গোটা দেশে রমরমিয়ে চলত তাঁর কোম্পানির ১৬০০টিরও বেশি আউটলেট! যার মূল্য ছিল প্রায় ৩৫০০ কোটি টাকা, এহেন দুর্ধর্ষ ব্যবসায়ীর জীবন এখন কাটছে গরাদের পিছনে
- Published by:Siddhartha Sarkar
- news18 bangla
Last Updated:
আইআইটি মাদ্রাজ এবং আইআইএম থেকে পড়াশোনা, একাধারে প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যদিকে একজন ব্যাঙ্কার সিআর সুব্রহ্মণ্যমের (CR Subramanian)। পড়াশোনার সময় থেকেই প্রচুর স্বপ্ন দেখতেন। তবে ভাগ্যের ফেরে আজ তাঁর জীবন কাটছে গরাদের পিছনে। কিন্তু কীভাবে এমনটা ঘটল, শুনে নেওয়া যাক সেই কাহিনিই।
সিআর সুব্রহ্মণ্যমের (CR Subramanian) জীবনের গল্পটা কোনও বলিউডি ছবির তুলনায় কিছু কম নয়। দুর্ধর্ষ উত্থান থেকে শুরু করে সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান, তারপর সেই চূড়া থেকে পতন - সমস্ত উপাদানই রয়েছে তাঁর কাহিনিতে। আইআইটি মাদ্রাজ এবং আইআইএম থেকে পড়াশোনা, একাধারে প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যদিকে একজন ব্যাঙ্কার তিনি। পড়াশোনার সময় থেকেই প্রচুর স্বপ্ন দেখতেন। তবে ভাগ্যের ফেরে আজ তাঁর জীবন কাটছে গরাদের পিছনে। কিন্তু কীভাবে এমনটা ঘটল, শুনে নেওয়া যাক সেই কাহিনিই।
advertisement
১৯৯১ সালে নিজের প্রথম সংস্থা খুলেছিলেন সুব্রহ্মণ্যম। যার নাম ছিল বিশ্বপ্রিয়া ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস। এটা ছিল আসলে নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি)। মূলত বিনিয়োগের স্কিমের মাধ্যমে মানুষের থেকে টাকা তুলেছিল এই সংস্থাটি। ফলে ছিল একাধিক বিনিয়োগের স্কিম। এর মধ্যে অন্যতম হল - Prime Invest, Asset Backed Security Bond, Liquid Plus এবং Safety Plus। এই সমস্ত রিটার্ন স্কিমে বিনিয়োগকারীদের প্রচুর রিটার্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। যা সাধারণ ব্যাঙ্ক কিংবা অন্যান্য স্কিমের তুলনায় অনেকটাই বেশি। সংস্থাটির দাবি ছিল, এই স্কিমগুলি নিরাপদ এবং লাভজনক। তবে হাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বপ্রিয়াতে ৫৮৭ জন বিনিয়োগকারী ১৩৭ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন মধ্যবিত্ত, ছোট ব্যবসায়ী এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী।
advertisement
রিটেল চেন সুভিক্ষা (Subhiksha): ১৯৯৭ সালে সুভিক্ষা নামে একটি রিটেল চেন খুলেছিলেন সিআর সুব্রহ্মণ্যম। তাঁর লক্ষ্য ছিল, সাধারণ মানুষের জন্য একটা সস্তার এবং সুবিধাজনক রিটেল স্টোর হওয়া উচিত সুভিক্ষা। কম দাম এবং বেশি সেল রাখাই ছিল তাঁর ব্যবসায়িক কৌশল। ভারতের প্রতিটি কোণায় দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর রিটেল চেন। সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রসারি দ্রব্য, ফল, শাকসবজি, ওষুধ এবং এফএমসিজি সামগ্রী পাচ্ছিলেন গ্রাহকরা। কয়েক বছরের মধ্যে সারা দেশে ১৬০০টিরও বেশি সুভিক্ষা খোলা হয়। এর ফলে সংস্থার মূল্যও ৩৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছে যায়। এমনকী আজিম প্রেমজি, আইসিআইসিআই ভেঞ্চার্স এবং কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের মতো বড় বিনিয়োগকারীর সহায়তা পেয়ে গিয়েছিলেন সিআর সুব্রহ্মণ্যম।
advertisement
১৫-২০ শতাংশ সুদের প্রলোভন: সুভিক্ষার জাঁকজমকের পিছনেই গোপন ছিল আসল সত্যিটা। বিশ্বপ্রিয়ার মাধ্যমে একাধিক বিনিয়োগকারীর থেকে প্রচুর টাকা তুলেছিলেন সুব্রহ্মণ্যম। বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করতে দুর্ধর্ষ মার্কেটিং কৌশল এবং ব্যক্তিগত কানেকশনও ব্যবহার করেছিল ওই সংস্থা। তবে বিনিয়োগকারীদের এটা বলা হয়নি যে, তাঁদের টাকা সুভিক্ষা রিটেল চেন অথবা অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। যেখান থেকে রিটার্নের কোনও নিশ্চয়তা নেই। টাকা রিটার্নের সময় এলে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুরনো বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হত।
advertisement
advertisement
২০১৫ সালের পর সুব্রহ্মণ্যমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে Economic Offences Wing (EOW)। তদন্তে জানা যায় যে, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা থেকে ৭৭ কোটি টাকা লোন নিয়েছিলেন তিনি। সেটা পরিশোধ করেননি। এরপর ২০১৮ সালে আর্থিক তছরুপের দায়ে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর চেন্নাইয়ের এক বিশেষ আদালত সুব্রহ্মণ্যম ও তাঁর সহযোগীদের দোষী সাব্যস্ত করে। ২০ বছরের জেল হয় সুব্রহ্মণ্যমের। সেই সঙ্গে তাঁর দু’টি সংস্থার উপর ৮.৯২ কোটি টাকা এবং ১৯১.৯৮ কোটি টাকার জরিমানা চাপানো হয়। এই জরিমানা থেকেই বিনিয়োগকারীদের ১৮০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।