Gohona Bori: পোস্ত, তিলের উপর ফুটে উঠছে অনন্য শিল্পের নিদর্শন,পূর্ব মেদিনীপুরের ঐতিহ্য গয়না বড়ি
- Published by:Rukmini Mazumder
- hyperlocal
- Reported by:Saikat Shee
Last Updated:
East Medinipur Gohona Bori: শীতের দিনে তমলুক, মহিষাদল-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের আনাচে কানাচে, ঘরে ঘরে চলে গয়না বড়ি বানানোর কাজ। পূর্ব মেদিনীপুরের ঐতিহ্য এই গয়না বড়ি খেতে ভালবাসতেন খোদ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়ের মতো বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
advertisement
advertisement
advertisement
নবান্ন, বড়দিন বা পৌষমেলার মতোই বাংলার মেয়েদের কাছে শীত ছিল এক উৎসবের ঋতু। আর সেই উৎসবের পুরোধা হল গহনা বড়ি বা চলতি কথায় গয়না বড়ি। সাধারণত অগ্রহায়ন মাস থেকেই বাড়িতে বাড়িতে লেগে থাকে উৎসব। বিউলির ডাল, পোস্ত, সাদা তিল এবং অন্যান্য মশলার সংমিশ্রনের সঙ্গে মেয়েদের সুদক্ষ হাতের কারুকার্যের নিদর্শন হল এই গহনা বড়ি। বছর পর বছর পেরিয়েও বর্তমান প্রজন্মের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে সেই কারুকার্যের ছাপ।
advertisement
গয়না বড়ি তৈরির উপকরণ: গয়না বড়ি তৈরির জন্য প্রয়োজন বিউলির ডাল, পোস্ত, তিল, স্বাদ মতো এলাচ,নুন, কালোজিরে। গত ৩০ বছর ধরে বড়ি তৈরি করে আসছেন জনৈকা কল্পনা শী। তিনি জানালেন, ' শীতের নরম রোদে গহনা বড়ি খুব ভাল তৈরি হয়। গহনা বড়ি তৈরির জন্য বিউলির ডাল, পোস্ত, তিল, এলাচ, স্বাদমত নুন ও সামান্য কালজিরে লাগে।
advertisement
গয়না বড়ি তৈরির পদ্ধতি: আগের দিন বিকেলবেলা বিউলির ডাল জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভেজানো ডাল জল থেকে ভাল করে পরিষ্কার করে ছেঁকে নেওয়া হয়। তারপর মিহি করে বেটে নিতে হয়। বেটে নেওয়া ডালে এলাচ, কালোজিরে, স্বাদমতো নুন মিশিয়ে থালায় বা অন্য পাত্রে ফেটিয়ে নেওয়া হয়। অন্যদিকে একটি বড় থালায় পোস্ত বা তিল বিছিয়ে, ফেটিয়ে নেওয়া ডাল কাপড়ের টুকরো ও চোঙের সাহায্যে গয়না বড়ি দেওয়া হয়। বেটে নেওয়া ডালকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফেটাতে হবে, তবেই বড়ি হালকা ও মুচমুচে হয়।
advertisement
গহনা বড়ির ইতিহাস: ১৯৩০ সালে সেবা মাইতি নামে শান্তিনিকেতনের এক ছাত্রী মা হিরণ্ময়ী দেবী ও ঠাকুমা শরতকুমারী দেবীর তৈরি গহনা বড়ি উপহার দেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। রবীন্দ্রনাথ গহনা বড়ির শিল্পকলা দেখে এতটাই আকৃষ্ট হন যে তিনি গহনা বড়িগুলির ছবি শান্তিনিকতনের কলা ভবনে সংরক্ষণ করার অনুমতি চেয়ে হিরণ্ময়ী দেবী ও শরতকুমারী দেবীকে চিঠি লেখেন। এর ফলে গহনা বড়ি চারুকলার নিদর্শন হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
advertisement
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একদা বলেছিলেন, গহনা বড়ি শুধুমাত্র দেখার জন্য, খাওয়ার জন্য নয়। তিনি গহনা বড়ির শিল্পকর্মের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার খোটানে আবিষ্কৃত প্রত্নতত্ত্বের শিল্পকর্মের সাদৃশ্য খুঁজে পান এবং গহনা বড়ির প্রদর্শনীর যথাযথ ব্যবস্থা করেন। নন্দলাল বসু গহনা বড়িকে বাংলা মায়ের গয়নার বাক্সের একটি রত্ন বলে বর্ণনা করেন এবং তিনি গহনা বড়ির উপর একটি বই প্রকাশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৯৫৪ সালে কল্যাণীতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ৫৯ তম অধিবেশনে গহনা বড়ি প্রদর্শিত হয়। বংশপরম্পরায় আজও তমলুক মহিষাদল-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বাড়িতরে বাড়িতে মহিলারা শীতের সকালে গহনা বড়ি তৈরি করেন।
