Satyajit Ray Birth Centenary: অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে দাঁতের গঠনও বদল, ‘অপরাজিত’ সত্যজিৎকে কুর্নিশ জিতু-অনীকের, দেখুন ছবি

মাইলফলক ছোঁয়ার আগে সংগ্রাম পর্বে থাকে অক্লান্ত পরিশ্রমের স্বেদবিন্দু৷ সেই বিন্দুতে সিন্ধুদর্শনের প্রয়াস হল ‘অপরাজিত’৷ স্রষ্টার ছবির নামেই তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন অনীক দত্ত৷ ছবি মুক্তি পাবে ১৩ মে৷

বিজ্ঞাপন ও বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পীর দুনিয়া থেকে ছবির জগতে পা রেখেছিলেন সত্যতিৎ রায়৷ নবীন পরিচালক হিসেবে স্বপ্ন দেখেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’-কে সেলুলয়েডবন্দি করার৷

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টির কিশোর সংস্করণ ‘আম আঁটির ভেঁপু৷’ বইটির প্রচ্ছদ আঁকার সময় উপন্যাসটি পড়েছিলেন সত্যজিৎ৷ সেখান থেকেই ছবির তৈরির ইচ্ছে দানা বাঁধে মনে৷

কিন্তু নবীন পরিচালক হিসেবে প্রথম ছবি তৈরির পথ ছিল বন্ধুর৷ নায়ক নায়িকার বাইরে, নাচগানহীন একটি বাংলা ছবি তৈরির প্রস্তুতিপর্ব তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল৷ তাঁর সেই সংগ্রাম তথা সৃষ্টিকে কুর্নিশ জানিয়েছেন অনীক৷

ছবিতে সত্যজিতের চরিত্রে জিতু কামালকে নেওয়ার পর অনেকেরই ভ্র কুঞ্চিত হয়েছিল৷ কিন্তু চূড়ান্ত রূপসজ্জার পর জিতুর রূপ দেখে বাকরুদ্ধ সকলে৷ একবাক্যে স্বীকার করেছেন অনস্ক্রিন এর থেকে ভাল সত্যজিৎ রায় আর হত না৷

স্বামীর কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পিছনে বিজয়া রায়ের ভূমিকাও অনস্বীকার্য৷ সত্যজিতের প্রতি
সৃষ্টিতে জড়িয়ে থাকতেন তিনি৷ তাঁর অবদানকেও তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে৷

চেহারায় সব দিক থেকে সত্যজিৎ হয়ে ওঠার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি জিতু৷ প্রস্থেটিক মেক আপ তো বটেই৷ তাঁর আরও প্রয়াসের কথা তুলে ধরেছেন স্ত্রী নবনীতা৷

সামাজিক মাধ্যমে নবনীতা জানিয়েছেন, সত্যজিতের দাঁতের গঠনের সঙ্গে সাদ্ৃশ্য আনার জন্য ড্রিলিং মেশিন দিয়ে ছোট করা হয়েছে জিতুর দাঁত৷ উপরের পাটিতে সামনের দু’টি দাঁতের মাঝে আনা হয়েছে সামান্য দূরত্ব৷

নবনীতা জানিয়েছেন, এর জন্য অসহ্য যন্ত্রণা মুখ বুজে সহ্য করেছেন জিতু৷ তাঁর দাঁত চিরদিনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে৷ বাদ দিতে হয়েছে পছন্দসই অনেক খাবারও৷

এ কথা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর উড়ে আসে তির্যক মন্তব্য৷ তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী৷

ছবির ট্রেলর দেখে ভাল লেগেছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়েরো৷ তাঁকে সামাজিক মাধ্যমে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জিতু৷

সাদা কালোয় তৈরি ‘অপরাজিত’-র শ্যুটিং শেষ হয় ডিসেম্বরে৷ এখন সত্যজিৎ অনুরাগীরা অপেক্ষায়৷

কিছু দিন আগেই মুক্তি পেয়েছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘অভিযান’৷ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের এই বায়োপিকে সত্যজিতের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরিচালক কিউ৷ কিউ না জিতু? সত্যজিতের ভূমিকায় কে বেশি মানানসই, সেই তুলনাও আসবে বলে ধারণা বাংলা ছবির দর্শকদের৷

‘অপরাজিত’ ছবিতে জিতুর নাম অবশ্য সত্যজিৎ নয়৷ তিনি এখানে অপরাজিত রায়৷ ডাকনাম মানিক নয়, অপু৷ এভাবেই স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে মিশিয়েছেন পরিচালক অনীক৷

তাঁর অর্ধাঙ্গিনী বিজয়া এখানে বিমলা রায়৷ অভিনয় করেছেন সায়নী ঘোষ৷ তাঁকেও চমৎকার মানিয়েছে বলে মত চলচ্চিত্র অনুরাগীদের৷

সবথেকে বড় চমক অনীক রেখেছেন ইন্দির ঠাকুরণের ভূমিকায়৷ মঞ্চের এক বর্ষীয়ান অভিনেতাকে ইন্দির ঠাকরুন সাজিয়েছেন অনীক৷

সত্যজিৎ রায়ের মা সুপ্রভা রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অনসূয়া মজুমদার৷ তাঁর নাম এ ছবিতে সুরমাদেবী৷

এ ছবিতে দুর্গার ভূমিকায় দেখা যাবে অনুষা বিশ্বনাথনকে৷ দুর্গার নাম এখানে উমা৷

অপু অর্থাৎ ছবির মানিককে পরিচালক খুঁজে পেয়েছেন আয়ুষের মধ্যে৷

সর্বজয়ার চরিত্র ফুটিয়ে তুলবেন অঞ্জনা বসু৷ তবে সর্বজয়া নামটিও এখানে পাল্টে সর্বমঙ্গলা করে দেওয়া হয়েছে৷ হরিহরের নাম পরিবর্তন করে করা হয়েছে হরিমাধব৷ সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভ্রতাভ দত্ত৷

এছাড়াও এই ছবির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বরুণ চন্দ৷ ছবিতে তাঁদের নাম যথাক্রমে বিমান রায় ও ভরত কল৷ চরিত্রদুটি করা হয়েছে বিধানচন্দ্র রায় ও জওহরলাল নেহরুর আদলে৷

সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে অনীক দত্তের এই শ্রদ্ধার্ঘ্যের প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান ও প্রবাল হালদার তথা ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন৷

চরিত্রের সঙ্গে পাল্টে দেওয়া হয়েছে ‘পথের পাঁচালী’ ছবির নামও৷ এখানে সে ছবি ‘পথের পদাবলী’৷

নিশ্চিন্দিপুরে মাটি, কাশফুল, রেললাইন ঘুরে ফিরে এসেছে ‘অপরাজিত’ জুড়ে৷

বাঙালির নস্টালজিয়া বুনতে, মাইলফলক স্থাপন করতে পরিচালকের নিজের পথের পাঁচালিই যেন পাঠ করা হয়েছে ছবি জুড়ে৷