Durga Puja 2021: ঔরঙ্গজেব থেকে যদু ভট্ট, এই রাজবাড়ির পরতে-পরতে ইতিহাস! পুজোয় থাকতেও পারেন...

Last Updated:

Durga Puja 2021: নানা ঘরানা স্থাপত্যশিল্প কলার ইতিহাস ছুঁয়ে দেখতে হলে আসুন পঁচেট গড় রাজবাড়িতে।

পঁচেট গড় রাজবাড়ি
পঁচেট গড় রাজবাড়ি
সৈকত শী, পটাশপুর
পঁচেট গড় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীণ রাজবাড়ীর অন্যতম। সঙ্গীত নাটক সাহিত্য প্রভৃতি শিল্পকলায় সারা বাংলা আলাদা স্থান লাভ করেছে। প্রায় সাড়ে চারশ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাস বুকে নিয়ে এখনও স্ব-মহিমায়। রাজবাড়ীর ইতিহাসে জড়িয়ে আছে মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব থেকে ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীত যদু ভট্ট বা যদুনাথ ভট্টাচার্যের কাহিনী। নানা ঘরানা স্থাপত্যশিল্প কলার ইতিহাস ছুঁয়ে দেখতে হলে আসুন পঁচেট গড় রাজবাড়িতে।
advertisement
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরে অবস্থিত পঁচেট গড় রাজবাড়ি। দাস মহাপাত্র পরিবারের এই রাজবাড়ী গড়ে ওঠার পেছনে আছে চমকপ্রদ ইতিহাস। এই রাজবাড়ির পূর্বপুরুষ কালা মুরারিমোহন দাসমহাপাত্র ছিলেন বিখ্যাত সেতার বাদক। তাঁর সেতার বাজানোর খ্যাতি পৌঁছে যায় দিল্লীর মুঘল দরবারে। মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাম্রলিপ্ত বন্দর এর প্রশাসকের কাজ দেন। তার কাজে খুশি হয়ে মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব পটাশপুর পরগনার জায়গীর দান করেন।
advertisement
advertisement
শিবের উপাসক এই দাস মহাপাত্র বংশের পূর্ব পুরুষরা। স্থাপন করে পঞ্চ শিবের মন্দির। পঞ্চ শিবের মন্দির স্থাপন এর পেছনে কাহিনী আরো চমকপ্রদ। এলাকায় অনেক গো চারণ ক্ষেত্র ছিল। দেখা যায় অনেক গরু গোচারণ থেকে ফিরে আসছে না। এক উঁচু ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে অনবরত দুগ্ধ বর্ষণ করছে। সেই ঢিবি পরিষ্কার করতে খোঁজ পাওয়া যায় প্রাচীন শিব মন্দিরের। দাস মহাপাত্র পরিবারের সেখানে তৈরি করে পঞ্চ শিবমন্দির। পঞ্চ শিবমন্দির লোকমুখে পরিবর্তিত হতে হতে আজকে এই পঁচেট গড়। পরে এই রাজপরিবার বৈষ্ণব ধর্মের অনুরাগী হয়। স্থাপিত হয় বর্তমান কুল দেবতা কিশোর রাই জিউর মন্দির।
advertisement
অন্দরের ছবি অন্দরের ছবি
স্থাপত্য শিল্পকলার দিক থেকে বিভিন্ন মন্দির ও বিভিন্ন স্থাপত্য বিভিন্ন স্থাপত্য ঘরানার নিদর্শন পাওয়া যায় পঁচেট গড়ে। বাংলার পঞ্চরত্ন স্থাপত্যকলা থেকে উড়িষ্যার রথ দেউল স্থাপত্য কলা এবং দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যকলার নিদর্শন পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থাপত্য পাশ্চাত্য রীতির নিদর্শন পাওয়া যায়।
advertisement
পঁচেট গড়ের জমিদাররা ছিলেন সঙ্গীত, শিল্প ও ধর্মের সত্যিকারের সহযোগী। রাজবাড়ির সেন্ট্রাল হলকে "দ্য জলসাঘর" (যেখানে জলসা পরিবেশন করা হত) বলা হয়। এখানে এক সময় ভারত বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। পঁচেট গড় এক সময় ভারতীয় ভক্তি সঙ্গীত ও কীর্ত্তনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল। চৌধুরী উপেন্দ্র নন্দন দাস মহাপাত্র, চৌধুরী যোগেন্দ্র নন্দন দাস মহাপাত্র এবং চৌধুরী জিতেন্দ্র নন্দন দাস মহাপাত্রের মতো পরিবারের সদস্যরা ভারতীয় সংগীতের বিভিন্ন ঘরনার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
advertisement
