Satyajit Ray : 'পথের পাঁচালি'-র শ্যুটিংয়ে ইন্দির ঠাকুরণ অবাক করেছিলেন, ভয় পেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ও
- Published by:Swaralipi Dasgupta
- news18 bangla
Last Updated:
Satyajit Ray : কিংবদন্তি নিজেও বিস্মিত হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। 'পথের পাঁচালি' তৈরি করতে গিয়ে অবাক হয়েছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্র জগতে সত্য়জিৎ রায় ভারতীয় দর্শকের কাছে এক বিস্ময় বললে ভুল বলা হবে না। বিজ্ঞাপনের কাজ ছেড়ে চলচ্চিত্র জগতে এসে কিংবদন্তি নিজেও বিস্মিত হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। 'পথের পাঁচালি' তৈরি করতে গিয়ে অবাক হয়েছিলেন তিনি। আজ ২ মে, সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা যাক সেই ঘটনা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ছবি করছেন। অতএব বইয়ের চরিত্রের সঙ্গে পর্দার চরিত্রের চেহারার মিল থাকা জরুরি। অপু, দুর্গা, সর্বজয়া থেকে প্রসন্ন, সেজোঠাকুরন ও নীলমণির চরিত্রে কারা অভিনয় করবেন সেসব ঠিক ততদিনে। কিন্তু ইন্দির ঠাকুরণের চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, তা ঠিক করতে পারছিলেন না মানিকবাবু।
advertisement
"পচাত্তর বৎসরের বৃদ্ধা, গাল তোবড়াইয়া গিয়াছে, মাজা ঈষৎ ভাঙিয়া শরীর সামনের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে। দূরের জিনিস আগের মতো ঠাহর হয় না"। উপন্যাসে ইন্দির ঠাকুরণের বর্ণনা এমনই দিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন চেহারার বৃদ্ধা পেলেও, তাঁর শরীর যে অভিনয়ে সায় দেবে তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ বয়সটা ৭০-৭৫। এই সময়ে স্মরণশক্তিও লোপ পায়। সংবাদপত্রেও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, ছবিতে মেক আপের ব্যবহার হবে না। অর্থাৎ যুবতী মহিলাকে মেক আপের মাধ্যমে বৃদ্ধা সাজানোর কোনও প্রশ্নই নেই।
advertisement
অবশেষে দেখা চুনিবালা দেবীর সঙ্গে। সত্যজিৎ রায় পরে লিখেছিলেন, "চুনিবালা দেবীকে যেদিন প্রথম তাঁর পাইকপাড়ার বাড়িতে দেখতে যাই, সেদিনকার মনের অবস্থা ভোলবার নয়।" বৃদ্ধার চেহারা দেখেই তিনি কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিলেন। এর পরে চুনিবালা দেবী তাঁর স্মরণশক্তির পরীক্ষাতেও অবাক করেছিলেন পরিচালককে। ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি ছড়ার একটি সম্প্রসারিত সংস্করণ মুখস্থ শুনিয়েছিলেন চুনিবালা দেবী।
advertisement
এর পরে প্রশ্ন ওঠে, ১৫ মাইল দূরের গ্রামে গিয়ে শ্যুটিং করে বাড়ি ফেরা কি প্রবীণার স্বাস্থ্য সায় দেবে? কিন্তু চুনিবালা দেবী দমে যাওয়ার পাত্রী নন। শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লেও, মনোবল শক্ত। অতএব স্থির হলো, ইন্দির ঠাকুরণের ভূমিকায় থাকছেন চুনিবালাই। সত্যজিৎ রায় পরে এক জায়গায় লিখেছিলেন, "এর সন্ধান না পেলে আমাদের পথের পাঁচালি হতো না।"
advertisement
ওই বয়সেও ছবির কন্টিনিটিউইটি বজায় রাখার বিষয়ে সচেতন ছিলেন। আগের শটে পুঁটলি ডান হাতে ছিল নাকি মুখে ঘামের ফোঁটা ছিল এই সব বিষয় প্রায় নিজেই মনে করিয়ে দিতেন বৃদ্ধা। এসব দেখে অবাক হয়েছিলেন মানিকবাবু। ক্রমশ আবিষ্কার হল, চুনিবালা গানও গাইতে পারেন। আরও আশ্চর্যের বিষয়, ইন্দির ঠাকুরণের 'হরি দিন তো গেল, সন্ধ্যা হল' গানটি চুনিবালারই নির্বাচন ছিল। ইন্দির ঠাকুরণের শবযাত্রার দৃশ্যে সেই গানই আবহ সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন পরিচালক।
advertisement
এই শবযাত্রার দৃশ্য ঘিরে অদ্ভুত ঘটনা রয়েছে, যার জন্য সত্যজিৎ রায় নিজেও ভয় পেয়েছিলেন। একবারে রিহার্সাল করে শ্যুটিং শুরু। অবশেষে শট শেষ হওয়ার পরে খাট মাটিতে নামিয়ে দড়ির বাঁধন খোলা হল। কিন্তু চুনিবালা দেবী তখনও স্থির। কোনও নড়ন চড়ন নেই। সত্যজিৎ রায় এক জায়গায় লিখছেন, "আমরা এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করি। ব্যাপার কী!? বুকের ভিতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল।"
advertisement