হোম /খবর /দক্ষিণবঙ্গ /
রাজ আমলে কালনার নবকৈলাশ মন্দিরে পুজো করতেন ১২ ব্রাহ্মণ

MahaShivratri: আসেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা, রাজ আমলে কালনার নবকৈলাশ মন্দিরে পুজো করতেন ১২ ব্রাহ্মণ 

সারা ভারতে ১০৮ শিবমন্দির মাত্র দু'টি জায়গায় আছে। প্রথমটি বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে নবাবহাটে এবং দ্বিতীয়টি কালনাতে। দু'টিই নির্মাণ করেছে বর্ধমান রাজপরিবার

  • Share this:

কালনা: কালনার পুরাকীর্তিগুলির মধ্যে অন্যতম নবকৈলাস মন্দির। এই মন্দির একশো আট শিবমন্দির নামেও পরিচিত। রাজবাড়ি চত্বরের কাছেই অবস্থিত এই ১০৮ শিবমন্দির। এই মন্দিরের অপরূপ শৈলী দেখতে দেশ- বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসেন সারা বছর। এটি দু’টি বৃত্তকে কেন্দ্র করে নির্মিত। বাইরের বৃত্তে ৭৪টি মন্দির। সেগুলি পর্যায়ক্রমে একটি সাদা এবং একটি কালো শিবলিঙ্গে সজ্জিত। ভিতরের বৃত্তের ৩৪টি মন্দিরের সব ক’টিতেই সাদা শিবলিঙ্গ আছে। মোট ৭১টি সাদা ও ৩৭টি কালো শিবলিঙ্গ রয়েছে এখানে। দ্বিতীয় বৃত্তের শিবলিঙ্গগুলি প্রথম বৃত্তের থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট। বৃত্তের মধ্যের মন্দিরগুলি আটচালা। উচ্চতা প্রায় কুড়ি ফুট এবং প্রস্থে সাড়ে ন’ফুট। প্রথম বৃত্তের ভিতরদিকের পরিধি প্রায় সাতশো ফুট এবং দ্বিতীয় বৃত্তের ভিতর দিকের পরিধি তিনশো ফুটের একটু বেশি।

বর্ধমানের রাজা তেজচন্দ্র ১৮০৯ সালে এই মন্দির নির্মাণ করান। বিষ্ণুপুরে রাজকীয় সম্পত্তি স্থানান্তর উদ‌যাপন উপলক্ষে এই মন্দির তৈরি করা হয়। এই মন্দিরের গঠনশৈলীতে বাংলার আটচালা শিল্পের ছাপ স্পষ্ট।

সারা ভারতে ১০৮ শিবমন্দির মাত্র দু'টি জায়গায় আছে। প্রথমটি বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে নবাবহাটে এবং দ্বিতীয়টি কালনাতে। দু'টিই নির্মাণ করেছে বর্ধমান রাজপরিবার। নবাবহাটের ১০৮টি শিবমন্দির আয়তাকারে এবং কালনার মন্দিরগুলি বৃত্তাকারে সাজানো। নবাবহাট-সহ দেশের প্রায় সর্বত্রই বেশিরভাগ শিবলিঙ্গ কালো রঙের। একমাত্র কালনার ক্ষেত্রেই সাদা ও কালো শিবলিঙ্গের সমাহার দেখতে পাওয়া যায়।

এক-একটি মন্দিরের উচ্চতা প্রায় কুড়ি ফুট এবং প্রস্থে সাড়ে ন’ফুট। প্রথম বৃত্তের ভিতর দিকের পরিধি প্রায় সাতশো ফুট এবং দ্বিতীয় বৃত্তের ভিতর দিকের পরিধি তিনশো ফুটের একটু বেশি। ভিতরের বৃত্তের মাঝখানে রয়েছে একটি কূপ। কথিত আছে, এখানে গর্ত করে একটি বড় কম্পাস  বসিয়ে জ্যামিতিকভাবে বৃত্ত মেপে মন্দির নির্মাণ করার জন্য এই কূপ খনন করা হয়েছিল। কারও কারও মতে, এই বৃহৎ কূপটি শূন্য তথা নিরাকার ব্রহ্মস্বরূপ পরম শিবের প্রতীক।

সাদা এবং কালো শিবলিঙ্গ স্থাপনের কারণ রূপে গবেষকেরা বলেন, সাদা রং ত্যাগের প্রতীক এবং কালো ভোগের প্রতীক। তাই দুই বিপরীত বোধ থেকে চৈতন্য বা জ্ঞানের উন্মেষ ঘটানোর জন্য সাদা এবং কালো শিবলিঙ্গের প্রতিষ্ঠা।  অনেকেরই ধারণা, ১০৯টি শিবমন্দির আছে এখানে। এই ১০৯ নম্বর মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১০৮ শিবমন্দিরের বৃত্তের বাইরে পশ্চিম দিকে প্রধান রাস্তার পাশে জলেশ্বর নামক শিবমন্দিরটিকে। এটি পঞ্চরত্ন মন্দির। ছাদের চার কোণে চারটি এবং মধ্যস্থলে একটি বড় চূড়া। মূল মন্দিরের পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে জলেশ্বর মন্দিরের ধাঁচে আরও একটি পঞ্চরত্ন শিবমন্দির আছে যার নাম রত্নেশ্বর। রত্নেশ্বরকে ধরলে ১১০টি শিবমন্দির রয়েছে। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে এক সঙ্গে চারটির বেশি শিবলিঙ্গ দেখা যায় না। এই মন্দিরের প্রতিটি বৃত্তের দুটো  করে দরজা। প্রথম বৃত্তের উত্তর দিকে একটি, একটি দক্ষিণে। ভিতরের বৃত্তে একটি পূর্বে, অন্যটি পশ্চিমে। এক সময়ে বারো জন ব্রাহ্মণ পূজার দায়িত্বে ছিলেন। প্রতি ব্রাহ্মণ ন'টি করে শিব পূজা করতেন।

Published by:Rukmini Mazumder
First published:

Tags: Mahashivratri 2023