সেকালে দেশের হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম আসন ছিল পঁচেট গড়। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিভিন্ন রূপের বিকাশ ও প্রসারে এর অবদান এতটাই মহান, যে আমরা দেখতে পাই, এর অতীত ইতিহাসের মধ্যে। এখনও, হিন্দুস্তানি ক্লাসিক্যাল সংগীতের ক্ষেত্রে পঁচেটগড়ের আসল প্রভাব এবং উদ্দীপনা খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সক্রিয় গবেষণা চলছে।
advertisement
যাদু ভট্ট (যদুনাথ ভট্টাচার্য) বাংলার অন্যতম "বিষ্ণুপুর ঘরানা" থেকে বেরিয়ে আসা সবচেয়ে বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। যদু ভট্ট ছিলেন ধ্রুপদের গুরু এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের "ধ্রুপদ খন্দরবানি" রূপ। তার প্রথম তালিম ছিল তার পিতা মধুসূদন ভট্টাচার্যের কাছ থেকে এবং পরে গঙ্গানারায়ণ ছোটোপাধ্যায় থেকে যিনি বিষ্ণুপুরের রাজার রাজ সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। "বিষ্ণুপুর ঘরানা" এর প্রধান পতাকা বহনকারী, যা পরবর্তীতে "মাইহার ঘরানা" এবং "গয়া ঘরানা" হিসাবে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ধ্রুপদ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে বাংলার অবদান। যদু ভট্ট পঞ্চেতগড়ের রাজবাড়ীর প্রধান সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন কিছু সময়ের জন্য। তিনি পঞ্চেতগড় রাজপরিবারের কিছু সদস্যকে সঙ্গীতও শিখিয়েছিলেন। যদু ভট্ট বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বঙ্কীচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেও গান শিখিয়েছিলেন।
বর্তমানে হেরিটেজ তকমা পাওয়া রাজবাড়ী ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। কলকাতা থেকে মাত্র ১৯০ কিলোমিটার দূরে। সহজেই সড়কপথে পৌঁছানো যায় পঁচেট গড় রাজবাড়ীতে। পঁচেট গড়ে অবস্থিত অনেক মন্দিরের পাশাপাশি রয়েছে এগরার হাটখোলা মন্দির। ঘুরে আসতে পারেন কাছেপিঠেই মাদুর শিল্পের অন্যতম জায়গা পশ্চিম মেদিনীপুর সবং। দীঘা থেকে পঁচেট গড় এর অবস্থান মাত্র ৪৭ কিলোমিটার। প্রাচীন জনপদের ইতিহাসের হাতছানি আপনাকে নিয়ে যাবে ৪০০ বছর পিছনে। বর্তমানে রাজবাড়ীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হোম স্টে। কড়ি বর্গার
ছাদে প্রাচীন রাজবাড়ীর অন্দরে রাত্রি কাটানোর রয়েছে সুবন্দোবস্ত। মাথাপিছু খরচ দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। এই রাজবাড়ির সদস্য ফাল্গুনী নন্দন দাস মহাপাত্র এই হোমস্টের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ফোনে অগ্রিম বুকিং করে ঘুরে আসুন প্রাচীন জনপদ এই পঁচেট গড়ে।
যোগাযোগ: 91-7044943794
ইমেইল: enquiry@panchetgarh.com
www.panchetgarh.com
view comments
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
Durga Puja 2021: ঔরঙ্গজেব থেকে যদু ভট্ট, এই রাজবাড়ির পরতে-পরতে ইতিহাস! পুজোয় থাকতেও পারেন...
Next Article
advertisement
Indian Railways: বৃহন্নলা সেজে ট্রেনে উঠে তোলাবাজি, হেনস্থা! রেল সফরে এমন বিপদে কী করবেন যাত্রীরা? জেনে নিন
বৃহন্নলা সেজে ট্রেনে উঠে তোলাবাজি, হেনস্থা! রেল সফরে এমন বিপদে কী করবেন যাত্রীরা? জেনে নিন
  • বৃহন্নলা সেজে ট্রেনে উঠে যাত্রীদের হয়রানি৷

  • যাত্রী হয়রানি উঠতে কড়া পদক্ষেপ রেলের৷

  • রেল মদদ পোর্টাল, ১৩৯-এ ফোন করলে দ্রুত ব্যবস্থা৷

VIEW MORE
advertisement
advertisement