#শ্রীনগর: শারীরিক সমস্যার জেরে প্রথমে সন্তান হওয়ার সমস্যা। সন্তান হওয়ার পর ফের মেরুদণ্ডের সমস্যা। তার উপরে সমাজ, আত্মীয়স্বজনের দিক থেকে আসা নানা প্রতিবন্ধকতা। এই সমস্ত বিষয়কে এক তুড়িতে উড়িয়ে আজ তিনি সাফল্যের শিখরে। কাশ্মীরের প্রথম মহিলা পাওয়ার লিফ্টার হিসেবে আজ সবার চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছেন সাইমা উবেদ (Saima Ubaid)। ২৭ বছর বয়সী এই এক সন্তানের মা সম্প্রতি চতুর্থ কাশ্মীর পাওয়ার লিফ্টিং বেঞ্চপ্রেস ও ডেডলিফ্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছেন। গড়ে ফেলেছেন নতুন রেকর্ড। এই ইভেন্টে ২৫৫ কেজির ভারোত্তোলন করেছেন তিনি।
তবে এই যাত্রাপথ খুব একটা সহজ ছিল না। বার বার শারীরিক সমস্যা পিছু নিয়েছে সাইমার। কিন্তু হার মানেননি তিনি। এমনকি বাচ্চা হওয়ার পরও ওয়েট লিফ্টিংয়ের নেশা তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। সমাজ, আত্মীয়-পরিজনের দিক থেকেও প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কিন্তু সাইমার দৃঢ় চোখ যে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছে! তাই বেশি মাথা ঘামাননি তিনি। সাইমার কথায়, যে মেয়েরা নিজেদের ডানা কেটে স্বপ্নের উড়ানকে থামিয়ে দেয়, তাঁদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে চান তিনি।
স্বামী উবেদের (Ubaid) কথায়, সাইমার মধ্যে ওয়েট লিফ্টিংয়ের প্রতি একটা সহজাত আকর্ষণ ছিল। তাই তাঁকে শুরু থেকে সমর্থন করি। প্রতিযোগিতাগুলির কথা মাথায় রেখে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল। দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়েছে। আর শেষমেশ সাফল্য আসে। ২০১৮ সালে বিয়ে হয় দু'জনের। কিন্তু সাইমার কিছু শারীরিক সমস্যা ছিল। এক সময়ে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, কখনও মা হতে পারবেন না সাইমা! কিন্তু সেই লড়াইও জিতে যান তিনি। এখন বছরখানেকের একটি ফুটফুট মেয়ে রয়েছে দম্পতির।
সন্তান হওয়ার পর থেকে সাইমার মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকরা তাঁকে ওয়ার্ক-আউট থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু সাইমার জেদ তাঁকে হার মানতে দেয়নি। দিনের পর দিন ওয়ার্ক-আউট করে যেতে থাকেন। তবে সাইমার স্বামী তাঁর পাশে ছিলেন। সাইমা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীই অনুপ্রেরণা। প্রথম প্রথম অনেকটা ওজন বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু জিমে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে ওয়েট লিফ্টারের পথে এগিয়ে যাওয়ার যাত্রায় সব সময়ে পাশে ছিলেন স্বামী। এই বিষয়ে সাইমার বার্তা, লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্বামীর তাঁর স্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোটা খুব জরুরি। স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করা উচিৎ। কারণ স্ত্রীর লক্ষ্য পূরণে স্বামীর যত্ন আর সমর্থনের কোনও বিকল্প নেই।
সাইমার কথায়, ছেলে বা মেয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। পার্থক্যটা আমাদের ধ্যান-ধারণায়। আজকাল প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়েরা তাদের ক্ষমতা প্রমাণ করে দিয়েছে। তবে বাবা-মা বা স্বামীদের পাশে থাকতে হবে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে শ্রীনগরে মেয়েদের ফিটনেস ট্রেনার হিসেবে কাজ করেন সাইমা। তাঁর ইচ্ছে, তাঁর হাত ধরে আশপাশের এলাকা থেকে আরও কয়েকজন সাইমা উঠে আসুক!