সার্কিট-কে মনে আছে তো! সার্কিট মানে সেই ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে মুন্নার ডান হাত। বলতে গেলে যাঁকে ছাড়া প্রায় অচল মুন্নাভাই। সেই সার্কিটের চরিত্রে অভিনয় করে ভক্তদের ভালোবাসা অর্জন করেছেন অভিনেতা আরশাদ ওয়ারসি। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করলেও তাঁর কমিক টাইমিংয়ের জন্য তিনি আলাদা করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তবে বি-টাউনে তাঁর কেরিয়ারের সফরটা কিন্তু খুব একটা মসৃণ ছিল না।
রুপোলি জগতে পায়ের তলার জমি শক্ত করতে বেজায় স্ট্রাগল করতে হয়েছে অভিনেতাকে। আবার ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যায় যে, আরশাদের উত্থানে বচ্চন পরিবারের বিশেষ অবদান রয়েছে। শুনে নেওয়া যাক, আরশাদ ওয়ারসির জীবনের সেই স্ট্রাগলের গল্প। ১৯৬৮ সালে মহারাষ্ট্রের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম আরশাদ ওয়ারসির। শৈশবেই হারিয়েছেন বাবাকে। যখন তাঁর বয়স মাত্র ১৪ বছর, সেই সময় মা-কেও হারিয়েছেন তিনি। স্বভাবতই বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর পরিবার ভেঙে পড়ায় অনাথ হয়ে পড়েন আরশাদ। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, বাড়িওয়ালা তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। টাকার অভাবে খুব বেশি দূর পড়াশোনাও করতে পারেননি অভিনেতা।
দশম শ্রেণির গণ্ডি পার করে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়েন তিনি। একটি কসমেটিক সংস্থায় সেলসম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর। সেই সময় লিপস্টিক, নেলপালিশ ও চুড়ির মতো জিনিস বিক্রি শুরু করেন আরশাদ। থাকতেন এক কামরার চিলতে একটা ফ্ল্যাটে,সঙ্গে থাকতেন তাঁর ভাইও। এক বার এক সাক্ষাৎকারে আরশাদ তাঁর জীবনের কথা বলতে গিয়ে জানান, অনেক সময়েই খাবারের টাকাও থাকত না। ফলে উপোস করেই কাটাতে হত দুই ভাইকে। তবে শেষমেশ ভাগ্য বদলে যায় জয়া বচ্চনের কারণে।
১৯৯৩ সালে তিনি ‘রূপ কি রানি চোর কা রাজা’ ছবির টাইটেল ট্র্যাকে কোরিওগ্রাফ করার সুযোগ পান। এ-ছাড়াও ১৯৮৭ সালে ‘ঠিকানা’ এবং ‘কাশ’-এর মতো ছবিতে মহেশ ভাটের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছিলেন আরশাদ। তবে জয়া বচ্চনের সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে ধীরে ধীরে তাঁর ভাগ্যের পরিবর্তন শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে ‘তেরে মেরে সপনে’ ছবির হাত ধরে মুখ্য অভিনেতা হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন আরশাদ। ছবিটি বক্স অফিসে সাফল্যও পায়। শোনা যায়, জয়া বচ্চনই এই ছবি করার প্রস্তাব আরশাদ ওয়ারসির সামনে রেখেছিলেন। অমিতাভ বচ্চনের প্রোডাকশন হাউসের ব্যানারে তৈরি হয়েছিল এই ছবিটি।
তবে বলা হয়, ২০০৩ সালের ছবি ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ এবং ২০০৬ সালে রিলিজ হওয়া ‘লাগে রহো মুন্না ভাই’ থেকেই আরশাদের প্রকৃত কেরিয়ারের সূত্রপাত। ওই ছবিতে ‘সার্কিট’ চরিত্রে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পান তিনি। এর পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেতাকে। এই ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পেয়েছিলেন। এর পর ২০১৩ সালের ‘জলি এলএলবি’ ছবিতে তাঁর অভিনয়ও প্রশংসা কুড়িয়েছে। ‘গোলমাল’, ‘ইশকিয়া’ এবং ‘দেড় ইশকিয়া’ ছবিতে তাঁর অভিনীত ভূমিকা সমালোচক ও দর্শকদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছে।
বর্তমানে আরশাদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১১১ কোটি টাকা। আর তাঁর বার্ষিক আয় ১০ কোটিরও বেশি। স্ত্রী মারিয়া এবং সন্তানদের নিয়ে সুখের সংসার তাঁর, থাকেন মুম্বইয়ের একটি বিলাসবহুল বাড়িতে।