#কলকাতা: প্রায় রোজ লাফিয়ে বাড়ছে পেট্রোলের দাম। বিদ্যুতের মাশুলও উর্ধ্বমুখী। তাই বাইকপ্রেমীদের জন্য শুভময়ের আবিষ্কার বিকল্পের বিকল্প। অর্থাৎ না লাগবে পেট্রোল, না লাগবে বিদ্যুৎ। সৌরশক্তিতে চলা 'ই-বাইক' তৈরি করেছেন নদিয়ার বাসিন্দা শুভময় বিশ্বাস। যা মাত্র ছ'ঘন্টার চার্জে চলবে ২৫০ কিলোমিটার। একমাস সময় লেগেছে অত্যাধুনিক এই বাইক তৈরি করতে। খরচ পড়েছে ৭০ হাজার টাকার কাছাকাছি।
সৌরশক্তিতে চললেও আধুনিক মোটরবাইকের সবরকম প্রযুক্তি রয়েছে শুভময়ের বানানো ই-বাইকে। দুর্ঘটনা আটকাতে রয়েছে চাকায় রয়েছে 'অ্যান্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম বা এবিএস', হেডলাইট সেন্সর-সহ বাকি সবরকম প্রযুক্তি রয়েছে বাইকে। সামনে কোনও বাধা এলে দাঁড়িয়ে যাবে বাইক, দাবি শুভময়ের। তবে নিরাপত্তার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই বাইকের হেলমেটে। সেটি হল, মাথায় হেলমেট না পরলে ঘুরবে না চাকা। হেলমেটের সঙ্গে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে সংযোগ থাকবে বাইকের। চালক হেলমেট পরেছে কিনা সেটা মেইন সেন্সরে জানান দেবে ওয়াইফাই। এমনকী, চালক মদ্যপান করে চালানোর চেষ্টা করলেও হেলমেটে থাকা 'অ্যালকোহল সেন্সর' টের পেয়ে যাবে। ফলে চলবে না বাইক। শুভময়ের কথায়, "মুখ্যমন্ত্রীর সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ প্রকল্পকে সামনে রেখে এই বাইক বানানোর চেষ্টা করেছি। নিরাপত্তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।"
advertisement
নদিয়ার হাঁসখালির বাসিন্দা শুভময় উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে মাস্টার্স পড়ছেন । কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ার। গবেষণা করার। কিন্তু মায়ের ক্যানসারের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাই পছন্দের বিষয় নিয়ে এগোতে না পারলেও নতুন কিছু আবিষ্কার করার ইচ্ছা থামেনি শুভময়ের। তাই নতুন কিছু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে এটাই তাঁর প্রথম বড় আবিষ্কার। তাতেই সফল। এখন এই ই-বাইক তাঁর বাহন। এতে চড়েই বাড়ি থেকে কলেজ নিয়মিত যাতায়াত করেন। শুভময় বলেন, "আমি ইতিমধ্যে পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছি। সরকার বা কোনও বেসরকারি সংস্থা যদি এই পেটেন্ট কিনে নেয় তাহলে সেই টাকায় মায়ের চিকিৎসা করতে সুবিধা হবে। আমার পরের লক্ষ্যেও এগোতে পারব।''যাঁরা লং ড্রাইভে যেতে পছন্দ করেন, তাঁদের কথাও ভেবেছেন শুভময়। তাই এই বাইকে রাখা হয়েছে 'বুস্ট চার্জে'র ব্যবস্থাও। সেই ব্যবস্থায় মাত্র দু'ঘন্টা চার্জ দিকে ২০০ কিলোমিটারের বেশি পথ যাওয়া যাবে। শুভময় জানান, জাপান থেকে ব্যাটারি আনা হয়েছে যা দীর্ঘসময় ব্যাকআপ দিতে পারবে। সৌরশক্তি চালিত এই বাইক ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে ছুটতে পারে। যেহেতু 'সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ' প্রকল্পকে সামনে রেখে বানানো হয়েছে এই বাইকটি তাই ৬০ কিমি গতিতে বাধা রয়েছে স্পিড লিমিট।
advertisement
advertisement
চলতি সপ্তাহে কলকাতায় বিজ্ঞান মঞ্চ আয়োজিত মেলায় তাঁর এই আবিষ্কার সামনে নিয়ে আসেন শুভময়। মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল এই বাইক। তবে পেটেন্ট পেয়ে গেলে এখানেই থামতে চান না মাস্টার্সের এই ছাত্র। প্রাকৃতিক বিকল্প শক্তি দিয়ে আরও বড় কিছু করা তাঁর স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চান পরিবেশ বাঁচিয়েই।