প্রায় কিংবদন্তি হয়ে গিয়েছে! কিন্তু আদতে ডায়েট (Diet) করার অর্থ হল শরীরে যতটা ক্যালোরি (Calorie) প্রয়োজন, তার সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া। তার সঙ্গে এক্সারসাইজ করে কিছুটা বাড়তি মেদ কমানো।


এ ভাবে ক্যালোরি কম করতে করতে অনেক সময়েই শরীরে ক্যালোরির ঘাটতি দেখা দেয়। দেখা দেয় ক্লান্তি ও অবসাদ। অনেকেই দীর্ঘ দিন একই ডায়েটে বিরক্ত হয়ে আবার পুরনো রুটিনে ফিরে যান। এতে আচমকা কমে যাওয়া ওজন আবার নিজের অজান্তেই আচমকা বেড়ে যায়। এ ভাবে ওজন কমা আর বাড়ার সব চেয়ে বড় মাশুল গুনতে হয় শরীর মহাশয়কে। তার কলকবজা বিগড়ে যায়।


আর সেই জন্যই আজকাল খুব জনপ্রিয় হয়েছে রিভার্স ডায়েট (Reverse Diet)। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই ডায়েট আসলে কী! যখন ওজন কম করার ডায়েট পর্ব শেষ হয়, তখন রিভার্স ডায়েট শুরু হয়। এই সময়ে ডায়েটে অল্প অল্প করে ক্যালোরির মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে এটাও খেয়াল রাখা হয় যে যাতে ওজন না বাড়ে।


কেন বাড়িয়ে দেওয়া হয় ক্যালোরি? রিভার্স ডায়েটের প্রবক্তারা মনে করেন, বিরক্ত হয়ে আগের ডায়েটে ফিরে না গিয়ে একটু করে ক্যালোরি বাড়ালে মেটাবলিজম (Metabolism) বাড়বে, ক্যালোরি বার্ন হবে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমানো নিয়ে দুশ্চিন্তাও কমবে।


কী ভাবে মানতে হবে রিভার্স ডায়েট? প্রথমেই দেখতে হবে এমনিতে কতটা ক্যালোরি শরীরের প্রয়োজন বা এমনিতে ডায়েট শুরু করার আগে কতটা ক্যালোরি গ্রহণ করা হত। এ বার ওজন কম করার জন্য যে ডায়েট দেওয়া হয়েছে, সেটা মানতে হবে। সেখানে কতটা ক্যালোরি নেওয়া হচ্ছে তার, হিসেবও রাখতে হবে। ওজন কমের ডায়েট শেষ হলে রিভার্স ডায়েট শুরু হবে। তখন প্রতি সপ্তাহে ৫০ থেকে ১০০ ক্যালোরি বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এ ভাবে বাড়তে বাড়তে যখন গোড়ার দিকে যতটা ক্যালোরি লাগত সেই স্তরে আসবে, ক্যালোরি বাড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই ডায়েটের মূল লক্ষ্য হল অনেক কষ্টে যে ওজন কম হয়েছে, সেটা যেন ধরে রাখা যায়। ক্যালোরি বাড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যই হল আগের ডায়েটে যাতে কেউ ফিরে যেতে না পারেন। শরীরে ক্যালোরি কম হলে লেপটিন (Leptin) নামের হরমোন(Hormone) কমে যায়। লেপটিন মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ডায়েটে ক্যালোরি বাড়লে লেপটিনের মাত্রাও ঠিক থাকে। তাই রিভার্স ডায়েট এনার্জি বাড়ায় এবং মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে রাখে বলেও দাবি করেছেন অনেকে।


তবে এই ডায়েটের সব চেয়ে বড় অন্ধকার দিক হল এই যে এর কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া শুধু ক্যালোরির উপরে ওজন কম বা বেশি হওয়া নির্ভর করে না। ঘুম, স্ট্রেস, এক্সারসাইজের মাত্রা এবং হরমোনের নিঃসরণের উপরেও নির্ভর করে। অনেকেই তাই বলেন নিরন্তর ক্যালোরি মেপে চলা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই ডায়েট বডি বিলডার ও পেশাদার অ্যাথলিটদের জন্যই বেশি কার্যকরী!