Paschim Medinipur: মাষ্টার ডিগ্রি নিয়েও পাওয়া যায়নি চাকরি
- Published by:Soumabrata Ghosh
Last Updated:
বহু সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি ফর্ম ফিল-আপ করে দৌড়ে গিয়েছি চাকরির জন্য। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চাকরি কিছুতেই হয়নি। স্বামী যখন ছিলেন তখন সমস্যা হয়নি ৷ কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর ওই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। তাই এই কাজই শুরু করলাম। ক?
মেদিনীপুর: না ডান, না বাম ৷ যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, চাকরি পাননি বহু শিক্ষিত ছেলেমেয়ে। ডিগ্রির ফাইল হাতে নিয়ে চাকরির খোঁজে এ কোম্পানি থেকে ও কোম্পানি হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার বেকার। জুটছে না চাকরি মিটছে না বেকারত্বের জ্বালা। তাই বেকারত্বের জ্বালা বড়বড় ডিগ্রিধারীদেরও নিয়ে এসে দাঁড় করাচ্ছে রাস্তায়। কেউ স্নাতক হয়ে চালাচ্ছে ফুটপাতে ফাস্ট ফুডের দোকান, তো কেউ মাষ্টার ডিগ্রি নিয়ে বেচছে চা। সে রকমই এক নারীর দেখা মিললো মেদিনীপুর হেড পোস্ট অফিসের গেটের বাইরে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শহর মেদিনীপুরের খাপ্রেল বাজারের স্নাতকোত্তর গৃহবধূ সুদেষ্ণা দাস। মাস্টার ডিগ্রি (masters in History) নিয়েও মেদিনীপুর হেড পোস্ট অফিসের বাইরে রাস্তায় বসে আঁধার কার্ডের ফর্ম পুরন করেই চালাতে হয় সংসার। কি এমন ঘটলো সুদেষ্ণার জীবনে ? তা জানতে কথা বললাম সুদেষ্ণার সাথে। জানতে পারলাম এই উচ্চশিক্ষিত গৃহবধূর করুন জীবন কাহিনী। বছর দশেক আগে জঙ্গলমহল চাঁদড়ার সুদেষ্ণার বিয়ে হয় মেদিনীপুর খাপ্রেল বাজারের মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অভিজিৎ দাসের সঙ্গে। সুদেষ্ণা অভিজিৎ এর ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। বছর তিনেক আগে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সুদেষ্ণার স্বামী অভিজিতের। এরপরই বন্ধ হয়ে যায় সংসার চালানোর রসদ আসা। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় সুদেষ্ণাকে।
advertisement
শ্বশুরবাড়িতে রয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যা ও অবহেলা ৷ এছাড়াও নিজে শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও বারবার চেষ্টা করে কোনও চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছিলেন সুদেষ্ণা। অবশেষে উপার্জনের পথ খুঁজে পান গৃহবধূ। কষ্টে সিস্টে সংসার চালানোর মাঝে বছর তিনেক আগে হেড পোস্ট অফিসে আঁধার কার্ডের ফর্ম জমা দিতে আসে সুদেষ্ণা। সেই সময় সে লক্ষ্য করে, বহু অশিক্ষিত গরীব মানুষ হাতে আঁধার কার্ডের ফর্ম নিয়ে একে তাকে অনুরোধ করছেন ফর্ম পূরণ করে দেওয়ার জন্য। কেউ করে দিচ্ছে না, কেউ হয়তো বা ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছে সেই সমস্ত মানুষদের। এরপরই সে ভাবে যদি এই ধরনের গরীব মানুষদের কিছু সাহায্য করে দেওয়া যায়, তাহলে হয়তো অনেকেই তার পারিশ্রমিক দিতে পারে।
advertisement
advertisement
একদিন হঠাৎ করেই হেড পোস্ট অফিসের বাইরে রাস্তার পাশে চট পেতে ফর্ম ফিল-আপ শুরু করেন গৃহবধূ সুদেষ্ণা। এরপর খুব কম দিনের মধ্যেই সুদেষ্ণা হয়ে ওঠেন প্রধান ডাকঘরের \"ফর্ম ফিল-আপ দিদি\" তিন বছর ধরে প্রধান ডাকঘরের সামনে মাটিতে পলিথিন পেতে বসে সবার ফর্ম ফিল-আপ করে আসছেন তিনি ৷ তাঁর কাছে হাজিরও হন এলাকার মানুষজন। কারও স্কলারশিপ, তো কারও আধার কার্ড, কারও ব্যাংকের ফর্ম ফিল-আপ। রোদ, ঝড়, জল উপেক্ষা করেই এই কাজ করে চলেছেন মাস্টার ডিগ্রিধারী সুদেষ্ণা। আর তাতে ১০/২০ টাকা করে যা পারিশ্রমিক সবাই দেন, সেই টাকা দিয়ে কোনওক্রমে তিনি সংসার চালাচ্ছেন। এক সাক্ষাৎকারে সুদেষ্ণা বললেন, \"পড়াশোনা করে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেছি বহুবার। বহু সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি ফর্ম ফিল-আপ করে দৌড়ে গিয়েছি চাকরির জন্য। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চাকরি কিছুতেই হয়নি। স্বামী যখন ছিলেন তখন সমস্যা হয়নি ৷ কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর ওই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। তাই এই কাজই শুরু করলাম। কোনও কাজই ছোট নয়। তবে সরকারের কাছে আবেদন করব, শুধু কোটিপতি ও ধনীদের না দেখে বরং শিক্ষিত বেকারদের দিকে একটু নজর দিন।
Location :
First Published :
March 09, 2022 10:29 AM IST