মিস ইউনিভার্স জয়ের ২৫ বছর, শুভেচ্ছা, নস্টালজিয়ায় ভাসলেন সুস্মিতা

আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে৷ বিশ্বমঞ্চে নতুন ইতিহাস লিখেছিল ভারত৷ ১৮ বছরের এক বাঙালি মেয়ে গর্বিত করেছিল দেশকে৷ ভারত পেয়েছিল প্রথম বিশ্বসুন্দরী৷

২১ মে ১৯৯৪৷ ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় বিশ্বের ৭৭টি দেশের প্রতিনিধিকে হারিয়ে মিস ইউনিভার্স হয়েছিলেন ১৮ বছরের সুস্মিতা সেন৷

১৯৯৪ বিশ্বকাপে ফার্স্ট রানার আপ হয়েছিলেন কলম্বিয়ার ক্যারোলিনা গোমেজ, সেকেন্ড রানার আপ হয়েছিলেন ভেনেজুয়েলার মিনোরকা মার্কাডো৷

সুস্মিতার মাথায় বিশ্বসুন্দরীর মুকুট পরিয়ে দিয়েছিলেন মিস ইউনিভার্স ১৯৯৩ পুয়ের্তো রিকোর ডায়নারা টোরেস৷

সুস্মিতার জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৯ নভেম্বর৷ ১৯৯৪ সালের ২১ মে মাত্র ১৮ বছর ৬ মাস ২ দিন বয়সে মিস ইউনিভার্স হন তিনি৷

১৯৯৪ সালের মিস ইউনিভার্সে সুস্মিতা কিন্তু জুরির ফেভরিট তিনি ছিলেন না৷ সুইমসসুট রাউন্ড থেকেই নজর কাড়লেও সুস্মিতা বাজিমাত করেছিলেন শেষ প্রশ্নের উত্তরে৷

মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার সময় সুস্মিতার রুমমেট ছিলেন ইতালির প্রতিযোগী আরিয়ানা ডেভিড৷ আরিয়ানার সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয় সুস্মিতার৷ আরিয়ানা সেরা ১০-এ ওঠার পর এভাবেই মাকে ইশারা করে সুস্মিতা জানিয়েছিলেন,ঈশ্বর রয়েছেন৷

সুস্মিতা নিজেকে পরিচয় করানোর সময় বলেছিলেন ভারত ভালবাসার দেশ৷ পরে ইন্টারভিউতে সেই প্রশ্নই তাকে করা হলে উত্তর দেন, এত ধর্মের মানুষ একসঙ্গে থাকা সত্ত্বেও ভারত শান্তিপূর্ণ দেশ৷ ভালবাসা না থাকলে যা হয় না৷

ইন্টারভিউতে সুস্মিতা জানিয়েছিলেন তিনি জনপ্রতিনিধি৷ তাকে অনেক মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়৷ কিন্তু তার চরিত্রের একটি নিজস্ব দিকও রয়েছে৷ তিনি মনে করেন প্রতিটা মানুষের দুটো থাকা উচিত৷ একটা নিজের, অন্যটা সকলের জন্য৷ অষ্টাদশীর পরিণত ভাবনাচিন্তা মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের৷

সুস্মিতাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সময় ও অর্থ থাকলে কোন অ্যাডভেঞ্চার তিনি করতে চান? সুস্মিতা উত্তর দেন, যা তিনি উপভোগ করেন সেটাই তার কাছে অ্যাডভেঞ্চার৷তিনি শিশু ভালবাসেন, শিশুদের জন্য কাজ করতে চান৷ শুধু দুস্থ শিশু নয়, সব শিশুই তার কাছে স্পেশ্যাল৷

শেষ পর্বের ৩ প্রতিযোগীকেই একই প্রশ্ন করা হয়েছিল৷ তোমার কাছে মহিলা হওয়ার সারমর্ম কী? সুস্মিতার উত্তর ছিল, মহিলা জন্ম ঈশ্বরের উপহার৷শিশুর জন্ম যেমন হয় মায়ের থেকে, তেমনই মহিলাদের থেকেই পুরুষরা শেখেন ভালবাসা, ভাগ করে নেওয়া, যত্ন নেওয়া৷ এই উত্তর তাকে এনে দিয়েছিল মিস ইউনিভার্সের মুকুট৷

১৯৯৪ সালে মিস ইন্ডিয়া কন্টেস্ট বিচারকদের সেরা বাজি ছিলেন সুন্দরী, জনপ্রিয় মডেল ঐশ্বর্য রাই৷ তাকে হারিয়ে সুস্মিতা মিস ইন্ডিয়ার মুকুট জেতায় বিচারকদের পছন্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই৷ সুস্মিতা প্রমাণ করেছিলেন নিজেকে৷ মিস ইউনিভার্সের মুকুটই ছিল তার যোগ্য উত্তর৷

১৯৯৪ সালের মিস ইন্ডিয়ার মঞ্চে প্রথম বারের জন্য টাই হয়েছিল দুই প্রতিযোগীর৷ একই নম্বর পাওয়া সুস্মিতা ও ঐশ্বর্যর টাই ভাঙতে আবার একবার ফাইনাল রাউন্ডের প্রশ্ন করেন বিচারকরা৷ ঐশ্বর্যকে হারিয়ে জয়ী হন সুস্মিতা৷ সেই দিন থেকেই ভাগ হয়ে গিয়েছিল দুজনের দল৷ ঐশ্বর্যর চির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন সুস্মিতা৷

সুস্মিতা মিস ইউনিভার্স হওয়ার পর মিস ইন্ডিয়ার ফার্স্ট রানার আপ ঐশ্বর্যও জেতেন মিস ওয়ার্ল্ডের খেতাব৷ মিস ইন্ডিয়া মঞ্চে যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছিল আরও প্রকট হয় সেই লড়াই৷ এনডর্সমেন্ট, সাধারণ মানুষের চর্চায় তখন ছিল শুধু এই দুই নাম৷

কেটে গিয়েছে ২৫ বছর৷ পেশাদার জীবনে এগিয়ে গিয়েছেন দুজনে৷ ব্যক্তিগত জীবনে দুজনের পথ চলা একেবারেই ভিন্ন৷ তবু সুস্মিতা-ঐশ্বর্যর ফ্যানদের ঠান্ডা লড়াই আজও অব্যাহত৷