চালে বোলে ষোলাআনা বাঙালি, তবু বড়দিন এলে আজও শিকড়ের কাছে ফেরেন মীরপুরের পর্তুগিজরা
- Published by:Simli Raha
- news18 bangla
Last Updated:
গেঁওখালির সেই মীরপুর পর্তুগীজ গ্রামে শুরু হয়ে গেছে বড়দিনের কাউন্টডাউন! বড়দিন আসার আগেই সেজে উঠেছে গেঁওখালির মীরপুর চার্চ সহ গোটা মীরপুর গ্রামই।
SUJIT BHOWMIK
#গেঁওখালি: রাত পোহালেই খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ উৎসব বড়দিন। আর এই বড়দিনকে কেন্দ্র করে হুগলির ব্যান্ডেল, কলকাতার সেন্ট পলস্ চার্চের পাশাপাশি সেজে উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গেঁওখালি মীরপুর পর্তুগিজ পাড়ার দুই ঐতিহাসিক চার্চ। ডিসেম্বর মাস শুরু হওয়ার পর থেকেই বড়দিনের কাউন্টডাউন শুরু করে দিয়েছেন এখানকার পর্তুগিজ বাসিন্দারা ৷ নানা কাজের মধ্যেও চলছে জোর প্রস্তুতি। মীরপুরে মূলত দু’টি ঐতিহাসিক গির্জা রয়েছে। যার মধ্যে একটি ক্যাথলিক এবং অপরটি প্রটেস্টান্ট। গেঁওখালি থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত এই মীরপুর পর্তুগিজ পাড়া। সুদূর বিস্তৃত বাঙালি পরগনার মাঝে মীরপুরের এই পর্তুগিজরা বর্তমানে বাঙালি সংস্কৃতিতে মিলেমিশে একাকার। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতির মেলবন্ধন মীরপুরের পর্তুগিজদের মধ্যে থাকলেও রক্তের মধ্যে রয়েছে তাঁদের পূর্বপুরুষদের ছোঁয়া। আর সেই নিয়েই আজও গেঁওখালি মীরপুরে পেডেরা, লঘু, ডিক্রস, রোজারিও, তেসরা, প্রভৃতিদের বসবাস। এই বড়দিন এলে তাঁদের মধ্যে জেগে ওঠে নতুন উন্মাদনা। চার্চে চার্চে শুরু হয়ে যায় প্রভু যিশুর নামে প্রার্থনা।
advertisement
advertisement
ইতিমধ্যে মীরপুরের এই দুই গির্জায় বড়দিনকে কেন্দ্র করে চলছে জোর প্রস্তুতি। গির্জার দেওয়ালে পড়েছে নতুন রঙের প্রলেপ, রাস্তাজুড়ে রাঙিয়ে তুলছে রংবাহারি আলোর ঝলকানি। আর এইসব নিয়েই গেঁওখালির মীরপুর পর্তুগীজ পাড়া এখন উৎসবের মেজাজে। তবে এই বাঙালি পরগনার মধ্যে কিভাবে পর্তুগিজদের আগমন?
advertisement
পর্তুগীজ অধিবাসী রতন তেসরা জানান, "১৭৪২ সালে তৎকালীন বাংলা যখন বর্গী হামলায় অতিষ্ট ঠিক সেই সময় বাংলার বিভিন্ন নদীপথে ছড়িয়ে পড়ে গোয়ার পর্তুগিজরা। এমন সময় মহিষাদলের তৎকালীন রাজা আনন্দমোহন উপাধ্যায় মনে করেন বাংলাকে বর্গী হামলা থেকে বাঁচাতে এই সকল পর্তুগিজরা প্রকৃত উপযুক্ত। আর তাই মহিষাদলের রাজা গেঁওখালি মীরপুরে বেশ কিছুটা নিঃশুল্ক জমিতে এই সকল পর্তুগীজদের আশ্রয় দেন।" আর সেই থেকেই আজও গেঁওখালি মিরপুরে গোয়ার পর্তুগিজদের বসবাস। এখানে মোট ১২টি উপজাতির পর্তুগিজদের বসবাস। তাঁদের মধ্যে কারও পদবী তেসরা আবার কারও বা ডিক্রস। নামের মধ্যে সকলের পর্তুগিজদের ছোঁয়া থাকলেও বর্তমানে তাঁরা মিশে গিয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে। তবে ধর্মীয় রীতি মেনে বড়দিন এলে প্রভু যিশুর উপাসনাতেই মেতে ওঠেন এই পর্তুগিজরা। প্রবীণ পর্তুগীজ সদস্য পল তেসরা বলেন, "বর্তমানে আমরা যাঁরা রয়েছি, আমাদের গোয়া থেকে আগমন না ঘটলেও আমাদের পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন গোয়া থেকে। তবে এখন আমরা অধিকাংশ ভাবেই বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক ভাবে মিশে গিয়েছি।"
advertisement
এখানকার সকলে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেলেও বড়দিন মানেই তাঁরা এখনও মেতে ওঠেন প্রভু যিশুর উপাসনায়। বড়দিনের আগের দিন রাতে ঠিক বারোটা বাজলেই খ্রিস্টীয় অধিবাসীরা চার্চে গিয়ে শুরু করে দেন প্রভু যিশুর উপাসনা। শুরু হয় বাইবেল পাঠ। মধ্যরাতের এই অনুষ্ঠানকে খ্রিস্টীয় ভাষায় বলা হয় 'খ্রীষ্টের জাগরণ'। এরপর ক্যাসিও, ড্রাম সহযোগে শুরু হয় 'মিশা গান'। যাকে প্রকৃতপক্ষে ক্যারল সংও বলা হয়। তবেই ক্যারল সং এর মধ্যেও মিশেছে বাঙালি সংস্কৃতি। এই গানের ব্যবহার করা হয় বাঙালির অন্যতম বাদ্যযন্ত্র খোল ও করতাল। এরপর ভোরবেলা বের হয় নগর কীর্তন। যেখানে পা মেলান আট থেকে আশির সব বয়সের পর্তুগিজরা। তরুণ পর্তুগিজ জোসেফ উইলিয়াম রথার বলেন, "বড়দিন মানে আমাদের কাছে শ্রেষ্ঠ উৎসব। আমরা ওই দিনে আশেপাশের হিন্দু-মুসলিম-সহ সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষজনদেরকে নিয়ে উৎসবে মেতে উঠি। সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয় কেক।" সবমিলিয়ে বলা চলে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যাস্ত গেঁওখালির মীরপুরের পর্তুগিজরা।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
December 24, 2019 7:01 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
চালে বোলে ষোলাআনা বাঙালি, তবু বড়দিন এলে আজও শিকড়ের কাছে ফেরেন মীরপুরের পর্তুগিজরা