

দ্য ইউনাইটেড স্টেটস। বিশ্ব মানচিত্রে সমীহ জাগানো নামটাই এখন করোনার ছোবলে কুঁকড়ে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। শুধু নিউইয়র্কেই আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪০ হাজারের কাছাকাছি। মৃত প্রায় ৫ হাজার। Story: PARADIP GHOSH


নিউজার্সিতে আক্রান্ত ৪১ হাজার মানুষ। মৃত এক হাজারের ওপর।ছবির মতো সাজানো নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, মিচিগান, পেনসিলভানিয়ায় এখন শ্মশানের নীরবতা-নিস্তব্ধতা! বিশ্ব মানচিত্র বাহুবলি ইউনাইটেড স্টেটসে এই অবস্থা হতে পারে, কে ভেবেছিল! মৃত্যুর ভয়াবহতায় ইতালি-স্পেনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে ইউনাইটেড স্টেটস।


করোনার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড মার্কিন মুলুকের সাধারণ জীবনযাত্রা। কিন্তু কেন এমন হল ? কলকাতার সল্টলেকের সূর্য চৌধুরী কর্মসূত্রে এখন নিউজার্সির এডিসনের বাসিন্দা। গত এক দশক ধরে নিউজার্সির ব্যাঙ্কে উচ্চ পদে কর্মরত সূর্য বলছিলেন,"করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা বুঝতে দেরি হয়েছে। গলদের শুরুটা ওখানেই। তবে এখন এখানে ১০০ শতাংশ লকডাউন চলছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। দেখা যাক, শুরুর ভুলটা সামলে নিতে কতদিন লাগে।"ইতালি, স্পেন যে ভুলটা করেছিল সেই একই ভুল করেছে মার্কিনিরা। প্রথম দিকে গুরুত্ব দেয়নি। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে পা রেখে তারই মাশুল গুণছে বিশ্ব মানচিত্রে বাহুবলি ইউনাইটেড স্টেটস। চিনের সঙ্গে বিস্তৃত আকারে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্কের কারণে মার্কিন মুলুকে গতি বাড়ায় বাড়িয়েছে মারণ ভাইরাস করোনা।


দেশের উন্নত অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর স্থিতাবস্থা ধরে রাখতে চিনের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা। বাণিজ্যিক সম্পর্কে বিধি-নিষেধ আরোপ করলে হয়তো বা করোনা তাণ্ডবে রেহাই মিলত। কিন্তু সেটাও যে হয়নি! চিনে করোনা হামলার পরেও সে দেশ থেকে চিনারা বিনা বাধায় ঢুকেছেন মার্কিন মুলুকে। সর্বনাশের সেই শুরু। উত্তর-পূর্ব আমেরিকায় করোনার প্রকোপ সবথেকে বেশি। নিউইয়র্ক, বোস্টন, পেনসিলভানিয়ার মত জায়গাগুলোতে প্রতিদিনই করোনার বলি হচ্ছেন শয়ে শয়ে মানুষ।প্রশাসন এখন অনেক কড়া। জরুরী ব্যবস্থা ছাড়া লকডাউনে ছাড় নেই অন্য কোন কিছুর। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে লকডাউনের বাইরে রাখা হয়েছে অ্যালকোহলকে। মদের দোকান খোলা রেখেছে মার্কিন প্রশাসন।


ইস্টবেঙ্গলের কট্টর সমর্থক সূর্য বলছিলেন,"১৫ দিন আগে এটা হলে করোনার ধাক্কায় বেসামাল হতে হত না।" পেনসিলভানিয়া, নিউজার্সি থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০০ টা উড়ান যাতায়াত করত ইতালি সহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে। আর তাতেই করোনার প্রকোপ বেড়েছে হু হু করে। প্রথম অবস্থায় রাত আটটা টা থেকে ভোর পাঁচটা অবধি কারফিউ জারি করেছিল মার্কিন প্রশাসন। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাচ্ছে দেখে এখন সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত। গত দুই সপ্তাহ ধরে লকডাউনের মধ্যেই রয়েছেন সূর্যরা।


ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে। রয়েছে একরাশ দুঃশ্চিন্তা। কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন। প্রশাসনিক অনুশাসনে আস্থা রয়েছে সূর্যদের মত প্রবাসীদের। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেটাই তো আম আদমির জিয়নকাঠি। ফোন রাখার আগে বন্ধু সূর্যর করুন আর্তি, "কলকাতাকে ভাল রাখিস ভাই! এই শহর জানে আমাদের প্রথম সব কিছু।" হোয়াটসঅ্যাপ কলে এই প্রথম কেঁপে যায় প্রবাসী বাঙালির গলা! মার্কিন মুলুকে এক দশক কাটিয়েও বাঙালিয়ানায় টোল পড়েনি বিধাননগরের কাঠ বাঙাল ছেলেটার।