কালিদাস তাঁর কাব্যের উত্তরমেঘ পর্যায়ে এসে যক্ষবধূর কথা যখন লিখলেন, তার মধ্যে বিশেষ করে নজর কাড়ে নায়িকার উত্তমাঙ্গের বর্ণনা, নরেন্দ্র দেব যার তর্জনা করেছেন- কুচ চাপে নত যুবতী- যেন বা বিধাতা প্রথম সৃজিল তারে! নারীর শারীরিক সৌন্দর্য ব্যাখ্যায় স্তনের প্রসঙ্গ আসাটাই স্বাভাবিক, এর মধ্যে পুরুষতান্ত্রিকতা খোঁজা অবান্তর! অন্য দিকে, ওই সংস্কৃত কাব্যের যত্র-তত্র, যেখানে ছড়িয়ে রয়েছে নায়ক-নায়িকার যৌন মিলনের কথা, সে প্রসঙ্গে কবিরা, সবাই যদিও নয়, এক বিশেষ দিক কখনওই উল্লেখ করতে ভোলেন না।
তাঁরা লেখেন, নায়কের নখের আঘাতে নায়িকার স্তনবৃন্তের চারপাশে যে দাগ পড়েছে, তা যেন রক্তচন্দনের আলপনা! সে না হয় হল! বুঝে নিতে অসুবিধা নেই প্রাপ্তবয়স্কদের- নারীর এই অঙ্গ কীভাবে পুরুষকে উতলা করে তোলে। কিন্তু স্তনস্পর্শে কি মেয়েরা আদৌ যৌন সুখ লাভ করেন? স্তনকে কি যৌনাঙ্গ হিসাবেই চিহ্নিত করতে হবে এই দিক থেকে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সংস্কৃত কাব্যের যুগ থেকে আমরা বেশ অনেকটা নিচে নামব, সরাসরি চলে আসব ১৯৬০ সালে, প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে। সেই সময়ে ডা. উইলিয়াম মাস্টারস (William Masters) আর ভার্জিনিয়া জনসন (Virginia Johnson) এক সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। তাঁরা বুঝতে চেয়েছিলেন স্তন নারীর যৌনসুখের পথ প্রশস্ত করে কি না, করলে এর শারীরবৃত্তীয় রহস্য কী!
সমীক্ষা শেষে তাঁরা বলেছেন যৌন উদ্দীপনার মুহূর্তে স্তনের আকার এবং স্তনবৃন্তের চারপাশের বৃত্তাকার অংশ আয়তনে স্ফীত হয়; যোনিসুখের মুহূর্তে কঠিন হয়ে ওঠে স্তনবৃন্ত। বাদ যায়নি স্তন্যদানের প্রসঙ্গও। তাঁদের সমীক্ষায় না কি ধরা দিয়েছিল স্তন্যদান নারীদের যৌনসুখের চরম সীমাতেও নিয়ে যেতে পারে, এই সময়ে মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন নামে এক ধরনের হরমোনের ক্ষরণ হয়, যা কি না যোনিমিলনের সময়েও ঘটে, অতএব দুইয়ে দুইয়ে চারে আসতে ডাক্তারদের কোনও অসুবিধাই হয়নি!
অসুবিধাটা হল সমাজের! অনেকেই বললেন- এই সমীক্ষা পক্ষপাতদুষ্ট, তা নির্ভুল হতে পারে না। ফলে আরও পরে, ১৯৮৩ সালে যখন ১২১ জন নারীকে নিয়ে আরও একটি সমীক্ষা চালানো হল, সেবার ফলাফল এল বিপরীত। এই সমীক্ষায় ভাগ নিয়ে স্তন্যদাত্রীদের ৬২.৬৫ শতাংশই বললেন স্তন্যদানের সময়ে তাঁরা একেবারেই যৌন আনন্দ লাভ করেন না! অনেকের মতে, সন্তানের জন্মের পর বেশ কিছু দিন নারীরা যৌন মিলনে আগ্রহী থাকেন না, সে কারণেও হয় তো তাঁদের এই উক্তি! অবশ্য তাঁদের মধ্যে ১১.৩ শতাংশ সোজাসাপটা বলতে ছাড়েননি স্তন্যদানে ব্রেস্ট স্টিমুলেশন বা স্তনদেশে উদ্দীপনার অভিজ্ঞতা তাঁদের আছে বইকি!
কিন্তু এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা গেল না! তাই ২০০৬ সালে এসে সমীক্ষার নারীদের সংখ্যা বাড়ানো হল, এবারে ১৫৩ জনের দল নিয়ে চলল পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। এবার আর সন্তানজন্মের পরের অনীহার কথা ভেবে ওই দিকে গেলেন না গবেষকরা, সরাসরি বিষয়টাকে সীমাবদ্ধ রাখলেন যৌন পরিসরে। ৮২ শতাংশ নারী তাতে বললেন যৌন মিলনের সময়ে পুরুষের স্পর্শে তাঁদের কুচযুগে উত্তেজনা জাগে, ৬০ শতাংশ আরও স্পষ্ট করে বললেন এই জন্যেই তাঁরা যৌন মিলনের সময়ে পুরুষদের বার বার তাঁদের স্তন নিয়ে খেলা করতে বলেন।
তাহলে সিদ্ধান্তটা কী দাঁড়াল? সত্যি বলতে কী- কিছুই না! কে কীভাবে যৌন সুখ লাভ করেন, তা সব শেষে গিয়ে বলতে হয় একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার! এখানে সার্বজনীন মতগ্রাহ্য সূত্র কাজ করে না। অতএব, যাঁদের স্তনস্পর্শ করলে তাঁরা আনন্দ পান, তাঁদের উত্তেজনা জাগে। যাঁদের জাগে না, তাঁরা বিরক্ত হন, স্তন নিয়ে পুরুষের কল্পনাবিলাস দেখে অবাকও হন হয় তো বা!