পাবদা...! ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, আয়রনে ঠাসা, আপনার প্রিয় মাছ স্বাদে টেক্কা দেয় ইলিশ-কাতলাকে, জানুন বিশেষজ্ঞের মত

বাঙালি মাত্রেই মেছো! পাতে এক পিস মাছ না পড়লে বাঙালির খাওয়াই অপূর্ণ থেকে যায়। রবিবার হোক বা সোমবার বাঙালির খাদ্য তালিকায় মাছ থাকবে না, সে যেন ভাবাই যায় না। আসলে মাছ খেতে বেশির ভাগ বাঙালিই ভালোবাসেন। আর পুষ্টির দিক থেকেও এই পদটি চিকেন, মটনের চেয়ে কোনও অংশে কম যায় না!

বাঙালির মাছের তালিকায় যেমন থাকে ইলিশ-রুই-কাতলা মাছ। তেমনই সেই তালিকায় থাকে অপেক্ষাকৃত ছোট মাছগুলিও। আর সেই ছোট মাছের তালিকায় অন্যতম সেরা নিঃসন্দেহে পাবদা মাছ। কিন্তু আমরা অনেক সময়ই জানি না এই মাছে ঠিক কতটা উপকার!

ঘরোয়া কালো-জিরের ঝোল হোক বা সর্ষে বাটার ঝাল লম্বা ছিপছিপে পাবদা মাছ পাতে পেলে খুশি না হয়ে পারেন না বেশিরভাগ বাঙালি। কিন্তু এই মাছ খেলে শরীরে কেমন প্রভাব পড়ে তা অনেকেই জানেন না? জেনে নিন এই পাবদা মাছ সম্পর্কে যাবতীয় গুণাগুণ।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, পাবদা মাছে কী কী উপাদান আছে। পাবদা মাছে থাকে ক্যালসিয়াম ১১০ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ১৮.১ গ্রাম, চর্বি বা ফ্যাট ২.৪ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩.১ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৫ মিলিগ্রাম, লোহ বা আয়রন ১.০ মিলিগ্রাম এবং শক্তি ১০৬ কিলো ক্যালারি।

আপনি কি জানেন মাছের এই উপাদানগুলি কী ভাবে আপনার শরীর ভাল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা নেয়? জানলে অবাক হবেন যে, পাবদা মাছ বা বাটার ফিশ অত্যন্ত সহজে হজম হয়ে যায়।

শুধু তাই নয়, এতে ফ্যাটের পরিমাণ সীমিত। এতে ক্যালসিয়াম রয়েছে প্রচুর আর তার সঙ্গে ফসফরাস এবং আয়োডিন। সব মিলিয়ে এই মাছ আমাদের শরীরে বেশ কিছু প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশিষ্ট চিকিৎসক ক্যাথলিন এম জেলম্যান, RD, LD, MPH তাঁর পর্যালোচনাতে লিখেছেন, "কম-ক্যালোরিযুক্ত খাবার থেকে উচ্চ পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে সবচেয়ে সস্তা দুর্দান্ত বিকল্প হিসেবে দেখা যেতে পারে বাটার ক্যাটফিশ বা পাবদা মাছকে। এটি ভিটামিন বি 12 , প্রোটিন এবং ওমেগা -3 এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে এবং এটি অত্যন্ত বহুমুখী গুণাগুণ সমৃদ্ধ একটি মাছ।"

তিনি আরও বলেন, "কম ক্যালোরিযুক্ত ক্যাটফিশের ১০০-গ্রামে প্রায় ৯৮ শতাংশ ক্যালোরি থাকে। এটি পোল্ট্রির মতো অন্যান্য বেশি ক্যালোরিযুক্ত মাংসের বিকল্প হিসেবেও একটি আদর্শ খাদ্য হওয়ার দাবি রাখে।"

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যাঁরা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এই মাছ খুব উপকারী হতে পারে। এতে থাকা আয়রন তাঁদের খুবই কাজে লাগতে পারে। বয়স্কদের জন্যও এই মাছ খুব উপকারী হতে পারে।

নিয়মিত এই মাছ খেলে শিশুদের উপকার হবে। কারণ এতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের গঠন মজবুত করতে কাজে লাগে।

শুধু দাঁত বা হাড় নয়, এই মাছের বেশ কিছু উপাদান পেশির গড়নের সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। তাই শিশুদের তো বটেই, যাঁদের ওজন খুব কম— তাঁরাও এই মাছ খেলে উপকার পাবেন।

যাঁরা অস্টিয়োপোরেসিসের মতো সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও কাজে লাগতে পারে এই মাছ।

এই মাছ নিয়মিত খেলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমতে পারে। কারণ পাবদা মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, আয়রন ও জিঙ্কে সমৃদ্ধ। ফলে এটি হার্টের নানা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

শর্তত্যাগ: শুধুমাত্র আপনাদের সচেতনতার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। আমরা এই লেখায় সাধারণ জ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ তথ্য শেয়ার করেছি মাত্র। আপনি যদি কোথাও আপনার স্বাস্থ্য, জীবন ও বিজ্ঞানের যোগ সম্পর্কিত কিছু পড়েন তবে তা গ্রহণ করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।