#পশ্চিম মেদিনীপুর: মেদিনীপুরের শালবনিতে আজও পূজিত হন অসুর। কারণ, এখানকার পূজারিরা আজও মনে করেন যে তথাকথিত ‘খলনায়ক’ অথচ তাঁদের কাছে দেবরূপী অসুরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল। এসব শুনলে চমকে উঠবেন যে কোনও মানুষই। কিন্তু এধরনেরই ব্যতিক্রমী পুজো দেখা যায় শালবনিতে।
দেবী দুর্গা অসুর হিসাবে যাঁকে বধ করেছিলেন সেই মহিষাসুরের পুজো করছেন ওঁরা। করেন স্মরণসভাও। নানা অকথিত কাহিনী তুলে ধরা হবে ওঁদের সমাজের মানুষের কাছে। ওঁরা মানে আদিবাসী, কুরমি সম্প্রদায়ের একাংশ। দুর্গা নয়, মহিষাসুরকেই দেবতাজ্ঞানে মনে মনে পুজো করেন তাঁরা। এখনও তাঁদের বিশ্বাস, হুদুড় দুর্গা তথা মহিষাসুরকে কোনও প্রকৃত যুদ্ধের মাধ্যমে পরাস্ত করা হয়নি। নীতিহীন যুদ্ধে পরাস্ত করে তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল। তাই তাঁরা আজও মহিষাসুরকেই দেবতা বলে মানেন। যাঁর হাতে মহিষাসুর বধ হয়েছিলেন, সেই দুর্গাকে তাঁরা আজও ‘বিদেশি’ বলেই মানেন।
আর সেই বিশ্বাসকে ভর করেই গত দু’বছর থেকে প্রকাশ্যে ওই পুজো ও স্মরণসভার আয়োজন করা হচ্ছে। স্মরণসভা উপলক্ষে মহিষাসুরের মূর্তি গড়া হয়। ওই মূর্তির সামনেই ইতিহাস তুলে ধরেন আদিবাসী সমাজের কর্তাব্যক্তিরা। শালবনির কেন্দাশোল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ওই অসুর স্মরণের আয়োজন করে এম কে খেরয়াল রাস্কৌ মহল। সপ্তমীর দিনই হয় ওই পুজো। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা কৃষ্ণকান্ত মাহাতো, সভাপতি রাজু সরেন, সম্পাদক কমল হাঁসদা, রাম হাঁসদারা জানান, তাঁরা আজও মনে করেন যে আদিবাসীদের আদি পুরুষ অনার্য সম্প্রদায়ের হুদুড় দুর্গা তথা মহিষাসুর এক বিদেশি আর্য রমণীর দ্বারা অন্যায়ভাবে নিধনের ফলে ভারতের ভূমিপুত্র আদিবাসী খেরওয়ালরা দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারিয়েছিল।
ইতিহাস থেকে তাঁরা জেনেছেন, মহিষাসুরকে নীতিহীন যুদ্ধে পরাস্ত করে আর্যাবর্ত নামে আর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর্যপক্ষ যখন বিজয় উৎসবে মেতে উঠেছিল সেই সময় সাঁওতাল, মুণ্ডা, কোল, কুরমি, মাহালি, কোড়া-সহ খেরওয়াল গোষ্ঠীর আদিবাসীরা তাঁদের বশ্যতা স্বীকার না করে নিজেদের মান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে নারীর ছদ্মবেশে দাঁশাই নাচ ও কাঠিনাচের মাধ্যমে অন্তরের দুঃখ নিয়ে আনন্দের অভিনয় করতে করতে সিন্ধুপাড় ছেড়ে অসম, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও দক্ষিণ ভারতের বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। সেই মহান রাজার নিধন ও দেশ হারার বেদনা বুকে নিয়ে সেই থেকেই আদিবাসীরা তাঁদের পিতৃপুরুষ মহিষাসুরের স্মরণে ‘হায় রে হায় রে’ শব্দযোগে আজও দাঁশাই নাচ ও কাঠিনাচ করে চলে।
আরও পড়ুন: করা হচ্ছে যান নিয়ন্ত্রণ, কার্নিভালের বিশেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি জেলায়!
সাঁওতালি দাঁশাইয়ের বিধি অনুযায়ী, ওইসময় পাঁচদিন দেবী দুর্গার মুখ দর্শন বন্ধ ছিল। এখনও অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠী শোকপালন করতে গিয়ে ওই দিন গুলিতে বাড়ি থেকে বের হন না। এই দুর্গোৎসব শুভ শক্তির পরাজয় ও অশুভ শক্তির জয়ের পুজো। তাই তাঁরা দুর্গার বদলে মহিষাসুরকেই আসল দেবতা মনে করে সপ্তমীর দিন তাঁকে স্মরণ করে শহিদ দিবস পালন করে থাকেন। শালবনির এই পাড়ায় তাই আজও দুর্গোৎসবের দিনগুলি কাটে এমন শোকে, চোখের জলে, হাহাকারে।
Partha Mukherjee
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Kendasho, Salboni, West Midnapore