ব্যবসা বাড়াতে হলে কোনও জিনিসের ব্র্যান্ডিং ঠিকমতো হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, এই ব্র্যান্ডিং ঠিকঠাক হলেই তবে, তা বাজারে নিজস্ব পরিচিতি পায়৷ বাজার চলতি অন্য প্রডাক্টের থেকে আলাদা হয়ে নিজের পরিচয় তৈরি করে৷ তাই এই ব্র্যান্ডিং বিষয়টি যে কোনও ব্যবসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷ কিন্তু, জানেন কি, এই সমস্ত ব্র্যান্ডিং, নামকরণের পিছনে দীর্ঘ গবেষণা, পরিকল্পনা এবং অধ্যাবসায় থাকে৷ এই এক একটি নাম, কেবল এক একটি শব্দ নয়৷ দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল৷ এই প্রতিবেদনে আমরা এমন ৮টি এমন প্রডাক্টের নামকরণের ইতিহাস বলব, যা এখন আমাদের অনেকেরই নিত্যদিনের জীবনের সঙ্গী ৷ (ছবি: টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম)
উবার- ক্যাব বুকিং সংস্থা উবার-এর নাম এখন আমরা কম বেশি সকলেই জানি। হলুদ ট্যাক্সির কলকাতায় উবার এখন অনেকেরই পছন্দের এবং প্রয়োজনের। কিন্তু এই উবার কথার অর্থ কী জানেন? উবার হল একটি জার্মান শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার বানান über। এর অর্থ - উপরে মানে অন্যদের চেয়ে যা ভাল। ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাভিস কালানিক এবং গ্যারেট ক্যাম্প এই সংস্থাটি শুরু করেছিলেন। (ছবি: ক্যানভা)
ওলা- ১০১০ সালে, উবারের মতোই, ওলা নামে একটি সংস্থা শুরু হয়েছিল ভারতে। এটি শুরু করেছিলেন ভবীশ আগরওয়াল এবং অঙ্কিত ভাটি নামের দুই ব্যক্তি। এটির নামটিও খুব অদ্ভুত এবং অবশ্যই আকর্ষণীয়৷ উচ্চারণেও সহজ। ওলা নামটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ থেকে। স্পেনে 'হ্যালো' কে 'হোলা' বলা হয়। কিছু জায়গায় 'ওলা'ও বলে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতারাও এই হোলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কোম্পানির নামকরণ করেন ওলা। (ছবি: @Olacabs/Twitter)
পেপসোডেন্ট- পেপসোডেন্টের ভারতের একটি অন্যতম পরিচিত টুথপেস্ট। ইউনিলিভার সংস্থা এটি তৈরি করে। ইংরেজি শব্দ 'ডেন্ট' আসলে ডেন্টিস্ট্রি থেকে এসেছে, অন্যদিকে 'পেপসো' শব্দটি 'পেপসিন' থেকে এসেছে। পেপসিন প্রোটিন ভঙ্গকারী এক ধরনের উৎসেচক। এই পদার্থ দাঁতে আটকে থাকা খাবারের কণা ধ্বংস করে দাঁত পরিষ্কার করে। এটি টুথপেস্ট আমেরিকায় ১৯১৫ সালে তৈরি হওয়া শুরু হয়েছিল। (ছবি: ইনস্টাগ্রাম/সুখেকমার্স)
কোলগেট- কোলগেট বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দাঁতের মাজন প্রস্তুতকারী সংস্থার মধ্যে একটি৷ পেপসোডেন্টের আগেও, এই ব্র্যান্ড তৈরি হয়েছিল ১৮৭৩ সালে, আমেরিকায়। পামোলিভ সংস্থা এই কোলগেটের নির্মাতা। কিন্তু ব্র্যান্ডের নাম কোলগেট হল কেন? আসলে, সংস্থার প্রতিষ্ঠাতার নাম ছিল উইলিয়াম কোলগেট, যার নামানুসারে ব্র্যান্ডটির নামকরণ করা হয়েছিল। (ছবি: Instagram/savers_st.helens)
ম্যাগি- এবার সেই নুডলসের কথা বলা যাক যা শুধু বাচ্চাদেরই নয়, বড়দেরও পছন্দের। বিশ্বজুড়েই লোকজন নেসলে সংস্থার নাম জানে। এই সংস্থাই ম্যাগি তৈরি করে৷ কিন্তু আপনি কি জানেন, এই প্রডাক্টের উৎপাদন কবে শুরু হয় এবং এর নামকরণ কী ভাবে হয়? ১৮০০ সাল নাগাদ উৎপাদন শুরু হয় বলে শোনা যায়৷ কিন্তু নামটা কীভাবে এল? এই ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতার নাম ছিল জুলিয়াস ম্যাগি। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন উৎসটা। (ছবি: Twitter/@TreasureOrbit)
বাটা- জুতোর কথা উঠলে বাঙালির মাথায় প্রথমেই যে নামগুলো আসে তার মধ্যে অন্যতম হল বাটা। এটি একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড৷ কিন্তু এর নামও একই রকম অদ্ভুত। আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন কীভাবে এই জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থার এই নাম এল? ১৮৯৪ সালে, চেকোস্লোভাকিয়ায় শুরু হয় এই বাটা সংস্থা। এর প্রতিষ্ঠাতার নাম ছিল থমাস বাটা। শোনা যায়, একসময় এই থমাস বাটা জুতো সেলাই করতেন। পরে ধীরে ধীরে জুতো তৈরি শুরু করেন৷ পরে বাটার তৈরি জুতো সারা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। (ছবি: @PeshK319/Twitter)
ফেভিকল- ভারতে জন্মগ্রহণকারী বলবন্তরে কল্যাণজি পারেখ শুরু করেন পিডিলাইট কোম্পানি৷ এই সংস্থাই ফেভিকল তৈরি করে। বলবন্তে পারেখ আগে ফেডকো কোম্পানিতে কাজ করতেন এবং সেই সময়ে জার্মানিতে মুভিকল নামে আঠা বিক্রি করতেন। শুধু মুভিকলের কথা মাথায় রেখে, ফেডকো থেকে 'ফেভি' তৈরি হয়েছে এবং এতে আরও যুক্ত হয়েছে জার্মান শব্দ 'কল' যার অর্থ দুটি জিনিসের সাথে মিলিত হওয়া। সেই থেকেই ফেভিকল৷ (ছবি: Twitter/@StuckByFevicol)
পার্লে জি- আসলে G মানে গ্লুকোজ৷ কারণ, এই বিস্কুট গ্লুকোজ দিয়ে তৈরি বিস্কুট। ১০২৯ সালে, মোহনলাল দয়াল চৌহান স্বদেশি আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি ভারতীয় মিষ্টির দোকান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মুম্বইয়ের কাছে ইরলা এবং পারলা গ্রামের মধ্যে একটি বিস্কুট তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। গ্রামের নামের সঙ্গে যোগ করে তিনি কোম্পানির নামও রাখেন পার্লে। (ছবি: @waveringmindz/Twitter)