পিয়া গুপ্তা, রায়গঞ্জ:অ্যান্ড্রয়েডের যুগে ফোটোগ্রাফারকে করে তুলল ফল বিক্রেতা। রায়গঞ্জের উদয়পুরের বাসিন্দা বিকাশ সরকার গত ৪২ বছর ধরে ফটোগ্রাফি পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও আজ আর যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি পেরে উঠতে পারছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে সংসার চালাতে সেই মানুষটিকে তার স্টুডিওর সামনে বসে ফল বিক্রি করতে হচ্ছে।
একটা সময় রায়গঞ্জে হাতে গোনা কয়েকটি স্টুডিও ছিল। সেই সময়ে স্টুডিওর ব্যবসায় প্রচুর উপার্জন হত। তখনও আধুনিক ক্যামেরা আসেনি। ফিল্মে ছবি তুলে তার ডার্করুমে নিয়ে গিয়ে ওয়াশ করে খদ্দেরদের হাতে তুলে দিতেন যিনি আজ সেই হাত দিয়েই তুলে দিচ্ছেন ফল বিক্রেতাদের কাছে, রায়গঞ্জের একসময়ের চিত্র সাংবাদিক বিকাশ সরকার। আজ থেকে দু’ দশক আগেও যখন আধুনিক ক্যামেরা আসেনি তখন তাঁর স্টুডিওতে প্রচুর মানুষের আনাগোনা হত ছবি তোলার জন্য। সেই ছবি পেতে ক্রেতাদের কয়েকদিন লাগলেও ক্রেতারা কিন্তু হাসিমুখে তা সহ্যও করতেন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠান পূজো এলে ভিড় জমত এই স্টুডিওর সামনে। স্ডিটুওতে তৎকালীন উন্নত ফ্লাশার , আধুনিক ডার্করুমও তৈরি করেছিলেন এই বিকাশ বাবু। দীর্ঘদিন এই ফটোগ্রাফি পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিকাশ সরকার। রায়গঞ্জ মোহনবাটী মার্কেটে তার স্টুডিওর বেশ নামডাকও ছিল। পাশাপাশি স্টুডিওর ফোটোগ্রাফি করার পাশে তিনি আবার দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে চিত্রসাংবাদিকতাও করেছেন। অটলবিহারী বাজপেয়ী , লালকৃষ্ণ আদবানী থেকে শুরু করে ইন্দিরা গান্ধি ও জ্যোতি বসুর মতো নেতা-নেত্রীদের খুব কাছ থেকে ছবিও তুলেছেন। তাঁর তোলা ছবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে।
তবে দিন পাল্টেছে, সারা বিশ্বে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হওয়ায় এখন সকলের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন পৌঁছে যাওয়ার ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছে ফটোগ্রাফিক পেশা। এখন আর বিয়ে অন্নপ্রাশনে ডাক পড়ে না বিকাশ বাবুর। পুজোর দিনগুলিতে টিন এজারদের ভিড়ও চোখে পড়ে না। কারণ হাতে রয়েছে যে স্মার্টফোন সেই ফোনেই রয়েছে উন্নত মানের ক্যামেরা। সেই ক্যামেরায় ছবি তুলে নিচ্ছেন সবাই।
উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে বেশ কিছুদিন লড়াই করার পর হার মানতে হয়েছে এ বার বিকাশ সরকারকে। এখন আর কেউই স্টুডিওমুখী হন না। সারাদিন বসে থেকে দিনে শেষে প্রায় খালি হাতেই ফিরতে হয়। এর ফলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা ডার্করুম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ক্যামেরার সঙ্গে ব্যবহৃত দামি জিনিস পড়ে থেকে বিকল হয়ে গিয়েছে। কম দামে এই সমস্ত জিনিস বিক্রি করতে চাইলেও কেউ সেগুলি কিনতে এগিয়ে আসেন না।
তাই বাধ্য হয়ে বাঁচার রাস্তা এখন খুঁজে নিয়েছেন বিকাশবাবু। স্টুডিওর সামনেই এখন তিনি একজন ফলবিক্রেতা। যে হাতে একদিন ধরা থাকত দামি ক্যামেরা, সেই হাতেই আজ উঠছে দাড়িপাল্লা। মনের দিক থেকে মেনে নিতে না পারলেও পরিবারের সদস্যের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে পারছেন, এটাই সান্ত্বনা বিকাশ সরকারের।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Fruit seller, Photographer