আশঙ্কা ছিল ৷ পূর্বাভাস মতো নেওয়া হয়েছিল সতর্কতাও ৷ স্থলভাগে শক্তি হারালেও ফণীর হাত থেকে রেহাই পায়নি রাজ্য। বাংলায় ঢুকে গতি কমলেও দুই ২৪ পরগণা, সুন্দরবন এলাকাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালায় ফণী। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২০০টি কাঁচাবাড়ি, ভেঙে গুড়িয়ে যায় প্রায় ৭০টি বাড়ি। রাজ্য জুড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মোট ৭৭১ টি বাড়ি ৷ ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে যায় নামখানা স্টেশনের শেড। আহত বেশ কয়েকজন। ফাটল ধরে রায়মঙ্গল বাঁধে । ফণীর তাণ্ডবের আশঙ্কায় ১৩১টি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৫২,২৯৭ জনকে ৷ তৈরি করা হয় ৭২৩টি রেসকিউ সেন্টার ৷ বিদ্যুৎহীন এলাকাগুলিতে দ্রুত বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনার জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে WBSEDC।
বিধ্বংসী 'ফণী' এবার বাংলাদেশে! গতকাল রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ওড়িশা হয়ে এ রাজ্যে ঢুকে পড়ে ফণী। ঘণ্টায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার বেগে খড়্গপুরের বুকে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়। তার পর হুগলির আরামবাগের দিকে অগ্রসর হয় । আরামবাগ ছাড়িয়ে, কাটোয়া, শান্তিপুর, মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে যখন ফণী ঢুকল, তখন তা ঘূর্ণিঝড় থেকে একটু একটু করে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। কাজেই, শক্তি অনেকটাই কমে গিয়েছে।
এ রাজ্যে ফণীর জেরে সবটেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দুই মেদিনীপুর। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু এলাকায়ও। পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, রামনগর থেকে নন্দীগ্রাম-খেজুরিতে পআরথ ২ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি, উপড়েছে, উপড়েছে গাছ। কিছু অঞ্চল শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুত্হীন রয়েছে।
শুক্রবার সকালে ২২০ কিলোমিটার বেগে ওড়িশায় আছড়ে পড়ে ফণী। পুরী ও ভুবনেশ্বেরে চলে তাণ্ডবলীলা । ইতিমধ্যেই সে রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছিল, পুরীতে আছড়ে পড়ার পর প্রবল শক্তিশালী হিসেবেই বাংলার দিকে অগ্রসর হবে ফণী। আছড়ে পড়তে পারে ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার বেগে। ঝড়ের অভিমুখ যে দিকে ছিল তাতে খড়্গপুর দিয়েই বাংলায় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। স্বাভাবিক ভাবেই চরম আশঙ্কায় প্রহর গুনছিল পশ্চিমবঙ্গ। তবে যতটা শক্তিতে আছড়ে পড়ার ভয় ছিল, তার তুলনায় অভিঘাত খানিক কমই ছিল।
শুক্রবার সকালে স্থলভাগে প্রবেশের পরে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে ফণী। এ রাজ্যে ঢোকার আগে থেকেই ফণীর প্রভাব পড়তে শুরু করে দিঘা, মন্দারমণি-সহ উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে। বিকেলের পর থেকে রাজ্যের উপকূল এলাকায় হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিমি। রাতে তা আরও বাড়ে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারী বৃষ্টি।
দিঘায় সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। উপকূল ছাপিয়ে নিচু এলাকাগুলিতে জল ঢুকতে শুরু করে সন্ধ্যার সময়। তাই আগে থেকেই ওই সব এলাকাগুলি থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এবং তার লাগোয়া এলাকা থেকে ২৩ হাজার ৬৮০, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৫ হাজার ৯৪৫, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৩ হাজার ৯৪৪, কলকাতা পুলিশ এলাকা থেকে প্রায় চার হাজার এবং ঝাড়গ্রাম থেকে ৮৫ জনকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিয়াশালার কুন্দরীশোল গ্রামে বাজ পড়ে ভৈরব সাউ নামে ১২ বছরের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে চারটি দোকান, ২৭টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝাড়গ্রামে ২০টি কাঁচা বাড়ি আংশিক ভেঙে পড়েছে। তবে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
তবে কলকাতাতে ফণীর জোরালো প্রভাব পড়েনি। আশঙ্কা করা হচ্ছিল কলকাতার উপর দিয়ে ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যাবে। রাতের দিকে ঝোড়ো হাওয়া বইলেও তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার। শহরের কিছু জায়গায় এর প্রভাবে গাছ উপড়ে পড়ে। হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রাতভর প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে কলকাতা পুরসভা থেকে সব রকম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়। শুক্রবার রাতে কলকাতার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিইএসসি। রবিবার পর্যন্ত সিইএসসি-র সব ইঞ্জিনিয়ারের ছুটি বাতিল করা হয়েছিল শুক্রবার। কলকাতার নানা জায়গায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল।