বক্স অফিসে ফ্লপ, কিন্তু কনটেন্টে সুপারহিট ! ১৯৯৮ সালের ‘সত্য’ এখন বলিউডের কাল্ট ক্লাসিক, কেরিয়ার ঘুরিয়েছিল মনোজ বাজপেয়ীর
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Bollywood Cult Hit Movie : এই ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি এবং লোকেশন এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল যে দর্শকরা আসল এবং নকলের মধ্যে পার্থক্য ভুলে গিয়েছিল।
১৯৯৮ সালে বলিউডে প্রেমের গল্পের ছবিগুলো বক্স অফিসে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, সেরা পাঁচটি ছবি ছিল কুছ কুছ হোতা হ্যায়, পেয়ার তো হোনা হি থা, সোলজার, বড়ে মিয়াঁ ছোটে মিয়াঁ এবং পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া। সেই বছরের জুলাই মাসে একটি অপরাধ জগতভিত্তিক ছবি মুক্তি পায় যা বছরের পর বছর ধরে দর্শকের মনে রাজত্ব করে চলেছে। এই ছবি এখন বলিউডের কাল্ট ক্লাসিক হিসেবে মর্যাদা পায়।
advertisement
রাম গোপাল ভার্মা পরিচালিত ‘সত্য’ ছিল সেই ছবি যা মনোজ বাজপেয়ীকে চিরকালের জন্য রুপোলি পর্দায় প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ফ্লপ ছিল, পুরো এক সপ্তাহ ধরে দর্শক পায়নি। তার পর আচমকাই দর্শকদের ভিড় বাড়তে থাকে এবং সিনেমা হলগুলো ভরে যেতে শুরু করে। ছবিটির প্লট ১৯৭২ সালের হলিউড ছবি দ্য গডফাদার দ্বারা অনুপ্রাণিত। গল্পটিও মুম্বইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। এই ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি এবং লোকেশন এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল যে দর্শকরা আসল এবং নকলের মধ্যে পার্থক্য ভুলে গিয়েছিল।
advertisement
১৯৯৮ সালে রাম গোপাল ভার্মার ছবি সত্য ৩ জুলাই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এক সপ্তাহ পরে ১০ জুলাই, গোবিন্দা-রবিনা টন্ডনের দুলহে রাজা, তার পরে বিধু বিনোদ চোপড়ার করিব এবং ২৪ জুলাই অঙ্গারে এবং পেয়ার তো হোনা হি থা মুক্তি পায়। কমেডি, অ্যাকশন এবং রোম্যান্টিক ছবির আধিক্যের মধ্যে সত্য প্রথমে দর্শক টানতে পারেনি। নির্মাতারা ভেবেছিলেন ছবিটি ফ্লপ হবে। হঠাৎ, এক সপ্তাহ পরে, ঠিক যেন অলৌকিক ঘটনা ঘটে এবং সত্য দেখতে দর্শকের ভিড় বাড়তে থাকে। পেয়ার তো হোনা হি থা বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়ের ছবি হলেও সত্যর জাদু বছরের পর বছর ধরে অম্লান। এখন তা বলিউডের সেরা অপরাধমূলক ছবিগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। ১৯৯৮ সালে বক্স অফিস আয়ের দিক থেকে সত্য ষষ্ঠ স্থানে ছিল।
advertisement
প্রথম দৃশ্য থেকেই সত্য দর্শকদের মনবে দাগ কাটতে শুরু করে। ‘‘মুম্বই কা কিং কৌন? ভিক্ষু মহাত্রে!’’ এই সংলাপটি আজও দর্শকদের মনে আছে। এই ছবিটি রাম গোপাল ভার্মা, অনুরাগ কাশ্যপ এবং সৌরভ শুক্লা এই তিন জনের জন্য সাফল্যের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছিল। এটি বলিউডে বাস্তববাদী সিনেমার একটি ধারা প্রতিষ্ঠা করেছিল। অনুরাগ কাশ্যপ পরবর্তীতে সেই বাস্তববাদের উপর ভিত্তি করে নিজস্ব ছবির ঘরানা তৈরি করেছিলেন।
advertisement
সত্যর বেশিরভাগ অভিনেতাই ছিলেন নতুন। রাম গোপাল ভার্মা পরবর্তীতে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে আরেকটি কাল্ট ফিল্ম কোম্পানি তৈরি করেন। সত্যর সহ-লেখক ছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ এবং সৌরভ শুক্লা। ছবিটিতে আন্ডারওয়ার্ল্ডকে খুব কাছ থেকে দেখানো হয়েছে।সত্য ছবিতে অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপেয়ী, জে ডি চক্রবর্তী, সৌরভ শুক্লা, পরেশ রাওয়াল, ঊর্মিলা মাতন্ডকর, গোবিন্দ নামদেব, শেফালি শাহ, নীরজ ভোরা এবং সুশান্ত সিং। বিশাল ভরদ্বাজের সুরে সপনে মে মিলতি হ্যায় গানটির আবেদন এখনও অটুট।
advertisement
মনোজ বাজপেয়ীই অনুরাগ কাশ্যপ এবং রাম গোপাল ভার্মার পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ হয় এক ককটেল পার্টিতে। পার্টিতে অনুরাগ কাশ্যপ রাম গোপাল ভার্মার সিনেমার সমালোচনা করেছিলেন। অনুরাগের আচরণে মনোজ হতবাক হয়েছিলেন, কিন্তু রাম গোপাল ভার্মা তাঁর সমালোচনা পছন্দ করেছিলেন। ফলে, তাঁদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়।
advertisement
অনুরাগ কাশ্যপ সত্য ছবির গল্প লেখার জন্য সৌরভ শুক্লার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আসলে, অনুরাগ সত্যর গল্পটি শেষ করতে পারছিলেন না। রাম গোপাল ভার্মা তখন তাঁকে অন্য একজন লেখক খুঁজে বের করতে বলেন। অনুরাগ সৌরভ শুক্লার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রাম গোপাল ভার্মা তাঁকে কাল্লু মামার ভূমিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন এবং গল্পটিও বর্ণনা করেন। সৌরভও ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুশি হন।সত্য ছবিটি মনোজ বাজপেয়ীর কেরিয়ারের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে প্রমাণিত হয়। ভিখু মহাত্রে নামটি চিরকালের জন্য যেন তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। মনোজ এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি তাঁর শহর বেত্তিয়ার একজন বিশিষ্ট অপরাধীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। জ্যাকেট, তার শার্টের খোলা বোতাম- তিনি এই সব কিছুই ভিখু চরিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
